ভারতে নতুন ওয়াকফ বিল পাশ, বোর্ডে থাকবেন অমুসলিমরাও

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১৬

লোকসভায় বক্তব্য রাখছেন ভারতের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু
লোকসভার পর এবার রাজ্যসভাতেও পাশ হয়ে গেল ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল। টানা ১২ ঘণ্টা আলোচনার পর- বৃহস্পতিবার রাতে রাজ্যসভায় ভোটের মাধ্যমেই এর সুরাহা হয়। বিলটির পক্ষে ভোট পড়ে ১২৮টি ও বিপক্ষে ৯৫টি।
এর আগে বুধবার লোকসভায় পক্ষে ভোট পড়েছিল ২৮৮টি ও বিপক্ষে ভোট ছিল ২৩২টি। আইন হিসেবে পরিণত করার জন্য এখন কেবল রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সইয়ের অপেক্ষা।
পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, নতুন আইনে ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিমদের অন্তর্ভূক্ত করার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। বিরোধীরা এর সমালোচনাও করেছেন। তারা দাবি করেছেন, এই বিল মুসলিম স্বার্থের ক্ষতি করবে। এর মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পদের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ প্রতিষ্ঠা পাবে।
তবে দেশটির সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু এমন অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, বোর্ড সদস্যে অমুসলিমরা থাকলেও তারা তেমন কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। কারণ ওয়াকফ বোর্ডের ব্যবস্থাপনা, সৃষ্টি ও সুবিধাভোগী কেবল মুসলিমরাই থাকবে।
কেন অমুসলিমদের বোর্ডে রাখা হয়েছে, বিরোধীদের এমন প্রশ্নের জবাবে রিজিজু বলেন, “ওয়াকফ বোর্ড একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা। একটি বিধিবদ্ধ সংস্থায় কেবল মুসলিমরা থাকবেন, আর কেউ থাকতে পারবে না, এটি কেমন কথা?”
তার মতে, বিধিবদ্ধ সংস্থাকে ধর্ম নিরপেক্ষ হতে হবে। সব ধর্মের প্রতিনিধিত্ব সেখানে থাকা উচিত।
রিজিজু এও জানান, মুসলিমদের ভয়ের কিছু নেই। ২২ সদস্যের বোর্ডে কেবল ৪ জনই অমুসলিম থাকতে পারবেন। ফলে বিল পাশ হয়ে তা আইনে পরিণত হলেও বোর্ডে মুসলিমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকবেন।
বিলটি নিয়ে রাজ্যসভায় ১৬ মিনিটের ভাষণে রিজিজু আরও বলেন, “কেউ কেউ বলছেন, আমরা এই বিলের মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের ভয় দেখাচ্ছি। কিন্তু ভয় আমরা দেখাচ্ছি না। ভয় আপনারা (বিরোধীরা) দেখাচ্ছেন। বিল পাশ হওয়ার পর দেখবেন, আগামীকাল থেকে এটিকে কীভাবে স্বাগত জানানো হয়।”
১৯৫৪ সালের আইনকে সংশোধন করে ১৯৯৫ সালে ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা অনেকটাই বাড়িয়েছিল তৎকালীন ভারত সরকার। বিরোধী দলগুলো বলছে, লোকসভায় আনা এই নতুন বিলের মাধ্যমে কার্যত ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা নাটকীয়ভাবে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আর এটিকে যৌক্তিক বলছেন, বিজেপিপন্থী সাংসদরা। যুক্তি হিসেবে রিজিজু জানান, সাচার কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে ৪ লাখ ৯০ হাজার ওয়াকফ সম্পদ রয়েছে। যার থেকে আয় হওয়া উচিত ছিল ১২ হাজার কোটি রুপি। অথচ আয় হয়েছে, মাত্র ১৬৩ কোটি রূপি।
সংশোধনী বিলটির পক্ষে থাকা দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবেগৌড়া সংসদেই বলেন, “এই বিলটি গরীব মুসলিমদের রক্ষা করবে তাদেরই ধনী অংশের হাত থেকে।”