
গোলাপি হ্রদ। ছবি: সংগৃহীত
অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূলের ওপর দিয়ে উড়োজাহাজ বা হেলিকপ্টারে উড়ে যাওয়ার সময় নিচে তাকালে অদ্ভুত এক দৃশ্যে আপনার চোখ আটকে যেতে পারে।
নীল সমুদ্রের পাশে, সবুজ গাছপালার মাঝখানে হঠাৎ দেখা মিলবে এক টুকরো গোলাপি হ্রদের। মনে হতে পারে, মিডল আইল্যান্ডের প্রকৃতির ক্যানভাসে যেন একটুখানি বাবলগামের গোলাপি রং ঢেলে দেওয়া হয়েছে। তাই বিমানের জানালার দিকে মুখ বাড়িয়ে অনেকেই এই অপার্থিব সৌন্দর্য উপভোগ করেন। জায়গাটির নাম লেক হিলিয়ার।
লেক হিলিয়ারের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০০ মিটার। এটি ঘিরে আছে সাদা বালুর একটি সরু প্রান্ত, ঘন পেপারবার্ক ও ইউক্যালিপটাসগাছের বন। উত্তরে একটি সরু বালুকাদ্বীপ ও গাছপালায় ঘেরা অঞ্চল এটিকে দক্ষিণ মহাসাগর থেকে আলাদা করে রেখেছে। সব মিলিয়ে হ্রদটির অবস্থান ও পরিবেশ যেন এক নিখুঁত প্রকৃতির শিল্পকর্ম।
এই হ্রদের সবচেয়ে রহস্যময় দিক হলো এর স্থায়ী গোলাপি রং। তবে অন্যান্য গোলাপি হ্রদের মতো আলো বা প্রতিচ্ছবির কারণে এটি হয়নি, অবিশ্বাস্য হলেও লেক হিলিয়ারের পানি আসলেই গোলাপি! আপনি যদি এখানকার পানি বোতলে ভরে নিয়ে যান, সেটিও একই রং ধারণ করে।
যদিও এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যায়নি কেন এই হ্রদের পানি এমন রঙের। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এটি ডুনালিয়েলা সালিনা নামক শৈবাল এবং হ্যালো ব্যাকটেরিয়া নামের লবণাক্ত পানিতে পাওয়া যায়- এমন এক ধরনের জীবাণুর কারণে হতে পারে।
লেক হিলিয়ারের কথা প্রথম জানা যায় ১৮০২ সালে। ব্রিটিশ নাবিক ম্যাথিউ ফ্লিন্ডার্স যখন আশপাশের অঞ্চল দেখার জন্য এই দ্বীপের সবচেয়ে উঁচু জায়গায় উঠেছিলেন তখন তার চোখে পড়ে এই গোলাপি হ্রদ। সেই থেকে এই জায়গাটি মানুষকে কৌতূহলী করে রেখেছে।
মাঝখানে এই এলাকা থেকে লবণ সংগ্রহ শুরু হয়। এতে এর প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ে। তবে এক পর্যায়ে লবণ উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর তাই আশ্চর্য গোলাপি রং দিয়ে গবেষকসহ সবাইকে এখনো মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে লেক হিলিয়ার।