উত্তর কোরিয়া প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে যে, তারা তারা রাশিয়ার পক্ষে ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য সেনা পাঠিয়েছে এবং কুরস্ক অঞ্চলে রুশ ভূখণ্ড পুনর্দখলে অংশ নিয়েছে।

সোমবার দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ এক বিবৃতিতে জানায়, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের নির্দেশে রুশ বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে যুদ্ধ করেছে তাদের সেনারা। ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশন এ সিদ্ধান্তে সম্মতি দেয় বলে জানানো হয়েছে।

কেসিএনএ কিম জং উনের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ইউক্রেনীয় বাহিনীকে ‘নিশ্চিহ্ন’ করে এবং কুরস্ক অঞ্চল ‘মুক্ত’ করতে উত্তর কোরীয় সেনারা রাশিয়ান বাহিনীর সঙ্গে একযোগে যুদ্ধ করেছে। কিম বলেন, “ন্যায়ের জন্য লড়াই করা এসব সৈনিক আমাদের মাতৃভূমির গর্ব।”

সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার মতো ‘শক্তিশালী রাষ্ট্রের’ সঙ্গে মিত্রতা গড়ে তুলতে পেরে গর্বিত।

গত বছরের জুনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও কিম জং উন একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি সই করেন। তাতে একে অপরের সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, যা কার্যকর হচ্ছে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়োনহাপ সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়া পিয়ংইয়ংয়ে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। এতে রাশিয়ায় নিহত উত্তর কোরীয় সৈনিকদের সম্মান জানানো হবে। ফুল দিয়ে তাদের জন্য ‘অমরতার প্রার্থনা’ করা হবে বলেও জানিয়েছে কেসিএনএ।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত বছর অক্টোবরে প্রায় ১৪ হাজার উত্তর কোরীয় সৈন্য রাশিয়ায় মোতায়েন করা হয়। এর মধ্যে ৩ হাজার সৈন্য পাঠানো হয় আগের পর্যায়ের হতাহতের শূন্যস্থান পূরণ করতে।

সূত্রগুলো বলছে, যুদ্ধের শুরুতে সাঁজোয়া যান ও ড্রোন যুদ্ধের অভিজ্ঞতার অভাবে উত্তর কোরীয় সৈন্যরা প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে। তবে দ্রুত মানিয়ে নিয়ে পরে রুশ বাহিনীর সঙ্গে কুরস্ক অঞ্চলের পুনর্দখলে ভূমিকা রাখে।

হতাহতের সংখ্যা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনআইএস) জানিয়েছে, প্রায় ৩০০ জন উত্তর কোরীয় সৈন্য নিহত এবং ২ হাজার ৭০০ জন আহত হয়েছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলছেন, উত্তর কোরীয় হতাহত সৈন্যের সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়িয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হিসাব অনুযায়ী, এ সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ২০০।

গত শনিবার রাশিয়ার সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ প্রেসিডেন্ট পুতিনের কাছে রিপোর্টে জানান, উত্তর কোরিয়ার সৈন্যরা “বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে” এবং ইউক্রেনীয় বাহিনীকে পরাজিত করতে “গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা” দিয়েছে। তিনি বলেন, কুরস্ক অঞ্চল পুনর্দখল করা হয়েছে।

তবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, কুরস্কের কিছু এলাকায় এখনো তাদের প্রতিরক্ষামূলক অভিযান চলছে।

রবিবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়া ও অন্যান্য তৃতীয় পক্ষ রাশিয়ার যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সহায়তা করছে, যা বন্ধ করা উচিত। একই সঙ্গে মস্কোর পিয়ংইয়ংয়ের প্রতি সমর্থনও বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে ওয়াশিংটন।