গাজায় ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে ইসরায়েলি সেনাদের গুলি, নিহত ৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ১৬:৩৯

জিএইচএফের ত্রাণ নিতে রাফায় ভিড় করেছেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার রাফাহ শহরে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি বিতর্কিত ত্রাণ সংস্থার ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে মঙ্গলবার উপচে পড়া ভিড়ের মধ্যে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে অন্তত তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজা কর্তৃপক্ষের বরাতে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৪৬ জন। যাদের অনেকের অবস্থাই গুরুতর। সাত জন এখনও নিখোঁজ। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের প্রত্যক্ষ সহায়তায় অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের ত্রাণ দেওয়ার জন্য কার্যক্রম পরিচালনা করছে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউণ্ডেশন (জিএইচএফ) নামের একটি সংস্থা। যদিও এর কার্যক্রম প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, গাজায় যেকোনো ত্রাণ কার্যক্রম জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানেই পরিচালনা করা উচিত।
গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম অফিস হতাহতের ঘটনার জন্য জিএইচএফ ও ইসরায়েলি বাহিনীকেই দায়ী করেছে।
এক বিবৃতিতে তারা দাবি করেছে, ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী আগেই রাফায় আগেই অবস্থান নিয়েছিল। পরে অনাহারে কাতর মানুষদের ত্রাণের লোভ দেখিয়ে সেখানে টেনে নিয়ে গুলি চালিয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত গণহত্যা ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধাপরাধ।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ৯০ দিনেরও বেশি সময় ধরে চলা অবরোধে ক্ষুধায় জর্জরিত মানুষদের ওপর এই হামলা প্রমাণ করে যে ইসরায়েল যে মানবিক বিপর্যয় তৈরি করেছে, তার ব্যবস্থাপনায় তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ।
কথার মিল নেই জিএইচএফ ও ইসরায়েলের
ঘটনার পর জিএইচএফের পক্ষ থেকে গুলিবর্ষণের বিষয়টি অস্বীকার করা হয়। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী স্বীকার করে যে তারা ‘ত্রাণ কেন্দ্রের বাইরের এলাকায় সতর্কতামূলক গুলি’ চালিয়েছে এবং কিছু সময়ের জন্য নিয়ন্ত্রণ হারানো হয়েছিল। পরে পরিস্থিতি আবারও নিয়ন্ত্রণে আনা হয় বলে জানায় তারা।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করে একটি ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা চালু করেছি, যেখানে একটি মার্কিন কোম্পানি ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর মাঝে খাবার বিতরণ করছে। কিছুক্ষণের জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল, কিন্তু আমরা তা দ্রুত সামাল দিয়েছি।”
তিনি আরও দাবি করেন, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় খাদ্যের অভাবে শুকিয়ে যাওয়া একজন ব্যক্তিকেও দেখা যায়নি। অপুষ্টির কোনো প্রমাণ নেই।”
জাতিসংঘের তীব্র সমালোচনা
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “জিএইচএফের এই ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের ছবি ও ভিডিওগুলো হৃদয়বিদারক বললেও কম বলা হয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এবং আমাদের অংশীদাররা একটি বিস্তারিত, নীতিনির্ভর, নিরাপদ ত্রাণ বিতরণ পরিকল্পনা তৈরি করেছি। আর ত্রাণ বিতরণ হতে হবে স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে। জিএইচএফের পরিকল্পনায় আমরা সেই মৌলিক নীতিগুলোর প্রতিফলন দেখি না।”
ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় জাতিসংঘ ছাড়াও একাধিক আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এখনও জিএইচএফের কার্যক্রমকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।