রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনা থেকে কোনো অগ্রগতি ছাড়াই বেরিয়ে এসেছে ইউক্রেন। সোমবার ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে মস্কো যে শর্ত দিয়েছে, কিয়েভ তা ‘আত্মসমর্পণের সমান’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনকে ক্রিমিয়া ও আরও চারটি দখলকৃত অঞ্চল রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে, সেনাবাহিনীর আকার কমিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে হবে এবং ন্যাটোতে যোগদানের পরিকল্পনা পরিত্যাগ করতে হবে।

এই শর্তে আলোচনা এগোনো সম্ভব নয় বলে জানায় ইউক্রেন। আলোচনায় যুদ্ধবিরতি নিয়েও কোনো চুক্তি হয়নি।

২০২২ সালের মার্চের পর এবারই দ্বিতীয়বারের মতো সরাসরি বৈঠকে বসে দুই পক্ষ। এক ঘণ্টার এই আলোচনায় ১২ হাজার সেনার মরদেহ বিনিময় এবং গুরুতর আহত ও কমবয়সী যুদ্ধবন্দিদের মুক্তির বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছায় তারা।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এ আলোচনাকে ‘গঠনমূলক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তুরস্কে সরাসরি বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছেন।

তবে যুদ্ধবিরতির প্রশ্নে মতৈক্যে পৌঁছানো যায়নি। ইউক্রেন ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়; রাশিয়া তা প্রত্যাখ্যান করে। তাদের বিকল্প প্রস্তাব—লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন অঞ্চল থেকে ইউক্রেনকে সেনা সরাতে হবে। নতুবা বিদেশি সহায়তা নেওয়া, সামরিক আইন এবং অস্ত্র মজুদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ১০০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ বলেন, কিয়েভ শর্তগুলো পর্যালোচনা করবে এবং জুনের শেষ দিকে আরেক দফা বৈঠকের আশা করছে। তবে মূল বিরোধের সমাধান একমাত্র জেলেনস্কি-পুতিন সরাসরি আলোচনায়ই সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ার কাছে ৪০০ অপহৃত ইউক্রেনীয় শিশুর তালিকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাশিয়া মাত্র ১০ জনকে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে। রাশিয়া জানায়, শিশুদের ‘সুরক্ষার জন্য’ সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

এদিকে, ইউক্রেন ‘স্পাইডার’স ওয়েব’ নামে এক অভিযানে ১১৭টি ড্রোন ব্যবহার করে রাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে হামলা চালায়। সাইবেরিয়া ও উত্তর রাশিয়ার অন্তত তিনটি পারমাণবিক বোমারু বিমানঘাঁটি এতে লক্ষ্যবস্তু হয়। স্যাটেলাইট চিত্রে বিস্ফোরণ ও আগুনের চিহ্ন ধরা পড়েছে, যদিও উভয় পক্ষ ক্ষয়ক্ষতির ব্যাখ্যায় ভিন্ন মত দিয়েছে।

এই অভিযানে ইউক্রেনের সক্ষমতা প্রমাণিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন জেলেনস্কি। বলেন, এতে আন্তর্জাতিক সহযোগীদের আস্থা ফিরে এসেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছেন, দুই পক্ষ সমঝোতার পথ না নিলে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতা থেকে সরে আসতে পারে।