স্টারলিংক নিয়ে হোয়াইট হাউসে নিরাপত্তা উদ্বেগ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৫, ১৬:৩৭

হোয়াইট হাউস
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বাসভবন ও কার্যালয় হোয়াইট হাউস কমপ্লেক্সে ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা ‘স্টারলিংক’ স্থাপনকে ঘিরে নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের কয়েকজন যোগাযোগ ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞের উদ্ধৃতি দিয়ে শনিবার দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানায়, স্টারলিংক স্থাপনের আগে হোয়াইট হাউসের নিজস্ব আইটি ও নিরাপত্তা বিভাগের সঙ্গে কোনো ধরনের সমন্বয় করা হয়নি। এমনকি হোয়াইট হাউসের যেসব কর্মকর্তারা প্রেসিডেন্টের যোগাযোগ ব্যবস্থা তদারক করেন, তারাও বিষয়টি সম্পর্কে জানতেন না।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সংস্থা ডিওজিই-এর কর্মীরা হোয়াইট হাউসের পাশের আইজেনহাওয়ার এক্সিকিউটিভ অফিস বিল্ডিংয়ের ছাদে স্টারলিংকের টার্মিনাল স্থাপন করেন। ওই সময় হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরে থাকা ফোন ও কম্পিউটার ডিভাইসে ‘স্টারলিংক গেস্ট’ নামে একটি ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক দেখা যায়, যেখানে সংযোগের জন্য শুধু একটি পাসওয়ার্ড প্রয়োজন হয়। এতে কোনো ইউজারনেম বা দুই স্তরের যাচাইকরণ ছিল না।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিরাপত্তা নীতিমালায় এমন অনিরাপদ সংযোগ ‘বিরল’ ও ‘সংবেদনশীল তথ্য ফাঁসের ঝুঁকি’ হিসেবে গণ্য হয়। হোয়াইট হাউস কর্তৃপক্ষ এই সংযোগের উপস্থিতি সম্পর্কে আগে জানতেন না বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে ইউএস সিক্রেট সার্ভিস জানিয়েছে, তারা ডিওজিই-এর কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত ছিল এবং বিষয়টিকে নিরাপত্তা লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করেনি।
একজন সাবেক হোয়াইট হাউস কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, স্টারলিংক সংযোগ কোনো ধরনের রেকর্ড ছাড়াই ডেটা পাঠাতে সক্ষম, যা হোয়াইট হাউসের প্রচলিত নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ হোয়াইট হাউসে সাধারণত সব ডিভাইস নির্ধারিত ভিপিএন সংযোগে থাকে এবং প্রতিটি সংযোগের কার্যক্রম লগ করে রাখা হয়।
স্টারলিংকের মাধ্যমে সেই নিরাপত্তা ঘেরা দেয়াল বাইপাস হয়ে যেতে পারে বলে মত দেন তিনি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি—স্টারলিংক সংযোগটি হোয়াইট হাউস কমপ্লেক্সে এখনো সক্রিয় আছে কিনা। তাছাড়া ডিওজিই কেন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, তার সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যাও পাওয়া যায়নি।
স্টারলিংক ও ডিওজিই—দু’পক্ষই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে এর আগে তারা জানিয়েছিল, স্টারলিংকের স্যাটেলাইট সংযোগ হ্যাক প্রতিরোধে সাধারণ টেলিকম নেটওয়ার্কের চেয়ে বেশি নিরাপদ।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শুধু হোয়াইট হাউস নয়, ন্যাশনাল লেবার রিলেশনস বোর্ড এবং জেনারেল সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ আরও কয়েকটি সরকারি সংস্থার দপ্তরেও স্টারলিংক সংযোগ বসিয়েছে ডিওজিই।
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে ডেমোক্র্যাটদের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস তদারকি কমিটি। কমিটির ভারপ্রাপ্ত শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য স্টিফেন লিনচ বলেন, “এই প্রযুক্তির মাধ্যমে হোয়াইট হাউস থেকে সংবেদনশীল তথ্য বেরিয়ে যেতে পারে, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। এই তথ্য যদি আমাদের শত্রুদের হাতে পড়ে, তবে ক্ষতির মাত্রা ভয়াবহ হতে পারে।”
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে এমন সময়ে, যখন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে বিশ্বমাধ্যম সরব।
সম্প্রতি এনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, তিনি আর মাস্কের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখছেন না এবং ভবিষ্যতেও তা পুনঃস্থাপনের আগ্রহ নেই। এর আগে মাস্ক ট্রাম্পের কর ও ব্যয় সংক্রান্ত বিলকে ‘জঘন্য’ বলে সমালোচনা করেন। জবাবে ট্রাম্প বলেন, মাস্ক বিল সম্পর্কে সব জেনেও হঠাৎ বিরোধিতা শুরু করেছেন।
এর জবাবে মাস্ক এক্স-এ একাধিক পোস্টে ট্রাম্পকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করেন এবং দাবি করেন, ট্রাম্প ‘এপস্টেইন ফাইল’-এ জড়িত—যদিও কোনো প্রমাণ তিনি দেননি।