Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

মার্কিন শুল্ক ঝড় কীভাবে সামলাবে ভারত

Icon

নাজমুস সাকিব

প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৫, ১১:৫০

মার্কিন শুল্ক ঝড় কীভাবে সামলাবে ভারত

প্রতীকী ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চীন, কানাডা ও মেক্সিকোর বিরুদ্ধে নেওয়া অতিরিক্ত শুল্ক বৃদ্ধির পদক্ষেপকে সরাসরি বাণিজ্য যুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করা হলেও ভারতের ক্ষেত্রে পরিভাষা হিসেবে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে না। তবে ২ এপ্রিল থেকে বিপুল বাণিজ্য ঘাটতিকে সামনে এনে শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণায় বাণিজ্য ঝড়ের আঁচ ঠিকই বাংলাদেশের বৃহৎ প্রতিবেশী দেশটিতে লেগেছে। এতে অনেকটাই টালমাটাল ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য। কেননা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ বৃহৎ অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে ৪ মার্চ স্টেট অব দি ইউনিয়ন ভাষণে ট্রাম্প ভারতকে প্রধান শুল্ক অপব্যবহারকারী হিসেবে চিহ্নিত করেন। একই সঙ্গে তিনি তার পালটা শুল্ক আরোপের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

যুক্তরাষ্ট্র এখনো ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। গত বছর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য রেকর্ড ১১৯.৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির (ইঞঅ) প্রথম অংশের অনুমোদন দেন, যার লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা। মোদির সেই সফরে ভারতের প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্টের কোনো সহযোগী বা সহমর্মী বন্ধুর বদলে কঠোর ব্যাবসায়িক ডিল সম্পন্নকারীর ভূমিকায় দেখা গেছে। ফলে আর পাঁচটি দেশের প্রতি তিনি যেমন দেনা-পাওনার ব্যাপারে কঠোরতা দেখাচ্ছেন, ঠিক তেমনি ভারতের প্রতিও। ফলে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ এতে তারা ট্রাম্পের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যযুদ্ধের অংশে পরিণত হওয়ার শঙ্কায় পড়ে গেছেন।

পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ট্রাম্পের অস্থির নীতির কারণে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের মনে আশার আলো ফিকে হয়ে আসছে। যদিও মার্কিন গাড়ি প্রস্তুতকারকরা স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর সময় পাবেন- এই যুক্তিতে সম্প্রতি মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আমদানি করা গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশের ওপর শুল্ক এক মাসের জন্য স্থগিত করেছেন ট্রাম্প। তবে ভারতের ক্ষেত্রেও একই ধরনের ছাড় দেওয়া হবে, এমনটি ভাবার সুযোগ নেই। 

সিএনএন বিজনেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর দেশটিতে ভারতের রপ্তানি বাণিজ্যের আকার দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২০ বিলিয়ন ডলারে। পক্ষান্তরে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক অংশীদার তালিকায় ভারত দশম অবস্থানে রয়েছে। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১২৯.২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা দুই দেশের জন্য একটি রেকর্ড। অথচ ভিয়েতনাম, তাইওয়ানের মতো দেশের অবস্থান সপ্তম ও অষ্টম। ট্রাম্প মেক্সিকো ও কানাডার ওপর ২৫ শতাংশ এবং চীনা পণ্যের ওপর বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর ভারত আশা করেছিল, হয়তো যুক্তরাষ্ট্র বিকল্প বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে ভারতকেই বেছে নেবে। বিশেষত প্রযুক্তি, ইলেকট্রনিকস, গয়না ও ওষুধশিল্পে ভারতের রপ্তানি সক্ষমতা রয়েছে। দ্রুতই সে আশায় গুড়েবালি হয়েছে।

ভারত বর্তমানে মার্কিন পণ্যের ওপর গড়ে ৯.৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর মাত্র ৩ শতাংশ শুল্ক ধার্য করে। ট্রাম্পের নীতি বাস্তবায়ন হলে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের যে ব্যয়সুবিধা রয়েছে, তা আর থাকবে না। এতে ভারতীয় পণ্যগুলোর প্রতিযোগিতামূলক মূল্য কমে যাবে, রপ্তানি আয় হ্রাস পাবে এবং শ্রমনির্ভর শিল্পে ব্যাপক কর্মসংস্থান হারাবে। বিশেষ করে রাসায়নিক, ধাতব, গয়না, গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশ, টেক্সটাইল, ওষুধশিল্প ও খাদ্যপণ্য। এই পরিস্থিতি ভারতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। ভারতকে হয় শুল্ক থেকে ছাড় পাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর-কষাকষি করতে হবে (সেখানে ‘ম্যাড’ বলে খ্যাত ট্রাম্প কোনো ছাড় দেবেন না তা সহজেই অনুমেয়), নয়তো দ্রুত বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে। এ ছাড়া অনেকে ভারতকে রপ্তানি নীতি সংস্কারের কথা বলছেন। উদাহরণ হিসেবে ১৯৯১ সালে অর্থনৈতিক সংকটকালে ভারত যেভাবে উদারীকরণের পথে এগিয়ে গিয়েছিল, বর্তমান সংকটজনক পরিস্থিতিকে একটা সুযোগ হিসেবে নিয়ে তেমন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক যুদ্ধ এবং তার ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই মনে করছেন, ভারত আবার একটি নতুন যুগসন্ধিক্ষণে পৌঁছেছে। প্রশ্ন হলো, ভারত তিন দশক আগে যেমন একটি সুযোগ হাতছাড়া করেনি, তেমনই এখনো সে সুযোগ গ্রহণ করবে, নাকি আরও সুরক্ষা নীতির দিকে যাবে?

ট্রাম্প বারবার ভারতকে ‘শুল্ক রাজা’ এবং ‘বড় বাণিজ্য শোষক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। সমস্যাটি হলো যে ভারতের বাণিজ্যভিত্তিক আমদানি শুল্ক বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের গড় শুল্কহার ২.২ শতাংশ, চীনের ৩ শতাংশ এবং জাপানের ১.৭ শতাংশ। ভারতের শুল্ক হার দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। প্রশ্ন হলো, যদি ভারতীয় রপ্তানিকারকরা মার্কিন বাজার হারান, তাহলে তারা কি বিকল্প ক্রেতা খুঁজে পাবেন? আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতি সংস্কার কী উত্তম বিকল্পের সন্ধান দেবে?

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫