ট্রাম্পের ‘গোল্ডেন ডোম’: মহাকাশ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাবে যুক্তরাষ্ট্র

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ মে ২০২৫, ১৫:৫৭

গোল্ডেন ডোম তৈরির ঘোষণার সময় ট্রাম্পের পাশেই ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ।
যুক্তরাষ্ট্র ‘গোল্ডেন ডোম’ নামে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ নির্ভর ভবিষ্যৎমুখী ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নকশা নির্বাচন করেছে। মঙ্গলবার দেওয়া এক ঘোষণায় এমনটাই জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন এ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার লক্ষ্য হলো ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রসহ পরবর্তী প্রজন্মের আকাশপথে আক্রমণের হুমকি প্রতিহত করা।
এর আওতায় শত শত কৃত্রিম উপগ্রহ পুরো পৃথিবীকে প্রদক্ষীণ করতে থাকবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ছুটে আসা ক্ষেপণাস্ত্রের গতিবিধি শনাক্ত করতে পারবে। এটি হবে একটি সম্পূর্ণ ব্যবস্থাপনা- ফলে সুবিধামাফিক স্থল, আকাশ, এমনকি মহাকাশ থেকেও ক্ষেপণাস্ত্রটি ধ্বংস করা যাবে।
তবে এই ধারণা ট্রাম্পই প্রথম নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান স্টার ওয়্যারস নামে এমন একটি ব্যবস্থা আনতে চেয়েছিলেন। যা সে সময়কার প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
ট্রাম্প আশাবাদী যে, তার মেয়াদের শেষদিকে এই সিস্টেম পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হবে।
প্রাথমিকভাবে একটি নতুন বাজেট বিলের আওতায় এ প্রকল্পে ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
যদিও কর্মকর্তারা বলছেন, ভবিষ্যতে কয়েক দশকে প্রকৃত ব্যয় এর চেয়ে বহু গুণ বেশি হতে পারে।
কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস অনুমান করেছে, শুধু মহাকাশভিত্তিক অংশের জন্যই আগামী ২০ বছরে ব্যয় হতে পারে ৫৪২ বিলিয়ন ডলার।
মঙ্গলবার ওভাল অফিসে এক ঘোষণায় ট্রাম্প বলেন, ‘গোল্ডেন ডোম’ সিস্টেমে স্থল, সমুদ্র এবং মহাকাশভিত্তিক সেন্সর ও ইন্টারসেপ্টর থাকবে।
এই প্রকল্পের নেতৃত্ব দেবেন স্পেস ফোর্সের জেনারেল মাইকেল গেটলাইন। তিনি বর্তমানে বাহিনীর ভাইস চিফ অব স্পেস অপারেশনস পদে রয়েছেন।
হোয়াইট হাউসের মতে, আকাশ পথে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক হুমকি। ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম সাত দিনের মধ্যেই প্রতিরক্ষা বিভাগকে এমন একটি সিস্টেমের পরিকল্পনা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আংশিকভাবে ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ থেকে অনুপ্রাণিত। তবে ‘গোল্ডেন ডোম’ আরও বিস্তৃত পরিসরে কাজ করবে। হাইপারসনিক অস্ত্র, ফ্র্যাকশনাল অরবিটাল বোম্বার্ডমেন্ট সিস্টেম (ফোওবিএস) ও মহাকাশ থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য অন্যান্য হুমকি মোকাবিলা এর লক্ষ্য।
ট্রাম্প বলেন, “সবকিছুই আকাশেই ধ্বংস হয়ে যাবে।” তাঁর দাবি অনুযায়ী, এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সফলতার হার হবে প্রায় ১০০ শতাংশ।
কানাডাও এই প্রকল্পে অংশ নিতে চায় বলে জানান ট্রাম্প। চলতি বছরের শুরুতে ওয়াশিংটন সফরের সময় কানাডার তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিল ব্লেয়ার বলেছিলেন, কানাডার এতে যুক্ত হওয়া জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির মতে, বিশ্বে ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি পরিসর ও জটিলতায় আরও বিস্তৃত হবে।
অথচ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাশিয়া ও চীনের আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না।
ট্রাম্প বলেন, “আসলে কোনো বর্তমান সিস্টেম নেই... আমাদের কিছু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আছে, কিন্তু কোনো পূর্ণাঙ্গ সিস্টেম নেই।”
নতুন এই সিস্টেমে বিভিন্ন প্রযুক্তি একত্রিতভাবে একটি কেন্দ্রীয় কমান্ডের অধীনে কাজ করবে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো আকাশপথে সবধরণের হামলা প্রতিহত করতে সক্ষম এমন একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়।