বাংলাদেশের কেউই ইসলামি প্রজাতন্ত্র চায় না: দের স্পিগেলকে প্রধান উপদেষ্টা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৫, ১০:৫৯

প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন জার্মান সংবাদ পত্রিকা দের স্পিগেলের সংবাদদাতা লরা হফলিঙ্গার
বাংলাদেশের জনগণ নিজেদের দেশকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র হিসেবে দেখতে চায় না। নিজ বাসভবন যমুনায় জার্মান সংবাদ পত্রিকা দের স্পিগেলের সংবাদদাতা লরা হফলিঙ্গারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সে সাক্ষাৎকারে হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার প্রসঙ্গ টেনে দের স্পেগেলের পক্ষ থেকে প্রফেসর ইউনূসকে প্রশ্ন করা হয়, “বাংলাদেশিদের ৯০ শতাংশ মুসলিম এবং দেশটি অতীতে চরমপন্থি হামলাও দেখেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৬ সালে একটি ক্যাফেতে হামলা চালিয়ে পাঁচজন সন্ত্রাসী মূলত অমুসলিম ও বিদেশীদের হত্যা করেছিল। কেউ কেউ ভয় পাচ্ছেন, বর্তমান রাজনৈতিক শূন্যতার কারণে ইসলামপন্থি শক্তিগুলো প্রভাব বিস্তার করতে পারে। আপনি কি এই উদ্বেগের সঙ্গে একমত?”
জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমি বরঞ্চ আমাদের তরূণরা কতটা উদারমনা, তা দেখে স্বস্তিবোধ করি। তারা আইনের শাসন ও ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে।”
বাংলাদেশেও মৌলবাদের ঝুঁকি ছিল- জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের দেশ, যাদের থেকে ৭১ সালে আমরা আলাদা হয়েছিলাম সেই পাকিস্তানের মতো রক্ষণশীল হয়ে উঠতে পারত।”
কিন্তু পরিবর্তনশীল প্রগতিশীল সমাজ যে তা হতে দেয়নি- সেই দিকে আলোকপাত করে তিনি বলেন, “(পাকিস্তানের মতো হওয়ার) বদলে, (বাংলাদেশে) ধর্ম নিরপেক্ষ সমাজ গড়ে উঠল। আগের সরকার দাবি করেছিল যে তারাই একমাত্র ইসলামী মৌলবাদকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। কিন্তু এটা সত্য নয়।”
বাংলাদেশে মৌলবাদ প্রতিষ্ঠা না পাওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এখানে কেউই ইসলামী প্রজাতন্ত্র চায় না।”
তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর দেশে নারীদের ফুটবল ম্যাচ বাতিল হয়েছে, সুফি ঘরানার মাজার ভাঙচুর হয়েছে এবং হিন্দু সংখ্যালঘুরাও আতঙ্কিত হয়েছেন- লরা হফলিঙ্গারের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে জানতে চাওয়া হয়, “এতে কী আপনি চিন্তিত নন?”
জবাবে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেন, “হ্যাঁ, কিন্তু দুই বছর আগেও একই রকম ঘটনা ঘটেছিল। তখন সেগুলো নিয়ে প্রতিবেদন করা হতো না। আজ, আমাদের একটি স্বাধীন সংবাদপত্র আছে। সে কারণেই আমরা এগুলো নিয়ে কথা বলছি।”
জার্মান সংবাদমাধ্যমটির পক্ষ থেকে ধানমন্ডি ৩২-এ শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুরের বিষয়েও প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। শেখ হাসিনাই এই ঘটনার উস্কানি দিয়েছেন বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা পলাতক অবস্থায় ভাষণ দিয়েছেন। অনেকেই বুঝতে পারছিলেন না- তারা নিজেদের ক্ষোভ কীভাবে প্রকাশ করবেন।”
এ সময় সমসাময়িক অন্যান্য অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতার বিষয়েও প্রধান উপদেষ্টার মন্তব্য জানতে চান লরা হফলিঙ্গার। প্রধান উপদেষ্টা এসব কর্মকান্ডের নিন্দা জানান। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার পক্ষে- সেটাও দের স্পিগেলকে স্পষ্ট করে জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমি জনগণকে বলছি, আইনের উপর আস্থা রাখুন। একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আমাদের পুর্ণমিলন দরকার।”