Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

হার্ভার্ডের সঙ্গে সরকারের সব চুক্তি বাতিলের উদ্যোগ ট্রাম্প প্রশাসনের

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ১৬:৪২

হার্ভার্ডের সঙ্গে সরকারের সব চুক্তি বাতিলের উদ্যোগ ট্রাম্প প্রশাসনের

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রভাবশালী হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সব ধরনের চুক্তি বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। সরকারে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর কাছে পাঠানো চিঠিতে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় ১০ কোটি ডলার হারাতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

মঙ্গলবার নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

এদিন পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলো যেন ভবিষ্যতের সেবা প্রদানের জন্য ‘বিকল্প সরবরাহকারী’ খুঁজে নেয়।

এই অতিরিক্ত তহবিল কাটার পদক্ষেপকে এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা ‘সরকারের সঙ্গে হার্ভার্ডের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক সম্পর্কের সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, এই চিঠি ট্রাম্প প্রশাসনের সর্বশেষ পদক্ষেপ, যা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ও সাংস্কৃতিকভাবে প্রভাবশালী বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ডকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে এবং এর বৈশ্বিক প্রভাব হ্রাস করতে নেওয়া হয়েছে।

এপ্রিলেই হার্ভার্ডের সঙ্গে প্রায় ৩২০ কোটি ডলারের অনুদান ও চুক্তি স্থগিত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়াও বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে।

এই চিঠিটি ২৭ মে যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে সংস্থাগুলোকে ৬ জুনের মধ্যে বাতিলযোগ্য চুক্তিগুলোর তালিকা জমা দিতে বলা হয়েছে। যেসব সেবা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হবে, সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল না করে ধাপে ধাপে অন্য সরবরাহকারীদের হাতে হস্তান্তর করা হবে। প্রায় নয়টি সংস্থার সঙ্গে থাকা চুক্তিগুলো এই সিদ্ধান্তের আওতায় পড়বে।

কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ অনুযায়ী, যেসব চুক্তি এই সিদ্ধান্তে প্রভাবিত হবে তার মধ্যে রয়েছে ৪৯ হাজার ৮৫৮ ডলারের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথের একটি চুক্তি। এটি কফি পান করার প্রভাব নিয়ে গবেষণার জন্য দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া ২৫ হাজার ৮০০ ডলারের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের একটি চুক্তি, যা জ্যেষ্ঠ নির্বাহীদের প্রশিক্ষণের জন্য ছিল।

হার্ভার্ডের কিছু চুক্তি ইতিমধ্যে ‘স্টপ ওয়ার্ক’ নির্দেশনার আওতায় পড়তে পারে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, “ভবিষ্যতে, যেসব ক্ষেত্রে আপনার সংস্থা হার্ভার্ডকে সেবা প্রদানকারী হিসেবে বিবেচনা করতো, সেসব ক্ষেত্রে আমরা বিকল্প প্রতিষ্ঠান খোঁজার পরামর্শ দিচ্ছি।”

প্রশাসন বলছে, তারা হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নিয়েছে নাগরিক অধিকার রক্ষার লড়াই হিসেবে। তাদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়টি রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট, সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভর্তিতে জাতিগত বিবেচনা চালিয়ে যাচ্ছে এবং ক্যাম্পাসে ইহুদি-বিরোধী আচরণ সহ্য করছে।

হার্ভার্ড বলছে, এটি মূলত প্রথম সংশোধনী অনুযায়ী মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার লড়াই। তারা ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে যে, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী নিয়োগ, পাঠ্যক্রম এবং ভর্তির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

সরকারের পক্ষ থেকে এমন দাবিও করা হয়েছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়কে "আমেরিকান মূল্যবোধের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন" শিক্ষার্থীদের নিষিদ্ধ করতে হবে, শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের রাজনৈতিক আদর্শ বিশ্লেষণ করে ‘দৃষ্টিভঙ্গির বৈচিত্র্য’ নিশ্চিত করতে হবে এবং ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রশাসনের কাছে অগ্রগতির প্রতিবেদন দিতে হবে। এসবের বিরুদ্ধে হার্ভার্ড আদালতে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

দ্বিতীয় মেয়াদের নির্বাচনি প্রচারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ‘মার্ক্সবাদী পাগলদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত’ বলে আক্রমণ করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনিয়োগ আয়ের ওপর কর বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দেন। এই পরিকল্পনা ইতোমধ্যে প্রতিনিধি পরিষদে অনুমোদন পেয়েছে। এখনও সিনেটের অনুমোদন প্রয়োজন।

হার্ভার্ডে প্রায় ছয় হাজার ৮০০ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী আছে, যা মোট শিক্ষার্থীর ২৭ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালান এম. গারবার এই নিষেধাজ্ঞাকে ভয়াবহ আঘাত হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ড. গারবার গত সপ্তাহে এক বিবৃতিতে লিখেছেন, “আমরা এই বেআইনি ও অযৌক্তিক পদক্ষেপের নিন্দা জানাই। এটি হার্ভার্ডের হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও গবেষকের ভবিষ্যৎকে বিপদের মুখে ফেলেছে। দেশজুড়ে অসংখ্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সতর্ক সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

ট্রাম্প প্রশাসনের চিঠিতে বলা হয়েছে, হার্ভার্ড ‘বৈষম্যহীনতা ও জাতীয় মূল্যবোধ এবং অগ্রাধিকার’ মেনে চলার বিষয়ে অনাগ্রহ দেখিয়েছে।

এর প্রমাণ হিসেবে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, হার্ভার্ড ল’ রিভিউ সম্প্রতি এমন এক ছাত্রকে ফেলোশিপ দিয়েছে, যিনি ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে এক ইহুদি ছাত্রকে আঘাত করেছিলেন।





Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫