ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ উপত্যকা গাজায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ৩২ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একই পরিবারের ১০ সদস্যও রয়েছেন।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাফা থেকে আত-তোয়াম পর্যন্ত পুরো গাজাজুড়ে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

উত্তর গাজায় দুটি বাড়িতে হামলার পর সেগুলো মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। উত্তর গাজায় হামলার সময় আগুনে পুড়ে মারা গেছে নারী ও শিশুরা। অনেকের মরদেহ পরিচয় শনাক্ত করার মতো অবস্থায় ছিল না।

এদিকে ইসরায়েলের অবরোধের কারণে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন গাজার বাসিন্দারা। প্রতিদিনই সংকট আরও বাড়ছে। নারী ও শিশুসহ অনেক বাসিন্দা পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে সদ্যজাত শিশুরা। বাজার ও ওষুধের দোকানে মিলছে না শিশুখাদ্য। জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছুই দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।

আল জাজিরার কাছে দেইর আল বালাহ এলাকার ফাদি আহমেদ জানান, অপুষ্টির কারণে মারা গেছে তার ছেলে।

আল আকসা হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা জানান, শিশুটির ফুসফুসে বড় ধরনের সংক্রমণ তৈরি হয়েছে। একারণে রক্তে অক্সিজেন অক্সিজেন স্বল্পতায় তার মৃত্যু ঘটেছে।

শুধু অপুষ্টিই নয়, গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যাতেও ভুগছে গাজার শিশুরা। সরঞ্জাম অপ্রতুল হওয়ায় তাদের চিকিৎসাও দিতে পারছে না হাসপাতালগুলো।

গাজার বেসামরিক সুরক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, হতাহতদের উদ্ধারকাজে নিয়োজিত গাড়িগুলোর জ্বালানি দ্রুতই ফুরিয়ে আসছে। কয়েক দিন পরেই তাদেরকে উদ্ধার অভিযান বন্ধ করে দিতে হতে পারে।

মার্চের শুরু থেকে গাজায় জ্বালানি, খাদ্য ও ওষুধ ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েলি সেনারা। যুদ্ধ বিরতি ভেঙে ১৮ মার্চ থেকে অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে নতুন করে হামলা শুরু করেছে তারা।

ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাসের হাতে জিম্মিরা মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত গাজায় হামলা চলবে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ মার্চ থেকে ১২ এপ্রিল পর‌্যন্ত গাজায় এক হাজার ৫৬৩ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া অনেক মরদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকায় প্রকৃত নিহতের সংখ্যা জানা যাচ্ছে না।

২০২৩ সালে ৭ অক্টোবর ইসরায়েল গাজায় হামলা শুরু করার নিহতের সংখ্যা ৫১ হাজার ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন আহত ১ লাখ ১৬ হাজার জনের বেশি।

এদিকে হামাসের হাতে জিম্মিদের আটক থাকা নিয়ে ইসরায়েলে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। জিম্মিদের স্বজনদের অভিযোগ, নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে জিম্মিদের মুক্তির প্রশ্নকে উপেক্ষা করে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন নেতানিয়াহু।

রয়টার্স ও আল জাজিরার তথ্যমতে, ইসরায়েল তাদের সর্বশেষ প্রস্তাবে ৪৫ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে, এর বিনিময়ে হামাসকে ১১ জন ইসরায়েলি বন্দি মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে হামাস বলেছে, তারা ‘এক দফায়’ সব বন্দি মুক্তি দিতে প্রস্তুত, যদি ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধ করে এবং গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়।