ইস্টারের দিনেও গাজায় নিহত ৩১, পোপের যুদ্ধবিরতির আহ্বান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৭

ইস্টার উপলক্ষে ভ্যাটিকানের বারান্দায় ভাষণ দিচ্ছেন পোপ ফ্রান্সিস
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় রবিবার খ্রিস্টানদের পবিত্র ধর্মীয় উৎসব ইস্টারের দিনেও ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আরও ৩১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একই দিন ইস্টার উপলক্ষে দেওয়া এক শুভেচ্ছা বার্তায়- গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস।
ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে খোলা আকাশের নিচে দেওয়া এক ভাষণে পোপ ফ্রান্সিস বলেন, আমি যুদ্ধরত পক্ষগুলোর কাছে আবেদন করছি: যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করুন, জিম্মিদের মুক্তি দিন এবং শান্তির ভবিষ্যতের আকাঙ্ক্ষা পোষণকারী ক্ষুধার্ত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসুন।
তবে ইসরায়েল যে ফ্রান্সিসের আহ্বানও শুনছে না- তা স্পষ্ট।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, উপত্যকাটির নিরাপদ অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত এলাকাতেও হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফের সদস্যরা।
এর মধ্যে আল-মাওয়াসিরে বাস্তুচ্যুতদের তাঁবুতে হামলায় ২ জন এবং খান ইউনিসের একটি বাড়িতে হামলায় ৪ জন নিহত হয়েছেন।
তবে শুধু বিমান হামলা বা গোলার আঘাতেই নয়- সাধারণ ফিলিস্তিনের খাদ্যের অভাবেও মারার পরিকল্পনা করেছে ইসরায়েল। গত মার্চ থেকেই পূর্ণ অবরোধে রয়েছে গাজা উপত্যকা।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, গাজায় খাদ্যের মজুদ ফুরিয়ে আসছে। সাধারণ ফিলিস্তিনিরা জানেন না, পরের বেলার খাবারই কোথা থেকে আসবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে সোমবার দেওয়া এক পোস্টে ডব্লিউএফপি লিখেছে, “গাজার এখনই খাদ্য প্রয়োজন। সব পক্ষকে বেসামরিক নাগরিকদের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার, মানবিক কর্মীদের সুরক্ষা ও অবিলম্বে গাজায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।”
ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজায় খাদ্য সংকট চরমে
গাজার পাশাপাশি যুদ্ধবিরতির পরেও প্রতিবেশী দেশ লেবাননে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। দেশটিতে গত রবিবার ইসরায়েলি হামলায় ২ জন হিজবুল্লাহ সদস্য নিহত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের চাপে বেশকয়েকদিন ধরেই লেবাননের প্রশাসন ইরানপন্থি সশস্ত্র সংগঠনটিকে নিরস্ত্র করার আলোচনা চালাচ্ছে। কিন্তু ইসরায়েলের চালানো সাম্প্রতিক এই হামলার ঘটনা হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র হতে রাজি করানোটা কঠিন করে ফেলেছে বলে মনে করেন প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন।
প্যারামেডিক হত্যাকাণ্ডের দায় অস্বীকার করেছে ইসরায়েল
গতমাসে প্যালেস্টাইন রেডক্রিসেন্টের ১৫ জন প্যারামেডিককে হত্যার বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর তদন্ত দল দাবি করেছে, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সেনারা জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
প্যালেস্টাইন রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি প্রত্যাখান করেছে। তারা জাতিসংঘের অধীনে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চাইছে।
গাজার জাতিসংঘের সহায়তা কার্যক্রমের প্রধান জোনাথন হুইটঅল এই ঘটনার জন্য ইসরায়েলি সেনাদেরকেই দায়ী করেছেন।
এর আগে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, প্যারামেডিকদের বহনকারী গাড়িতে কোনো জরুরি সেবাবিভাগের চিহ্ন ছিল না। পরে নিউ ইয়র্ক টাইমস নিহত এক প্যারামেডিকের ফোনে পাওয়া ভিডিও প্রকাশ করলে সে দাবি থেকে সরে এসেছিল তেলআবিব।
পশ্চিম তীরেও ইসরায়েলি উৎপাত অব্যাহত
গাজায় যখন বর্বর হামলা চলছে তখন অধিকৃত পশ্চিম তীরেও অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারী ও ইসরায়েলি সেনারা ফিলিস্তিনিদের উপর নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে।
ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, হেবরনে ফিলিস্তিনি মালিকানাধীন একটি দোকান ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা জ্বালিয়ে দিয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, জেনিন শরণার্থী শিবির থেকে শত শত ফিলিস্তিনিকে উচ্ছেদ করেছে ইসরায়েলিরা। তারা বর্তমানে আরব আমেরিকান ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে আশ্রয় নিয়েছে।