Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে পারে ইরান

Icon

মো. ইমরানুর রহমান

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪৮

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে পারে ইরান

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

পরমাণু কর্মসূচি ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা ওমানের রাজধানী মাসকটে ১২ এপ্রিল পরোক্ষ আলোচনায় মিলিতও হয়েছেন। পূর্ব নির্ধারিত এই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। ইরানের পক্ষে আলোচনায় নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। 

এই আলোচনাটি গঠনমূলক পরিবেশে হয়েছে বলে জানিয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আলোচনার স্থান ত্যাগ করার আগে প্রধান আলোচকরা ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদর বিন হামাদ আল-বুসাইদির উপস্থিতিতে কয়েক মিনিট কথাও বলেছেন। মূলত ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধান মধ্যস্ততাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পৃথক কক্ষে বসা দুই পক্ষের মধ্যে বার্তা আদান-প্রদান করেন। নিকট ভবিষ্যতের আলোচনায়ও তাকেই মধ্যস্ততাকারী হিসেবে দেখা যাবে। 

হোয়াইট হাউসও এক বিবৃতিতে আলোচনাকে ইতিবাচক ও গঠনমূলক উল্লেখ করে জানিয়েছে, উভয় পক্ষ আগামী ১৯ এপ্রিল পুনরায় বৈঠকে বসতে সম্মত হয়েছে। তবে আলোচনাসংক্রান্ত কিছু বিষয়ে দেশ দুটির মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার প্রশাসন বারবার বলেছেন যে, আলোচনাটি হবে সরাসরি এবং একই ঘরে বসে। সেখানে তেহরান শুরু থেকেই জোর দিয়ে বলেছে, আলোচনাটি হবে পরোক্ষ। যে উপায়ে বর্তমানে চলছে। তবে এখনো পরিষ্কার নয় যে, আগামী সপ্তাহের বৈঠক সরাসরি হবে কি না, নাকি আগের মতোই মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে পরোক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি এবং দেশটির নেতৃত্ব বহুবার জোর দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাসযোগ্য নয় এবং তেহরান কখনো সরাসরি মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসবে না। কারণ ২০১৮ সালে ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে একতরফাভাবে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।

আল-জাজিরার কূটনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক জেমস বেইস জানিয়েছেন, আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায় যে উভয় পক্ষকে একটি অবস্থানপত্র প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। যেখানে আলোচনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ও তাদের রেড লাইন নির্ধারণ করে দিতে বলা হয়েছে। ইরান স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, আলোচনার একমাত্র বিষয়বস্তু হবে তাদের পরমাণু কর্মসূচি। সামরিক সক্ষমতা বা হিজবুল্লাহর মতো আঞ্চলিকভাবে সমর্থিত প্রতিরোধ জোট আলোচনার বিষয় নয়। তবে আলোচনার কিছুক্ষণ আগেই ট্রাম্প ইরানকে সামরিক হুমকি দিয়ে বলেন, যদি কোনো চুক্তি না হয়, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বৈঠকের আগের দিন এয়ার ফোর্স ওয়ানে ফ্লোরিডার পথে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমি চাই না ইরানের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র থাকুক। আমি চাই ইরান একটি দারুণ, সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ হোক। কিন্তু তারা পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে পারবে না।’ হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট ট্রাম্প প্রশাসনের পুরোনো এক বক্তব্য পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ‘যদি প্রেসিডেন্টের দাবি মানা না হয়, তাহলে চরম পরিণতি অপেক্ষা করছে।’

আলোচনার আগে খামেনির জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা আলি শামখানি জানান, তেহরান বাস্তবসম্মত ও ন্যায্য একটি চুক্তির লক্ষ্যে কাজ করছে। সামাজিকমাধ্যম এক্সে তিনি লেখেন, ‘ক্যামেরার সামনে লোকদেখানো কাজ না করে, তেহরান একটি বাস্তব ও কার্যকর চুক্তি চায়। আমরা গুরুত্বপূর্ণ ও বাস্তবসম্মত প্রস্তাব প্রস্তুত রেখেছি।’

এদিকে সামরিক বিকল্পের কার্যত বিরোধিতা করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে বলেছে, কূটনৈতিক বিকল্প ছাড়া আর কোনো পথ নেই। জার্মানিও পরমাণু কর্মসূচি ইস্যুতে দুই পক্ষকেই কূটনৈতিক সমাধানে পৌঁছানোর আহ্বান জানায়। তবে ইরান হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র তার দেওয়া হুমকি বাস্তবায়ন করে, তাহলে তেহরান এনপিটি (পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি) ত্যাগ করবে এবং আন্তর্জাতিক আণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএর বাকি সব পরিদর্শককে বহিষ্কার করবে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার কর্মকর্তারা এবং ইসরায়েলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বারবার সতর্ক করে বলেছেন, তাদের দাবি মেনে না চললে ইরানে ব্যাপকভাবে বোমাবর্ষণ করা হবে। মার্কিন ও ইসরায়েলি নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, আলোচনা ব্যর্থ হলে ইরানের প্রধান পারমাণবিক স্থাপনা, তেল শোধনাগার এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বেসামরিক অবকাঠামোতেও হামলা হতে পারে। এদিকে চলতি মাসেই ওয়াশিংটন ইরানের তেল ও পারমাণবিক কর্মসূচি লক্ষ্য করে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তথাকথিত ‘লিবিয়ান মডেল’ প্রয়োগের কথা বলেছেন, যার অর্থ- ইরানের সব পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস ও আত্মসমর্পণ করানো। তবে তেহরান অনড় অবস্থানে রয়েছে। তাদের যুক্তি, কয়েক দশকের অভিজ্ঞতায় অর্জিত পারমাণবিক জ্ঞান ও উন্নয়ন বোমা মেরে ধ্বংস করা সম্ভব নয়। তাদের দাবি, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে শান্তিপূর্ণ এবং এটি বিদ্যুৎ উৎপাদন ও রেডিও ফার্মাসিউটিক্যালস তৈরির মতো বেসামরিক প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়। তবে শীর্ষ কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, যদি ইরান অস্তিত্ব সংকটে পড়ে, তাহলে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথেও যেতে পারে।


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫