Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি কোন পথে

Icon

স্বর্ণা চৌধুরী

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ০৯:১৯

ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি কোন পথে

জেলেনস্কিকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চান ট্রাম্প-পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত বন্ধ করতে চান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি ক্ষমতা গ্রহণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজা ও ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার দাবি করেছিলেন। ২৪ ঘণ্টায় সম্ভব না হলেও কয়েক দিনের মধ্যেই একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে সক্ষম হয় গাজায়। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ আর গাজা এক কথা নয়। দুই ক্ষেত্রে ট্রাম্পের হিসাব ভিন্ন। আর তাই যুদ্ধবিরতির হিসাবটাও একই রকম নয়। ট্রাম্প ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান নেবেন না। ফিলিস্তিনের গাজা ও পশ্চিম তীরে চালানো ইসরায়েলি গণহত্যাকে অন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মতো তিনিও ন্যায্যতা দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে গাজা উপত্যকা নিজেই দখলে নিতে চান ট্রাম্প। সেখানে বাণিজ্যিক নগরী গড়ে তুলতে চান। ইউক্রেনে ট্রাম্প নিজের দখল চান না; কিন্তু সেখানকার খনিজ উপাদানে হিস্যা চান। এর বিনিময়ে তিনি ইউক্রেনকে রাশিয়া থেকে বাঁচাবেন বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু গোটা ইউরোপ ইউক্রেনকে সমর্থন দিয়েছে। আর এ কারণে ট্রাম্প চান ইউরোপকেও শায়েস্তা করতে।

গত ১৩ মার্চ রাতে মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন যুক্তরাষ্ট্রের দূত স্টিভ উইটকফ। এ আলোচনাকে চমৎকার এবং ফলপ্রসূ বলে আখ্যায়িত করেছেন ট্রাম্প। নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে বলেছেন, এই আলোচনা ভয়াবহ ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান ঘটানোর একটি ভালো সুযোগ এনে দিয়েছে। ক্রেমলিন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে, তারাও সেটা চায়। তবে যুদ্ধকে প্রলম্বিত করার জন্য আলোচনা টেনে আনার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। 

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে সতর্ক করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার। তিনি বলেছেন, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে গেম খেলতে দেওয়া হবে না পুতিনকে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নিতে রাজি হয় ইউক্রেন। কিন্তু রাশিয়া তাতে সম্মতি দেয়নি। পুতিন বলেছিলেন, যুদ্ধবিরতির ধারণা ‘সঠিক এবং আমরা এটি সমর্থন করি। তবে এর ছোটখাটো কিছু জটিলতা আছে।’ তিনি শান্তির জন্য বেশ কয়েকটি কঠিন শর্তারোপ করেছেন। 

পুতিন কুরস্ক সীমান্ত অঞ্চল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ছয় মাস আগে ইউক্রেনের সেনারা রাশিয়ার ওই অঞ্চল দখল করে নিয়েছিল। রুশ বাহিনী পরে কুরস্ক অঞ্চলটি ইউক্রেনের দখলমুক্ত করে। পুতিনের অভিযোগ, ইউক্রেনের বাহিনী কুরস্কের ‘বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ’ করেছে। পুতিনের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে কিয়েভ। যুদ্ধবিরতির সুযোগে ইউক্রেন আবার সেনা জড়ো করা, প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং সেনাদের জন্য রসদ সংগ্রহ করার কাজ করবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পুতিন। যদিও তার বাহিনীর ক্ষেত্রে একই সুযোগ গ্রহণের বিষয় নিয়ে তিনি কোনো কথা বলেননি। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলজুড়ে যুদ্ধবিরতি যথাযথভাবে পালন হচ্ছে কি না, তার নজরদারি ও পাহারা কীভাবে দেওয়া হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পুতিন।

জেলেনস্কি তার এই প্রতিক্রিয়াকে ‘ছলনা’ বলে অভিহিত করেছেন। ইউক্রেনের এই নেতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে একাধিক পোস্টে পুতিনের সমালোচনা অব্যাহত রেখে লিখেছেন, ‘পুতিন এই যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন না। কারণ এতে তিনি সব হারাবেন। এ জন্যই তিনি এখন যুদ্ধবিরতির আগে থেকেই অত্যন্ত কঠিন এবং অগ্রহণযোগ্য শর্ত দিয়ে কূটনীতিকে ধ্বংস করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন।’

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এর মধ্য দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে পশ্চিমাদের সঙ্গে মস্কোর সবচেয়ে বৃহৎ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি থেকে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বেশির ভাগ যোগাযোগ খুবই গোপনে হচ্ছে, যেখানে ইউক্রেনের ওপর প্রকাশ্যেই কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। জেলেনস্কিকে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বলেছেন ট্রাম্প ও পুতিন। এ কারণেই জেলেনস্কি বারবার পুতিনের সময়ক্ষেপণের কৌশলের কথা উল্লেখ করে পশ্চিমাদের রাশিয়ার ওপর চাপ দিতে বলছেন।

দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসার পর থেকে ট্রাম্প নানা আন্তর্জাতিক বিষয়ে নিজের ভিন্ন কূট-কৌশল ব্যবহার করে যাচ্ছেন। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও তিনি চাপ প্রয়োগ করছেন। ট্রাম্প দ্রুত যুদ্ধের অবসান চান। তবে পুতিন চাইছেন টেকসই সমাধান ও মৌলিক সিদ্ধান্ত। এ প্রসঙ্গে গার্ডিয়ানের এক বিশ্লেষণে বলা হয়, শেষ পর্যন্ত একটি দীর্ঘমেয়াদি শান্তি তখনই সম্ভব হবে, যদি রাশিয়া ও ইউক্রেন দুই পক্ষ হামলা চালিয়ে বা উসকানি দিয়ে যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘনের চেষ্টা না করে। কোরিয়া ও সাইপ্রাসের মতো কিছু যুদ্ধবিরতি টিকে গেছে; কারণ এসব ক্ষেত্রে কোনো পক্ষই যুদ্ধ নতুন করে শুরু করতে চায়নি। তবে ইউক্রেনের প্রতি রাশিয়ার শত্রুতার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। আর অনেকে মনে করেন, প্রতিবেশী দেশে পুতিনের আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্য অপরিবর্তিত থাকবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫