চলতি মাসের শেষ নাগাদ চতুর্থ প্রজন্মের নতুন যুদ্ধবিমান ‘এইচএএল তেজস’-এর উন্নত সংস্করণ যুক্ত হতে যাচ্ছে ভারতের বিমানবাহিনীর বহরে। পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বিলম্বিত এই ডেলিভারিকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে এনডিটিভি।

তেজস মূলত ভারতীয় বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেডের (হাল) তৈরি একটি লাইট অ্যাটাক কমব্যাট এয়ারক্র্যাফট। কোম্পানিটির দাবি, ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার পাশাপাশি এই বিমানগুলো ডগফাইটেও পটু।  

ভারতীয় বিমানবাহিনীতে থাকা পুরোনো মিগ-২১ ও জাগুয়ার যুদ্ধবিমানকে অবসরে পাঠাতে ভারত সরকার নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি তেজসকে বেছে নিয়েছে। কারণ দেশটি প্রতিরক্ষা চাহিদার তুলনায় যুদ্ধবিমান সংকটে ভুগছে।

বিমান ঘাঁটিগুলোর জন্য ৪২টি স্কোয়াড্রনের লক্ষ্য থাকলেও এখন পর্যন্ত ভারতীয় বিমানবাহিনী কেবল ৩১টি স্কোয়াড্রন পরিচালনা করছে।

এর আগে বাহিনীটি তেজসের প্রাথমিক উৎপাদনের ধাপে ৪০টি বিমান গ্রহণ করেছে। এবার তারা পাচ্ছে উন্নত ‘এ-১ ভ্যারিয়েন্ট’, যার প্রযুক্তি অনেকটাই পশ্চিমা দেশগুলোর যুদ্ধবিমানের মানের কাছাকাছি। এর বড় একটি কারণ ইসরায়েলি প্রযুক্তির সংযুক্তি।

নতুন তেজস বিমানগুলোতে যুক্ত হয়েছে ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এলটা সিস্টেমসের তৈরি ‘অ্যাক্টিভ ইলেকট্রনিক স্ক্যানড অ্যারে (এইএসএ)’ রাডার। এটি পুরনো ইসরায়েলি রাডারের জায়গায় বসানো হয়েছে। পাশাপাশি ইলেকট্রনিক যুদ্ধ ব্যবস্থা (ইডব্লিউএস) এবং হেলমেট-মাউন্টেড টার্গেটিং সাইটও এসেছে ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান এলবিট সিস্টেমস থেকে।

বিমানগুলোতে আরও থাকবে রাফালে জেটে ব্যবহৃত রাডার-নির্দেশিত ‘ডারবি’ ক্ষেপণাস্ত্র।

নতুন ভ্যারিয়েন্টে ভারত ৮৩টি তেজস বিমান অর্ডার করেছে। প্রতিটি বিমানেই ব্যবহার করা হচ্ছে কোটি কোটি ডলারের ইসরায়েলি প্রযুক্তি। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির আওতায় এসব প্রযুক্তির অনেকটাই ভারতেই উৎপাদন করছে স্থানীয় কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে।

পরিস্থিতি এমন যে, এই ভার্সনের তেজসগুলো ইসরায়েলি প্রযুক্তির দিক থেকে ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর জেটগুলোর চেয়েও এগিয়ে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে ইসরায়েল নিজের বিমানগুলোতে মার্কিন রাডার ব্যবহার করে, নিজস্ব রাডার নয়।

এই উন্নত তেজসের প্রাথমিক ডেলিভারি হওয়ার কথা ছিল দুই বছর আগে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি জেনারেল ইলেকট্রিকের এফ৪০৪ ইঞ্জিন সরবরাহে বিলম্ব হওয়ায় উৎপাদন পিছিয়ে পড়ে। ইসরায়েলি সরঞ্জাম সরবরাহে দেরি নিয়েও এক পর্যায়ে প্রশ্ন উঠেছিল।

ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে বিদেশি প্রযুক্তি বনাম নিজস্ব উন্নয়ন—এই বিতর্ক এখনও চলমান। স্থানীয়ভাবে তৈরি সামরিক সরঞ্জামের মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও নয়াদিল্লির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দেশীয় পণ্যের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে। তবে সেনা কর্মকর্তারা এখনও উন্নত বিদেশি প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী থাকেন বলে মনে করা হয়।

এদিকে, এইচএএল তেজসের পরবর্তী সংস্করণও তৈরির কাজ শুরু করেছে। সেখানে থাকবে ‘কারনাড উইংস’—অতিরিক্ত সামনের ডানা—যা বিমানটির কৌশলগত গতিশীলতা ও যুদ্ধ-সক্ষমতা আরও বাড়াবে। এই নতুন সংস্করণের উন্নয়ন ও প্রযুক্তি সরবরাহে এরই মধ্যে ইসরায়েল, ফ্রান্স ও আমেরিকার কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতায় নেমেছে।