ট্রাম্পের ‘শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা’ অভিযোগে বিস্মিত দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ মে ২০২৫, ১৫:১১

হোয়াইট হাউসে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বুধবার হোয়াইট হাউসে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সঙ্গে এক বৈঠকে বসেন। বৈঠকটি কূটনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও সেখানে ট্রাম্প যে অভিযোগ তোলেন, তা পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত ও অস্বস্তিকর করে তোলে। বিষয়টি যেন ছিল ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের আগের বৈঠকের পুনরাবৃত্তি—মন্তব্য করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বৈঠকে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের জমি দখল করা হচ্ছে, তাদের হত্যা করা হচ্ছে এবং অনেকেই নিরাপত্তার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় চাইছেন। তার এসব দাবি তুলে ধরার সময় হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে আলো নিভিয়ে একটি ভিডিও দেখানো হয়, যেখানে সাদা ক্রসের সারি দেখা যায়। ট্রাম্প বলেন, “এগুলো শ্বেতাঙ্গদের কবর।”
তবে পরে জানা যায়, ভিডিওটি ছিল ২০২০ সালের একটি বিক্ষোভের অংশ—যেখানে দুই কৃষক খুন হওয়ার প্রতিবাদে প্রতীকীভাবে এসব ক্রস বসানো হয়েছিল। বাস্তবে, এগুলো কোনো কবর নয়।
রামাফোসা শান্তভাবে ট্রাম্পের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “দক্ষিণ আফ্রিকায় যদি সত্যিই শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের গণহত্যা চলত, তাহলে এর্নি এলস, রেটিফ গুসেন এবং জোহান রুপার্টের মতো ব্যক্তিরা আজ এখানে আমার পাশে বসে থাকতেন না।”
তিনি জানান, দক্ষিণ আফ্রিকায় অপরাধের হার তুলানামূলক বেশি হলেও বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ডের শিকার হন কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকরা।
দক্ষিণ আফ্রিকার ২০২৪ সালের সরকারি তথ্যমতে, দেশজুড়ে ২৬ হাজার ২৩২টি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে মাত্র ৪৪টি ঘটেছে কৃষি এলাকায়, এবং এর মধ্যে মাত্র ৮ জন নিহত ব্যক্তি ছিলেন কৃষক।
ট্রাম্প এরপর ছাপানো কিছু সংবাদ প্রতিবেদন দেখিয়ে নাটকীয় ভাবে ‘ডেথ, ডেথ’ বলতে বলতে সেগুলো রামাফোসার হাতে তুলে দেন।
পরে রামাফোসা ধৈর্য ধরে বলেন, “দক্ষিণ আফ্রিকায় অপরাধ রয়েছে, এটা সত্যি। কিন্তু কোনো গণহত্যা চলছে না। আমরা এসব নিয়ে আলাপ করতে রাজি আছি।”
রামাফোসা এই বৈঠকে মূলত বাণিজ্য ও খনিজসম্পদ নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ আফ্রিকার পণ্যের ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যা সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে। তবে রাজনৈতিক অভিযোগ ও ভিডিও দেখানোর কারণে বাণিজ্য আলোচনার বিষয়গুলো অনেকটাই চাপা পড়ে যায়।
বৈঠকের একপর্যায়ে উপস্থিত ধনকুবের জোহান রুপার্ট বলেন, “দেশে অপরাধই সবচেয়ে বড় সমস্যা। এতে শুধু শ্বেতাঙ্গ নয়, কৃষ্ণাঙ্গরাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।”
ট্রাম্প বলেন, “আমরা স্বীকার করি, বর্ণবাদী শাসন ছিল ভয়ংকর। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা যেন মুদ্রারই অপর পিঠ।”
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এসব বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের চরম ডানপন্থী গোষ্ঠীর জনপ্রিয় ‘শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা’ তত্ত্বকে আরও উসকে দিতে পারে।
বৈঠক শেষে রামাফোসা দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “দক্ষিণ আফ্রিকায় কোনো গণহত্যা চলছে না। একেবারেই না।”