বিক্ষোভ দমনে লস অ্যাঞ্জেলসে এবার ৭০০ মেরিন সেনা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৫, ১৫:১৭

লস অ্যাঞ্জেলসে মুখোমুখি অবস্থানে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় অভিবাসনবিরোধী অভিযানের প্রতিবাদে চারদিন ধরে চলা বিক্ষোভ আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে লস অ্যাঞ্জেলসে অস্থায়ীভাবে ৭০০ মার্কিন মেরিন মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেরিন সেনা মোতায়েনের ঘোষণা এমন সময় এল যখন সোমবার সন্ধ্যায়ও কয়েক শত বিক্ষোভকারী লস অ্যাঞ্জেলসের ডাউনটাউনের একটি ফেডারেল ডিটেনশন সেন্টারের সামনে জড়ো হয়েছিল। যেখানে অভিবাসীদের আটক রাখা হয়েছে।
এর আগে শনিবার থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্যালিফোর্নিয়ায় ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের নির্দেশ দেন। কিন্তু পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ায় তিনি সেনা উপস্থিতি জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেন।
পেন্টাগনের তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে ২ হাজার সদস্যের ন্যাশনাল গার্ড বাহিনীকে দ্বিগুণ করে ৪ হাজার করা হচ্ছে। একইসাথে সীমিত সময়ের জন্য মেরিন সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিরক্ষা বিভাগ।
তবে এখন পর্যন্ত ইনসারেকশন অ্যাক্ট প্রয়োগ করা হয়নি। এই আইনের মাধ্যমে দেশটির সেনাবাহিনীর বেসামরিক আইন প্রয়োগে সরাসরি অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকে।
যুদ্ধক্ষেত্রে বা বিশেষ অপারেশনে সাধারণত ইউনাইটেড স্টেটস মেরিন ক্রপসের সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। এরা জল ও স্থলের মতো যেকোনো পরিবেশে যুদ্ধ করতে পারদর্শী। কিন্তু সাধারণ বিক্ষোভ দমনে তাদের ব্যবহার একেবারে নজীরবিহীন।
ক্যালিফোর্নিয়া সরকার এরই মধ্যে কেন্দ্রের মেরিন সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে গেছে। রাজ্য সরকার অভিযোগ করেছে, এমন পদক্ষেপ ফেডারেল আইন এবং রাজ্যের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে এগিয়ে গেলে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে যায়। লস অ্যাঞ্জেলস পুলিশ (এলএপিডি) জানায়, “কিছু বিক্ষোভকারী অফিসারদের ওপর বিভিন্ন বস্তু নিক্ষেপ শুরু করলে লেস লিথাল (কম প্রাণঘাতী) অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ দেওয়া বিবৃতিতে এলএপিডি আরও জানায়, “লেস লিথাল মিউনিশন শরীরে ব্যথা ও অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। এর বেশি কিছু নয়।”
শনিবার ও রবিবার পাঁচজন পুলিশ সদস্য এবং পাঁচটি পুলিশের ঘোড়া আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিক্ষোভ চলাকালীন কিছু সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে, এর মধ্যে সানডে সন্ধ্যায় কিছু অনলাইন গাড়ি সেবা ওয়ামো’র কয়েকটি স্বচালিত গাড়িও পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
সোমবার সকালে বিক্ষোভকারীরা ‘ফ্রি দেম অল’ স্লোগান দেন। কিছু সহিংস ঘটনাও ঘটেছে। একজন ট্রাম্প সমর্থককে ঘুষি ও ডিম ছোড়া হয়েছে। আবার কিছু বিক্ষোভকারী গাড়ি থেকে পেইন্টবল ছুড়ে ফেডারেল ভবনে আঘাত করেছে।
এর পাশাপাশি নিউইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া ও সান ফ্রান্সিসকোসহ নয়টি শহরে সোমবার বিক্ষোভ হয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এমন পরিস্থিতিতে সেনা মোতায়েন যৌক্তিক বলে মনে করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, “আমি যদি এমনটা না করতাম, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেত। আমি বাধ্য হয়ে শক্তি প্রদর্শন করছি।”
তিনি আরও বলেন, অভিবাসন ইস্যুতে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসোমের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাবকে তিনি সমর্থন করেন।
ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার দায়ের করা মামলায় দাবি করা হয়েছে, এই মোতায়েন অবৈধ। গভর্নর নিউসোমের দপ্তর এক্সে লিখেছে, “এই মাত্রার সামরিকীকরণ একেবারেই অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক এবং নজিরবিহীন।”
ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি, ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্বাধীন বাইডেন প্রশাসন অভিবাসীদের অতিরিক্ত ছাড় দিয়েছে, যা দেশটির নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রাম্প এরই মধ্যে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ হাজার অভিবাসী আটক ও দেশ থেকে বের করে দেওয়ার লক্ষ্য ঘোষণা করেছেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সালে লস অ্যাঞ্জেলসে রডনি কিং নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিককে পেটানো পুলিশ সদস্যদের খালাস পাওয়ার ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া দাঙ্গায় সর্বশেষ ইনসারেকশন অ্যাক্ট প্রয়োগ করে মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হয়। সেই দাঙ্গায় ৫০ জনের বেশি নিহত হন এবং ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়।
বর্তমান উত্তেজনা কতদূর গড়াবে, সেটি নির্ভর করছে ক্যালিফোর্নিয়া প্রশাসনের পদক্ষেপ ও ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিক্রিয়ার ওপর।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় সেনা মোতায়েনের ঘটনা বিরল এবং অত্যন্ত স্পর্শকাতর- যা দেশটির সংবিধান ও গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য এক বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।