Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

গাজায় শান্তি ফিরবে কবে

Icon

অরুন্ধতী সুরঞ্জনা

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৫, ১১:০৫

গাজায় শান্তি ফিরবে কবে

ইসরায়েলি দখলদারির শিকার অবরুদ্ধ গাজার ফিলিস্তিনিরা। ছবি: সংগৃহীত

যত গর্জে, তার চেয়েও বেশি বর্ষে। এ কথা খাটে বেপরোয়া ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর ক্ষেত্রে। হুঙ্কার দিয়েও যেমন তারা হামলা চালায়; ঘোষণা ছাড়াই বোমা ছোড়ে আরো বেশি। বৃষ্টির ফোঁটা যেমন পড়ে, তেমনি। আর একটা অবরুদ্ধ উপত্যকায় সেই বোমার আঘাতে বিনা দোষে জীবন দিতে বাধ্য হয় ফিলিস্তিনিরা। এই অমানবিক চিত্র দীর্ঘ প্রায় ছয় দশকের।

দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ইসরায়েলি দখলদারির শিকার অবরুদ্ধ গাজার ফিলিস্তিনিরা। ক্ষোভের বশে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালিয়েছিল স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। তাদের হামলায় এক হাজার ১৩৯ জন নিহত হয়। পাশাপাশি তারা ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গিয়েছিল। বদলা নিতে ওই দিন থেকেই গাজায় সর্বাত্মক সামরিক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। যুদ্ধবাদী প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নির্দেশে নির্বিচারে নারী-শিশুসহ নিরীহ ও নিরস্ত্র সাধারণ জনতার ওপরও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের বর্বর হামলার শিকার হয়েছে শিক্ষালয়, উপাসনালয়, চিকিৎসাকেন্দ্র ও আশ্রয়শিবিরও।

হামাসের নেতৃত্বাধীন গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, এই যুদ্ধে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা এরই মধ্যে ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। যুদ্ধ শুরুর আগে গাজায় জনসংখ্যা ছিল ২৩ লাখ। সেই হিসাবে নিহতের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ২.১ শতাংশ। তুলনা করলে বলা যায়, এই যুদ্ধে প্রতি ৪৬ জনে একজন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে ইসরায়েলি হামলায়। ৫০ হাজার, এ শুধুই সংখ্যা নয়। তাজা তাজা প্রাণ। বলি হতে বাধ্য হয়েছে গত ১৮ মাসে। ইসরায়েল এদের হত্যা করেছে। গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের শান্তি ও স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা যেন এখনো মরীচিকা। তাদের সমূলে উৎপাটন করতে মরিয়া ইসরায়েল ও এর মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র। 

মার্কিন সাংবাদিক ও লেখক বব উডওয়ার্ডের বই ‘ওয়ার’-এ উল্লেখ করা হয়েছে, ‘কিছু আরব দেশ সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনকে জানিয়েছিল, ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনে তাদের কোনো আপত্তি নেই। তাদের শুধু একটাই আপত্তি ছিল, গণমাধ্যমে যেন নিহত ফিলিস্তিনিদের ছবি প্রকাশ করা না হয়। এতে তাদের দেশে জন-অসন্তোষ তৈরি হতে পারে।’ গাজার ৮০ শতাংশের বেশি ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। হামাসকে নির্মূলের নামে নির্বিচারে শিশু-নারীসহ নিরীহদেরও হত্যা করেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। 

হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বলে মনে করে ইসরায়েল ও তার প্রধান মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তুরস্ক ও ইরান মনে করে, হামাস ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন। তারা ফিলিস্তিনিদের এই রক্ত বৃথা হতে দেবে কি? হামাস বলেছে, স্বাধীন ফিলিস্তিনের স্বপ্ন তারা বাস্তব করবেনই একদিন। যেকোনো মূল্যে। এ বছর কাতারের নেতৃত্বে বহুপক্ষীয় মধ্যস্থতায় সাময়িক অস্ত্রবিরতিতে রাজি হয়েছিল হামাস ও ইসরায়েল। ১৭ জানুয়ারি শুরু হওয়া প্রথম পর্বের অস্ত্রবিরতিতে ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ে ২৫ ইসরায়েলি ও থাইল্যান্ডের ৫ জিম্মি মুক্তি পান। ইসরায়েল বলছে, এখনো হামাসের হাতে ৫৯ জিম্মি রয়েছেন, এদের মধ্যে ২৪ জন বেঁচে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ১ মার্চ প্রথম পর্বের অস্ত্রবিরতি শেষ হয়। দ্বিতীয় পর্বের অস্ত্রবিরতিতে দুই পক্ষের অনৈক্যের মধ্যে এ সপ্তাহে আবার গাজায় বিমান হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। পাশাপাশি অধিকৃত পশ্চিম তীরেও হামলা চালাচ্ছে তারা। দেড় বছরে সেখানে ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৯০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। 

যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় নতুন করে হামলা চালানো ছিল সংঘাত শুরুর পর ইসরায়েলের সবচেয়ে ভয়ানক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সামরিক পদক্ষেপ। এ হামলাকে নেতানিয়াহু সরকারের স্বার্থে শুরু যুদ্ধ বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া এ হামলা ও হামলার ধরনের সঙ্গে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের সম্পর্ক আছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫