-6822fbc790840.jpg)
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওয়াশিংটন ডিসির জয়েন্ট বেইজ অ্যান্ড্রুজ থেকে ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’-এ করে সোমবার সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটা তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বড় ধরনের বিদেশ সফর। এ সফরে তিনি শুধু সৌদি আরবই নয়, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারেও যাবেন তিনি। তবে এ সফরে ইসরায়েলে যাওয়ার তার কোনো পরিকল্পনা নেই।
বিশ্লেষকরা বলছেন, তার এই সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করা।
ট্রাম্প প্রশাসন এই সফরকে ব্যবহার করতে চায় বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা চুক্তি এবং প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার এক অনন্য সুযোগ হিসেবে।
তিনি নিজেও এটিকে কেবল রাজনৈতিক নয়, বরং একটি কূটনৈতিক ও ব্যবসায়িক ‘মেগা ডিল’-এর সফর হিসেবে বিবেচনা করছেন।
বিপরীতে সৌদি আরব চায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা চুক্তি- যা দেশটির আঞ্চলিক অবস্থানকে আরও দৃঢ় করবে।
এর পাশাপাশি তারা বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচিতে মার্কিন সহায়তা কামনা করছে, যদিও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে।
তবে রিয়াদ স্পষ্ট করে জানিয়েছে- এই প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করলে তারা মার্কিন কোম্পানিগুলোকেই এ সংক্রান্ত কাজে সংযুক্ত হতে অগ্রাধিকার দেবে।
সৌদি আরব এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- এই বিনিয়োগ তহবিলকে তারা ১ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত নিয়ে যেতে আগ্রহী।
যদিও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও আসেনি। ট্রাম্পের সফর চলাকালেই অনেক কিছু চূড়ান্ত হতে পারে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আগ্রহ প্রযুক্তি খাতে। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সেমিকন্ডাক্টর, জ্বালানি ও উৎপাদন খাতে তারা আগামী এক দশকে প্রায় ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্য স্থির করেছে।
তাদের দৃষ্টিভঙ্গি- যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক যেন কেবল অর্থনৈতিক না থেকে আরও কৌশলগত হয়। যা পুরো উপসাগরীয় অঞ্চলের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে, কাতার সামরিক ও কূটনৈতিক দিক থেকে নিজের অবস্থান আরও জোরদার করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বিদেশি সামরিক ঘাঁটি কাতারের আল-উদেইদেই অবস্থিত। যেখান থেকে বহু আন্তর্জাতিক সামরিক অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ঘাঁটির কার্যকাল সম্প্রতি আরও ১০ বছর বাড়ানো হয়েছে।
এর আগে বাইডেন প্রশাসনের সময় ২০২২ সালে কাতারকে ‘প্রধান অ-ন্যাটো মিত্র’ ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র, যা দেশটির গুরুত্ব বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।
গাজা, আফগানিস্তান ও সিরিয়া ইস্যুতে কাতার আগেও গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা রেখেছে। এবারও তারা সেই কূটনৈতিক অবস্থান কাজে লাগিয়ে সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ তৈরি করতে চায়, যাতে সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়।
এই সফর উপসাগরীয় দেশগুলোর জন্য ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কারণ তারা বিশ্বাস করে, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন মানেই ওয়াশিংটনের কাছ থেকে কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সুবিধা আদায়ের বাস্তব সম্ভাবনা। ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যক্তিগত বোঝাপড়া, বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি ও রাজনৈতিক লবিং—সবকিছু মিলিয়ে দেশগুলো নিজেদের অবস্থান পোক্ত করতে চায়।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকেও এই সফর গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি শুধু বিনিয়োগ বা চুক্তির বিষয় নয়- বরং মধ্যপ্রাচ্যে নিজের উপস্থিতি পুনর্গঠন এবং প্রভাব বিস্তারের একটি বড় কৌশল।
ট্রাম্প এই সফরের মাধ্যমে যেমন ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে চাইছেন, তেমনি এসব দেশও নিজেদের নিরাপত্তা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও কৌশলগত অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে আগ্রহী।