ইউক্রেনে দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরে ‘সবচেয়ে বড়’ রুশ হামলা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২৫, ২০:০৯

রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর খারকিভের একটি ভবনে আগুন লেগে যায়।
ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এ ঘটনায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২০ জন।
শনিবার আল জাজিরার প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাতে রাশিয়া ২১৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে হামলা চালায়। ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী ৮৭টি ড্রোন ও সাতটি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস বা নিস্ক্রিয় করেছে।
খারকিভ শহরের মেয়র ইগর তেরেখভ জানান, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহরটিতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন এবং ১৭ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুটি শিশু রয়েছে। তিনি এই হামলাকে ২০২২ সালে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসনের পর থেকে শহরের ওপর ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ হামলা বলে বর্ণনা করেন।
তিনি জানান, ভোরের আগে শহরের দিকে ৪৮টি ইরান-উৎপাদিত ড্রোন, দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ও চারটি গাইডেড বোমা নিক্ষেপ করা হয়। শহরটি রুশ সীমান্ত থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে, যেখানে ১৪ লাখ মানুষ বাস করে।
ভোর ৪:৪০ মিনিটে তিনি টেলিগ্রামে লেখেন, “ড্রোন এখনো আকাশে ঘুরছে। শহরজুড়ে সাইরেন বেজে উঠছে। আবাসিক ভবন ও বেসামরিক অবকাঠামো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
এই শহরেই বৃহস্পতিবার এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১৮ জন আহত হয়েছিল, যাদের মধ্যে চার শিশু ছিল।
হামলা বেড়েছে
দক্ষিণের শহর খেরসনে রুশ গোলাবর্ষণে এক দম্পতি নিহত হয়েছেন। ডিনিপ্রো শহরে দুইজন নারী-একজন ৪৫ বছর বয়সী এবং অন্যজন ৮৮ আলাদা হামলায় আহত হয়েছেন।
কর্মকর্তারা শুক্রবার জানিয়েছিলেন, ওই দিন রাশিয়া ইউক্রেনজুড়ে বিমান হামলা চালিয়ে অন্তত ছয়জনকে হত্যা করেছে। আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ।
শনিবার লুৎস্ক শহরে উদ্ধারকর্মীরা আরও একটি মরদেহ উদ্ধার করেন। ফলে শুক্রবারের হামলার মৃতের সংখ্যা বেড়ে সাতজনে দাঁড়ায়।
মস্কো বলেছে, শুক্রবারের হামলা ইউক্রেনের ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের’ প্রতিক্রিয়ায় চালানো হয়েছে। তারা বলেছে, হামলাগুলো সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর হয়েছে।
গত সপ্তাহে ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার ফ্রন্টলাইন থেকে অনেক দূরে সাইবেরিয়াসহ বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটিতে পারমাণবিক অস্ত্রবাহী বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। খবর অনুযায়ী, ইউক্রেন এই হামলার পরিকল্পনা ১৮ মাস ধরে করেছিল এবং ড্রোনগুলো গোপনে পাচার করে এনেছিল।
অন্যদিকে ইউক্রেন ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে। সোমবার ইস্তাম্বুলে আলোচনার সময় তাদের সর্বশেষ প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে। তবে মস্কো যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে, এই যুদ্ধ তাদের টিকে থাকার প্রশ্ন।
ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ শুক্রবার বলেন, “এটি আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন। এটি আমাদের জাতীয় স্বার্থ, নিরাপত্তা এবং দেশের ভবিষ্যতের সঙ্গে জড়িত।”
পুতিন দাবি করেছেন, ইউক্রেনকে চারটি আংশিকভাবে দখল করা অঞ্চল থেকে সরে যেতে হবে, ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা ত্যাগ করতে হবে এবং পশ্চিমাদের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বন্ধ করতে হবে। এই প্রস্তাব ইউক্রেন গ্রহণযোগ্য মনে করে না। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বরং তিন-পক্ষীয় এক সম্মেলনের প্রস্তাব দিয়েছেন, যেখানে থাকবেন তিনি, পুতিন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।