ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং বা ‘র’ নিষিদ্ধের সুপারিশ করেছে মার্কিন ফেডারেল সরকাররের গঠিত কমিশন। সংখ্যালঘু নির্যাতন ও শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গুপ্তহত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে এশিয়ার দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাকে নিষিদ্ধের সুপারিশ করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সংস্থা কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ) ২০২৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করা হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

মার্কিন ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশন একটি দ্বিদলীয় ফেডারেল উপদেষ্টা সংস্থা, যা বিদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণ করে এবং নীতিগত সুপারিশ প্রদান করে।

মঙ্গলবার বার্ষিক প্রতিবেদনে মার্কিন এই কমিশন ‘র’-এর প্রতি অভিযোগ এনে জানায়, গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর বিরুদ্ধে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরে ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে পাল্টা শক্তি হিসেবে দেখছে। এ কারণে ভারতের মানবাধিকার ইস্যুগুলো উপেক্ষা করেছে। তাই মার্কিন সরকার ‘র’-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে কিনা তা অনিশ্চিত, কারণ কমিশনের সুপারিশ বাধ্যতামূলক নয়।

২০২৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ ভারতের বিরুদ্ধে উঠেছে, যা ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করেছে। ওয়াশিংটন সম্প্রতি সাবেক ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিকাশ যাদবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে একটি ব্যর্থ হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছে। তবে ভারত বরাবরই এ ধরনের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে মার্কিন কমিশন বলেছে, “২০২৪ সালে ভারতের ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটেছে, কারণ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হামলা ও বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে।”

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, “হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ‘মুসলমান এবং অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য বক্তব্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করেছে’।”

২০২৩ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় মোদি মুসলমানদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ এবং ‘বেশি সন্তান জন্ম দেয়’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

কমিশন মার্কিন সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে যে ভারতকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসাবে ঘোষণা করা হোক এবং বিকাশ যাদব ও ‘র’-এর বিরুদ্ধে লক্ষ্যভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক।