মিয়ানমারে শুক্রবার আঘাত হানা ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন চার হাজার জনের বেশি। ধংসস্তুপের নিচে ঠিক কতজন চাপা পড়েছেন, তার সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি।

দেশটির জান্তা সরকারের বরাতে মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, হাসপাতাল গুলোতে রোগীর অতিরিক্ত চাপ। চিকিৎসকরা মান্দালয় হাসপাতালের সামনেও আহতদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। অনেকের অবস্থাই গুরুতর।

এ ছাড়া ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল সাগাই শহরের রাস্তায় মৃত্যুর গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। মান্দালয়ের কাছে যেসব শ্মশানঘাট রয়েছে, সবকয়টাতেই উপচে পড়া ভীড়। স্বজনদের মরদেহ সৎকারের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে প্রায় সবাইকেই।

সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, মান্দালয়ে এরই মধ্যে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। শহরের কোথাও বিদ্যুৎ নেই। এদিকে এখনও ভূমিকম্পের আফটার শক অনুভূত হচ্ছে। সাধারণ মানুষ এখনও ভয়ে আছে।

ফলে যত সময় গড়াচ্ছে, সেখানে মানবিক সংকট পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে আরও আন্তর্জাতিক সাহায্যের প্রয়োজন।

এর আগে গতকালই মিয়ানমারের একটি মুসলিম সংস্থার বরাতে সংবাদমাধ্যম এবিসি জানিয়েছে, ভূমিকম্পে নিহতদের মধ্যে সাত শতাধিক মুসলিমও রয়েছেন। যারা জুমার নামাজ আদায় করতে মসজিদে এসেছিলেন। অন্তত ৬০টি মসজিদ ভূমিকম্পে পুরো ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে থাইল্যান্ডেও মৃতের সংখ্যা এখন ২০ এ দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ধসে পড়া বহুতল ভবনেই মারা গেছেন ১৩ নির্মাণ শ্রমিক। কর্তৃপক্ষ বলছে, সেখানে এখনও ৭০ জনের বেশি শ্রমিক আটকা রয়েছেন।

এরই মধ্যে ভূমিকম্পের তিন দিন পার হয়ে গেছে। যত সময় গড়াবে, তত আটকে পড়া শ্রমিকদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা কমবে। উদ্ধার অভিযান এখনও চলছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, ভবনটিতে প্রাণের কোনো চিহ্ন তার আর পাচ্ছেন না। ফলে স্পষ্টতই সেখানে মৃতের সংখ্যা বাড়বে।

গত শুক্রবার রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে মিয়ানমারে। যার আফটার শকের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৭। প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককেও এটি জোরালোভাবে অনুভূত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) জানিয়েছিল, মধ্যাহ্নভোজের সময় আঘাত হানা ভূকম্পনের গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার (৬ দশমিক ২ মাইল)। এরপর একটি শক্তিশালী আফটারশক অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মিয়ানমারের মান্দালয় শহর থেকে প্রায় ১৭ দশমিক ২ কিলোমিটার দূরে। শহরটি জনসংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ।

মান্দালয় জনবহুল হওয়ায় সেখানে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছে ইউএসজিএস।