Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

তিন বছর ধরে চলছে যুদ্ধ, কী চায় রাশিয়া

Icon

মো. ইমরানুর রহমান

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৭

তিন বছর ধরে চলছে যুদ্ধ, কী চায় রাশিয়া

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ছবি: সংগৃহীত

নব্য নাৎসিবাদ দমন ও দোনবাস অঞ্চলের সাধারণ মানুষকে রক্ষার অজুহাতে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এখন যুদ্ধের তিন বছর পেরিয়ে গেল। আন্তর্জাতিক বিশ্বে জোরালো হচ্ছে ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবি। এমনটি হয়তো সম্ভব, তবে রাশিয়ার কিছু চাওয়া আছে। 

ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা জোরদার করা হয়েছে। সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করেছেন। ৩০ দিনের সাময়িক যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অংশ নিয়েছে ইউক্রেনও। এরপর রাশিয়ায়ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল সফরে গিয়েছে। কিন্তু ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, অস্থায়ী কোনো যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব তাদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। ক্রেমলিন মনে করে, বর্তমানে ইউক্রেনীয় সেনারা যুদ্ধক্ষেত্রে চাপের মধ্যে আছে। পুরো ফ্রন্টলাইন থেকেই তারা পিছু হটছে। অস্ত্রের ভান্ডারও ফুরিয়ে আসছে। এমন সময়ে অস্থায়ী কোনো যুদ্ধবিরতি তাদের শক্তি সঞ্চয়ের সুযোগ করে দেবে, যা কার্যত যুদ্ধকে দীর্ঘ করবে।

রাশিয়ার কিছু দাবি মেনে নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি সম্ভব বলে মনে করে ক্রেমলিন। সেই দাবিগুলো এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলকে জানানো হয়েছে। কিন্তু সেগুলোর ধরন সম্পর্কে এখনো প্রকাশ্যে কিছু বলেনি ওয়াশিংটন। এর আগে বিভিন্ন সমঝোতার প্রচেষ্টার বৈঠকে উত্থাপিত রাশিয়ার চাওয়াগুলো বিবেচনায় নিলে কিছুটা ধারণা করা যায়- আসলে কী চাইছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

সামরিক অভিযান শুরুর আগে ইউক্রেনের পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি আলোচনায় ছিল। রাশিয়া নিশ্চয়তা চাইছে, যাতে কোনোভাবেই ইউক্রেনকে ন্যাটোতে সংযুক্ত করা না হয়। এ ছাড়া ২০১৪ সালে ইউক্রেনে হওয়া এক অভ্যুত্থানে পশ্চিমা সমর্থিত সরকার ক্ষমতায় আসে। এরপরই রুশ অধ্যুষিত ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নেয় রাশিয়া। পরে এক গণভোটের মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করে। ক্রেমলিন চাইছে, আন্তর্জাতিক বিশ^ এই সংযুক্তির বৈধতা দিক। সম্প্রতি গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ক্রিমিয়াকে রুশ ভূখ- হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন।  

ক্রিমিয়া ছাড়াও বর্তমানে ইউক্রেনের ২০ শতাংশ অঞ্চল রুশ সেনাদের নিয়ন্ত্রণে। এর মধ্যে রয়েছে দোনেৎস্ক ও লুহানেস্ক নিয়ে গঠিত দোনবাস অঞ্চল, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া। সামরিক অভিযান শুরুর পরই পুতিন দোনেৎস্ক ও লুহানেস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন। পরে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে এই দুই অঞ্চলসহ খেরসন ও জাপোরিঝিয়াকেও এক গণভোটের মাধ্যমে নিজেদের ভূখ-ের সঙ্গে যুক্ত করে রাশিয়া। যদিও পশ্চিমা বিশ্ব এই সংযুক্তিকে অবৈধ ও প্রহসনমূলক পদক্ষেপ বলে আখ্যায়িত করেছিল। ক্রেমলিনের দাবি হলো, বর্তমান যুদ্ধ বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। এই অঞ্চলগুলোর রুশ সংযুক্তি মেনে নিতে হবে। 

যদিও ইউক্রেন বলছে, তাদের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির প্রধানতম শর্ত হলো রাশিয়াকে ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে তাদের সব সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। এমনকি ক্রিমিয়াও তারা রাশিয়ার কাছে ছাড়তে রাজি নয়। যদিও কিয়েভ আলোচনার টেবিলে তার এই অবস্থান ধরে রাখতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। কারণ ইউক্রেন এরই মধ্যে তাদের প্রধান মিত্র ও দাতা দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন হারিয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে কার্যত হোয়াইট হাউস থেকে বের করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সমরাস্ত্র সহায়তা ছাড়া যুদ্ধের ময়দানে ইউক্রেনীয় সেনাদের টিকে থাকা কঠিন। সময় যত গড়াবে রুশ সেনারা আরো বেশি এলাকা দখলে নেবে। 

যুদ্ধবিরতিতে রাশিয়ার আরেকটি দাবি হলো, ইউক্রেনের নিরস্ত্রীকরণ। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকের অধীনে দেশটির সামরিক সক্ষমতা কমিয়ে আনার বিষয়টি ক্রেমলিনের চাওয়ার মধ্যে রয়েছে। ইউক্রেন যাতে ধ্বংসাত্মক কোনো অস্ত্র তৈরি করতে না পারে, তার উদ্যোগ থাকতে হবে। 

ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। দেশটিকে আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং সিস্টেম সুইফট থেকে বাদ দেওয়া হয়। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৩৩ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি বৈদেশিক রিজার্ভ পশ্চিমা দেশগুলো ফ্রিজ করে দেয়। এ ছাড়া তেল-গ্যাস আমদানি, প্রযুক্তি যন্ত্রাংশ, আকাশসীমা ও নৌবন্দরেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে রাশিয়া এসব নিষেধাজ্ঞা থেকেও মুক্তি চাইছে। রাশিয়ার এই দাবিদাওয়া নিয়েই সম্ভবত দর-কষাকষি চলছে। তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই লড়াইয়ে উভয় পক্ষের লাখ লাখ সেনা এরই মধ্যে হতাহত হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি যুদ্ধবিরতি হবে। ততই বাঁচবে মানুষের জীবন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫