
ম্যাথিউ মিলার। সংগৃহীত ছবি
ইসরায়েলকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থেকে রক্ষা করতে যিনি এক সময় দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন, বাইডেন প্রশাসনের সেই শীর্ষ মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এখন বলছেন, “নিঃসন্দেহে ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধাপরাধ করেছে।”
ম্যাথিউ মিলার, যিনি এই বছরের শুরু পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ছিলেন, তিনি বিভিন্ন সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়েছিলেন যখন তারা মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন বা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন।
তবে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের স্কাই নিউজের এক পডকাস্টে তিনি বলেছেন, পররাষ্ট্র দপ্তরে চাকরির সময়ই তিনি বিশ্বাস করতেন ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করছে।
তাকে যখন প্রশ্ন করা হয়, “ইসরায়েল কি গণহত্যা চালাচ্ছে?”- মিলার জবাব দেন, “আমি মনে করি না এটি গণহত্যা, তবে নিঃসন্দেহে সত্য যে ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করেছে।”
ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে নারী, শিশু ও চিকিৎসাকর্মীদের কোনো কারণ ছাড়াই হত্যা করার অভিযোগ রয়েছে।
সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী মার্ক স্টোন তখন বলেন, “আপনি তো এই কথাগুলো পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিং পডিয়াম থেকে বলতেন না।”
জবাবে মিলার বলেন, “হ্যাঁ, দেখুন—পডিয়ামে দাঁড়িয়ে আপনি ব্যক্তিগত মতামত দেন না। আপনি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সিদ্ধান্ত ও অবস্থান তুলে ধরেন।”
মিলার ছিলেন বাইডেনের প্রেসিডেন্সির শেষ দুই বছরে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র। তিনি নিয়মিত ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের ব্রিফ করতেন। এমনকি বিভিন্ন সময় তাঁর বাসার সামনে প্রো-প্যালেস্টাইন বিক্ষোভকারীরা জড়ো হতেন।
বাইডেনের মতো তিনিও আগে প্রকাশ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) ইসরায়েলি নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সমালোচনা করেছিলেন।
উল্লেখ্য, গত নভেম্বরেই আইসিসি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ এবং “’ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের’ অভিযোগে পরোয়ানা জারি করে, যা এখনও বহাল রয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন সেই পরোয়ানার জবাবে আইসিসির প্রসিকিউটরদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং আদালতকে ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আমাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলকে টার্গেট করে অবৈধ ও ভিত্তিহীন পদক্ষেপ নেওয়ার’ অভিযোগ তোলে।
এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ শুনানি করছে।
গাজায় সহায়তা ব্যবস্থাকে ‘মৃত্যুকূপ’ বলছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো
দক্ষিণ গাজার একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে গুলিতে অন্তত ৩২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন। এই ঘটনায় ইসরায়েল ও হামাস পরস্পরকে দায়ী করছে।
মিলার বলেন, ইসরায়েলি সরকার যুদ্ধাপরাধ চালানোর নীতি নিয়েছে কি না, কিংবা সেইসব অপরাধকে জেনে-বুঝে প্রশ্রয় দিয়েছে কি না—এটা “এখনও একটি উন্মুক্ত প্রশ্ন।”
তবে ইসরায়েলি সেনারা যে যুদ্ধাপরাধ করেছে, সেটা “প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।”
তিনি বলেন, “আপনি যদি গণতন্ত্র বিচার করতে চান, তাহলে দেখতে হবে তারা কি সেই অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় এনেছে। এখন পর্যন্ত আমরা তেমন কোনো ব্যাপক জবাবদিহিতা দেখতে পাইনি।”
হোয়াইট হাউজ আরও চাপ দিতে পারত কি না—নিজেকে প্রশ্ন মিলারের
মিলার বলেন, “আমি এখনো নিজেকে সেই প্রশ্ন করি—আমরা কি আরও বেশি কিছু করতে পারতাম? আমি মনে করি, কিছু সময় হয়তো পারতাম।”
২০২৪ সালের মে মাসে বাইডেন প্রশাসন একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়, যা জানুয়ারিতে বাস্তবায়িত হলেও মার্চে ইসরায়েলের বোমাবর্ষণের মধ্য দিয়ে আবার ভেঙে যায়।
মিলার বলেন, “এটা অবশ্য জটিল। শুধু ইসরায়েলই এই আলোচনায় ছিল না। আমরা দেখেছি- হামাস বারবার শর্ত বদলেছে। তবে নেতানিয়াহুও শর্ত বদলেছেন, এবং আমি মনে করি, কিছু সময় আমরা তাঁর ওপর আরও কঠোর হতে পারতাম।”