Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

বিতর্কিত ওয়াক্ফ আইন

মুর্শিদাবাদে সহিংসতায় হিন্দুত্ববাদী ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

Icon

স্বর্ণা চৌধুরী

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪১

মুর্শিদাবাদে সহিংসতায় হিন্দুত্ববাদী ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে। ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত

ওয়াক্ফ সংশোধনী আইন প্রত্যাহারের দাবিকে কেন্দ্র করে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে সুতি, ধুলিয়ান, সামশেরগঞ্জ এলাকা ভয়াবহ রূপ নেয় ১১ এপ্রিল। বিক্ষোভ ঘিরে দেখা দেয় সহিংসতা, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ। ১৩ এপ্রিল ভোররাত অব্দি গুলিবিদ্ধ হয়েছে আটজন; তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। সামশেরগঞ্জে দুজনকে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। সহিংসতার ঘটনায় সেখানে দুই শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে আরএসএস ঘনিষ্ঠ তিনজন শিল্পপতিও রয়েছেন বলে খবরে বলা হয়।

রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন অশান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও থমথমে অবস্থা বজায় রয়েছে। সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকতে ও গুজবে কান না দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ১৪ এপ্রিল রাজ্য পুলিশের আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) জাভেদ শামীম জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে আনতে পুলিশ কাজ করছে। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘সহিংসতার ঘটনায় দুই শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১১ এপ্রিল থেকে যা ঘটেছে, সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সবাইকে বুঝতে হবে, কোনো রাজ্যে যদি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, সেই রকম পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সময় লাগে।’

এই সহিংসতার নেপথ্যে হিন্দুত্ববাদীরা বহিরাগতদের ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জঙ্গিপুরের তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি খলিলুর রহমান ও ফরাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম দাবি করেছেন, অশান্তির পেছনে বাইরের লোক জড়িত। স্থানীয়দের অনেকেই সহিংসতাকারীদের চিনতে পারছেন না। বিজেপি ও বিএসএফের একাংশ যৌথভাবে পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করছে। এমনকি বিজেপি নেতাদের উসকানিমূলক মন্তব্য দেওয়া ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়েছে। ভিডিওতে ব্যারাকপুরের বিজেপি নেতা অর্জুন সিংকে বলতে শোনা গেছে, ‘উত্তর প্রদেশ, বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে লোক এনে ঠান্ডা করে দেব।’ 

অশান্ত পরিস্থিতিতে ধুলিয়ানের বহু মানুষ ঘর ছেড়ে গঙ্গা পেরিয়ে মালদহের বৈষ্ণবনগরে আশ্রয় নিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের ঘরে ফেরাতে সব রকম সহযোগিতা করা হবে। এ বিষয়ে খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঘরছাড়াদের দ্রুত ঘরে ফিরিয়ে তাদের যথোপযুক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করব।’এরই মধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দক্ষ পুলিশ অফিসারদের জঙ্গিপুরে বিশেষ ডিউটিতে আনা হয়েছে। 

বিজেপির পার্লামেন্ট সদস্য জগন্নাথ সরকার দাবি তুলেছেন, এই রাজ্যের মুর্শিদাবাদ, মালদহসহ সাতটি জেলায় অবিলম্বে সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন আফস্পা বলবৎ করা হোক। তবে তৃণমূল এমপি ও দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যকে পরিকল্পিতভাবে অশান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এদিকে বিজেপির পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব সহিংসতার ছবি পোস্ট করা হয়েছে, সেগুলোকে ভুয়া বলে জানিয়েছে রাজ্য পুলিশ। পুলিশের বক্তব্য, পুরোনো ছবি ব্যবহার করে পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। 

এদিকে মুর্শিদাবাদ ঠান্ডা হতে না হতেই উত্তপ্ত হয়েছে ভাঙড়। ১৪ এপ্রিল সকাল থেকেই সেখানে ওয়াক্‌ফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চাঙ্গা হয়েছে। যার নেপথ্যে রয়েছেন ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) বিধায়ক ও ফুরফুরা দরবার শরিফের পীরজাদা নওসাদ সিদ্দিকী। তার দাবি, তৃণমূল যতই রাজ্যে আইন কার্যকর না করার ব্যাপারে গলা ফাটাক, পরোক্ষভাবে তারাও বিষয়টি সমর্থন করছে। সেদিন মিনাখাঁ, বাসন্তী, ভাঙড়ের বিভিন্ন জায়গা থেকে দলে দলে আইএসএফ নেতাকর্মীরা কলকাতা যাওয়ার জন্য রওনা দিলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় এলাকা। বিক্ষোভে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে বাসন্তী হাইওয়ে। লাঠিপেটা করে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও উত্তপ্ত হয়ে উঠে শোনপুর এলাকা। বিক্ষুব্ধরা পুলিশের পাঁচটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। 

প্রসঙ্গত, ওয়াক্‌ফ আইনের বিরুদ্ধে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের উদ্যোগে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে আগামী ২৬ এপ্রিল সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে ফুরফুরা শরীফের পীরজাদারা সক্রিয় অংশগ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫