Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্প-চীন বাণিজ্যযুদ্ধে মার্কিন কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিপাকে

Icon

তৌসিফ আহমেদ

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৬

ট্রাম্প-চীন বাণিজ্যযুদ্ধে মার্কিন কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিপাকে

ট্রাম্প-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জেদের কারণে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে মার্কিন জনগণের জন্য ক্ষতির মাত্রা রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে চীনা পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ১৪৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে অ্যাপল, পিসি, মাইক্রোচিপসহ কিছু প্রযুক্তি খাতকে এই সিদ্ধান্ত থেকে সাময়িক রেহাই দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেছে চীন। বেইজিং সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক কৌশলকে কোনোভাবেই গুরুত্ব দিচ্ছে না, বরং একে ‘তামাশা’ বলেই উড়িয়ে দিচ্ছে।

চীনের বর্ধিত শুল্ক মূলত যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য, গাড়ি, জ্বালানি ও প্রযুক্তি পণ্যের ওপর চাপানো হয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে মার্কিন কৃষক ও ছোট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো, যাদের বড় একটি বাজার ছিল চীনে। অন্যদিকে চীনের ওপর ট্রাম্পের লাগামছাড়া শুল্কারোপে উল্টো বেকায়দায় পড়েছেন আমদানিনির্ভর মার্কিন কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

ট্যাক্স ফাউন্ডেশনের অর্থনীতিবিদ এরিকা ইয়র্ক বলেন, ‘ট্রাম্পের চাপিয়ে দেওয়া ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বেশির ভাগ ব্যবসা বন্ধ করে দেবে। কিছু পণ্য আছে, যেগুলোর বিকল্প নেই, তাই সেগুলোর ওপর খরচ বেশি হলেও আমদানি করা লাগবে, কিন্তু বাকি সব পণ্য আর আসবে না। যদি এটা কেবল চাপ সৃষ্টি করার কৌশল হয়, তাহলে কেউ দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে যাবে না।

এরই মধ্যে চীনের মতো বৃহৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে আসা আসবাবপত্র, খেলনা, ক্রীড়াসামগ্রী, পোশাক, জুতা- এসব নিম্ন মার্জিনের পণ্যের আমদানি কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। সরবরাহ চেইনের ওপর নির্ভরশীল হাজারো ব্যবসা হঠাৎ করেই নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। ‘অর্ডার ক্যানসেল’ আর ‘ফ্রেইট পরিত্যাগ’ এখন যেন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে উঠেছে মার্কিন বন্দরগুলোতে। সাপ্লাই চেইন বিশ্লেষক অ্যালান মারফি বলছেন, ‘ফার্নিচার, খেলনা, পোশাক, জুতার মতো খাতে আমদানি পুরোপুরি থেমে গেছে। কেউ বুঝতেই পারছে না, কী হবে আগামী সপ্তাহে।’ ব্রায়ান বোর্কের মতো লজিস্টিকস বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, পণ্য আমদানিতে ভিয়েতনাম বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে কিছুটা ঝোঁক দেখা গেলেও চীনের জায়গাটা পূরণ করার মতো অবকাঠামো এখনো অনেক দূরের পথ।

চীনা প্রযুক্তির পণ্য এই শুল্কের বাইরে রাখার কারণ মূলত দুটি। প্রথমত, এই খাতগুলোতে পণ্যের উৎপাদন অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া প্রায় অসম্ভব, কারণ এর জন্য সময়, প্রযুক্তি ও বিপুল মূলধন প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব প্রযুক্তি খাতকেও বাঁচিয়ে রাখা দরকার, নইলে কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে উদ্ভাবনের গতি হোঁচট খাবে। কিন্তু সমস্যা হলো সব খাত তো অ্যাপল না! পোশাকের দোকান, ফুটওয়্যারের ছোট রিটেইলার, স্পোর্টস গিয়ার কোম্পানিÑএরা দিন গুজরান করে প্রতি সপ্তাহে চীনা পণ্যের ওপর নির্ভর করে। এখন শিপিংয়ের খরচ, বন্দর ফি, শুল্ক- সব মিলিয়ে তারা যে দামে পণ্য আমদানি করে, সে দামে সেটা বিক্রিও সম্ভব নয়। ফলে ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে, স্টোর ফাঁকা, লোকসানে দোকান বিক্রি করে দেওয়া ছাড়া আর উপায় থাকছে না।

সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, এই ধাক্কা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সহ্য করতে পারছেন না। যারা প্রি-পেমেন্টে পণ্য আমদানি করত, এখন তারা জানেই না কবে, কোন হারে শুল্ক বসবে। সিএনবিসিসহ বিভিন্ন মার্কিন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, শুল্কের চাপ সামাল দিতে না পেরে অনেক ব্যবসায়ী এখন মালামাল ত্যাগ করে চলে যাচ্ছেন। ‘অ্যাব্যান্ডনড ফ্রেইট’ বা পরিত্যক্ত পণ্যের সংখ্যা এত বেড়ে গেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরগুলোতে কোথাও কোথাও এই মাল বিক্রি করা বা নিলামে তোলার প্রস্তুতি চলছে। আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী স্টিফেন লামার বলেন, ‘এই আকস্মিক নীতিগত পরিবর্তন আর উচ্চ শুল্ক ব্যবসার জগতে ভয়ানক ঝড় তুলেছে- এমনটা আমরা শেষ দেখেছিলাম কোভিডের সময়। শুল্ক এত বেশি যে অর্ডার বাতিল করাই একমাত্র উপায়। ছোট ব্যবসায়ীর পক্ষে এই চাপ সহ্য করা সম্ভব নয়।’

বিশ্বের বৃহত্তম কনটেইনার শিপিং সংস্থা মার্স্ক বলছে, এখন পুরো সাপ্লাই চেইন আবার সাজাতে হবে। লাইন সার্ভিস থেকে শুরু করে বন্দরের সার্ভার, জাহাজের শিডিউল- সব কিছুতে রদবদল আসছে এবং এটা হতে সময় লাগবে বহু মাস। খরচও পড়বে বিপুল।

শেষ পর্যন্ত, ট্রাম্প প্রশাসন যদি চায় আমদানি কমিয়ে নিজস্ব উৎপাদন বাড়াতে, তাহলে তাকে আগে ‘আস্থার পরিবেশ’ তৈরি করতে হবে। কারণ কেউ আপাতত যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করতে চাইবে না, যদি নিশ্চিত না হয় আগামী ছয় মাসে আবার কোনো হঠাৎ সিদ্ধান্ত এসে সব উল্টে দেবে না।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫