ক্ষুধার্তদের জন্য খাবার বিতরণ করছিলেন ৬ ভাই, মারা গেলেন ইসরায়েলের হামলায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৪:৪৭

ছবি- সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ উপত্যকা গাজায় রবিবার ইসরায়েলি হামলায় ৩৭ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ছয় সহোদরও ছিলেন, যারা ক্ষুধার্ত গাজাবাসীর জন্য খাবার বিতরণের কাজ করছিলেন। এদিকে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরেও অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী।
সোমবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে নতুন করে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। পাশাপাশি পশ্চিত তীরে ৮৪ দিন ধরে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে দেশটির বাহিনী।
নতুন করে হামলা শুরুর পর গাজায় হামলা চালিয়ে এক হাজার ৫৬৩ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে শুরু হওয়া যুদ্ধে দেশটির হামলায় গাজায় ৫০ হাজার ৯৩৩ জন নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েলের সামরিক অভিযান থামাতে মিসরের মধ্যস্তায় তারা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
রবিবার গাজা সিটির আল-আহলি আরব হাসপাতালেও হামলা চালায় ইসরায়েল। জরুরিভিত্তিতে রোগীদের সরিয়ে নেওয়ার সময় মারা যায় এক শিশু। এরপর থেকে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে।
হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, “হাসপাতালের ভেতরের একটি ভবন বোমা হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েল। ফলে সেখানে থাকা রোগী ও কর্মীদের সরে যেতে হয়েছে। আমরা আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তি অনুসারে স্বাস্থ্যখাতকে রক্ষা করার জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাই।”
আন্তর্জাতিক মানবিক আইনে বলা হয়েছে, হাসপাতালসহ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটগুলোতে হামলা চালানো উচিত নয়। একই সুরক্ষা আহত, অসুস্থ, চিকিৎসাকর্মী ও অ্যাম্বুলেন্সকেও দেওয়া হয়। তবে ইসরায়েল এর কোনোটিই মানে না।
গাজা সিটি থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, একটি বা দুইটি হাসপাতাল নয়, অবরুদ্ধ উপত্যকার ৩৬টি হাসপাতালেই হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। অধিকাংশ হাসপাতালই এখন পুরোপুরি বন্ধ। যেগুলো আংশিক সচল ছিল তার মধ্যে আল-আহলি একটি। এখন এটিও পুরোপুরি অচল।
বাকি আংশিক সচল থাকা হাসপাতালগুলো পর্যাপ্ত চিকিৎসা উপকরণের অভাবে সেবা দিতে পারছে না। অনেক আহত ও অসুস্থ রোগী বিনা চিকিৎসায় মারায় যাচ্ছেন।
হাসপাতালগুলোতে হামলা চালানোর ক্ষেত্রে সাধারণত তেলআবিবের পক্ষ থেকে অজুহাত দেওয়া হয়, হামাসের সদস্যরা নিরাপদ ঘাঁটি হিসেবে হাসপাতাল ভবনগুলোকে ব্যবহার করে। আল আহলি আরব হাসপাতালে হামলা চালিয়েও একই দাবি করেছে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেত।
এর আগে গত মাসে প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্টের গাড়িতে গুলি চালিয়ে ১৫ জন চিকিৎসাকর্মীকে হত্যা করে ইসরায়েলি সেনারা। সে সময়ও তারা দায় অস্বীকার করেছিল। পরে নিউ ইয়র্ক টাইমসে এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফাঁস হলে ঘটনা স্বীকার করতে বাধ্য হয় তেলআবিব।
যদিও চিকিৎসাকর্মী হত্যার ঘটনায় কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
বিশ্লেষকদের মতে, এসব অপরাধ করে বরাবরই দায়মুক্তি (ইনডেমনিটি) পেয়ে আসছে ইসরায়েল। ফলে তাদের সেনা সদস্যরা যুদ্ধাপরাধ করতেও দ্বিধা করছে না।