পরমাণু ইস্যুতে উত্তেজনার মধ্যেই তেহরানে সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪৩

রানের সর্বোচ্চ নেতার কাছে বাদশাহ সালমানের চিঠি পৌঁছে দিয়েছেন সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে দ্বিতীয় দফা আলোচনার ঠিক আগমুহূর্তে, সৌদি আরবের প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান বৃহস্পতিবার তেহরানে এক উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক সফরে ইরানি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেহরানে বৈঠকের সময় প্রিন্স খালিদ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে সৌদি বাদশাহ সালমানের একটি চিঠি হস্তান্তর করেছেন।
পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে খামেনির সঙ্গে ছবি শেয়ার দিয়ে তিনি লেখেন, “আমরা আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং পারস্পরিক স্বার্থ নিয়ে আলোচনা করেছি।”
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে খামেনি বৈঠকে বলেন, “আমাদের বিশ্বাস, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান এবং সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক উভয় দেশের জন্যই উপকারী।”
পাশাপাশি পরমাণু প্রযুক্তির দিকে ইঙ্গিত করে খামেনি সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে আরও জানান, যেসব বিষয়ে ইরান অগ্রসর, সে ধরণের ক্ষেত্রে সৌদি আরবকে সবধরণের সহযোগিতা করতে চান তারা।
সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেকশিয়ান ও ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরির সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।
বৈঠকের পর ইরানের জেনারেল বাঘেরি জানান, “বেইজিং চুক্তির পর থেকে সৌদি আরব ও ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক উন্নত হচ্ছে।” ২০২৩ সালে চীনের মধ্যস্থতায় ইরান ও সৌদি আরব বহু বছরের বৈরিতা কাটিয়ে সম্পর্ক পুনরায় শুরু করতে সম্মত হয়।
এ ছাড়াও সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্র-ইরান আলোচনা স্বাগত জানিয়েছে। রিয়াদ বলছে, তারা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিরোধ শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের চেষ্টা সমর্থন করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক হামিদরেজা গোলামজাদেহ বলেন, “এই সফরের উদ্দেশ্য সম্ভবত ইরানের ওপর সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে সৌদির উদ্বেগের বিষয়টি জানানো। সৌদিরা ইরানকে আশ্বস্ত করতে চায় যে তারা কোনো সামরিক সংঘাতে আগ্রহী নয় এবং সম্পর্ক উন্নয়ন চায়।”
প্রিন্স খালিদের এই সফর এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হলো- যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে, এবং মধ্যপ্রাচ্যে সম্ভাব্য সংঘাতের আশঙ্কা আবারও সামনে এসেছে।
২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি বাতিল করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের সম্পর্ক তলানিতে। হোয়াইট হাউসে ফেরার পর ট্রাম্প আবারও তার “সর্বোচ্চ চাপ” নীতি চালু করেছেন, নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়েছেন এবং সামরিক পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছেন।
মার্চে ট্রাম্প আয়াতুল্লাহ খামেনিকে চিঠি পাঠিয়ে আলোচনার আহ্বান জানান এবং সাড়া না এলে সামরিক পদক্ষেপের সম্ভাবনার কথাও জানান। খামেনি পরে বলেন, “আলোচনা শুরু হলেও তার ফলাফল অনিশ্চিত।”
তবে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালাতে চেয়েছিল ইসরায়েল। তার কারণেই এমনটা সম্ভব হয়নি। ওয়াশিংটন আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চায়।
ইরানে আইএইএ প্রধান
সম্প্রতি জাতিসংঘের আনবিক শক্তি পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইএইএ’র প্রধান রাফায়েল গ্রোসি ইরান সফর করেন।
তিনি ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ ইসলামির সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যায়ে আছি। আলোচনার জন্য সময় ফুরিয়ে আসছে। চুক্তি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা সহজ ছিল না। তবে আমরা কঠোর পরিশ্রম করছি এবং সফল হতে চাই।”
২০১৮ সালে চুক্তি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে ইরান ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা অস্ত্র-গ্রেড ৯০ শতাংশের কাছাকাছি। আইএইএ জানায়, ইরান তাদের কিছু অভিজ্ঞ পরিদর্শককে বাধা দিয়েছে এবং নজরদারির সুযোগ সীমিত করেছে, তবে সংস্থার সঙ্গে সংযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়নি।