ইসরায়েলের ‘ত্রাণবাহী জাহাজ’ ছিনতাইয়ে বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৫, ১৫:৫৬

গাজা অভিমুখী ‘ম্যাডলিন’ নামের ত্রাণবাহী জাহাজ আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে ছিনতাই করে ইসরায়েল।
গাজা উপত্যকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা একটি ত্রাণবাহী জাহাজ আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে ছিনতাই করেছে ইসরায়েল, যেখানে পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গসহ ১২ জন কর্মী রয়েছেন। এই ঘটনাকে আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে একাধিক দেশ ও সংগঠন।
‘ম্যাডলিন’ নামের জাহাজটি রবিবার গভীর রাতে গাজা উপকূল থেকে প্রায় ১০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিনতাই করে ইসরায়েলের আশদোদ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছে ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’। সোমবার সকাল ৭টা জিএমটি-এর পর থেকে জাহাজটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।
জাহাজে থাকা অন্যান্য কর্মীদের মধ্যে রয়েছেন– ফ্রান্সের ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য রিমা হাসান, ফরাসি নাগরিক বাসটিয়েন আন্দ্রে, পাসকাল মোরিয়েরাস, ইয়ানিস মুহামদি ও রেভা ভিয়ার্দ; ব্রাজিলের থিয়াগো অ্যাভিলা; তুরস্কের সুয়েব ওর্ডু; স্পেনের সার্জিও টোরিবিও; নেদারল্যান্ডসের মার্কো ভান রেনেস; জার্মানির ইয়াসেমিন আকার এবং ফ্রান্সের নাগরিক ও আল জাজিরা মুবারাশের সাংবাদিক ওমর ফাইয়াদ।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জাহাজের ক্রুদের ‘জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক রাখা হয়েছে’।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার পর একাধিক দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস একে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন আখ্যা দিয়ে আটক কর্মীদের মুক্তি দাবি করেছে। রামাল্লাভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ‘আল-হক’ বলেছে, ফিলিস্তিনে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করার কোনও বৈধতা ইসরায়েলের নেই।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আন্তর্জাতিক জলসীমায় এ ধরনের হামলা ‘জলদস্যুতার শামিল’।
তুরস্কের ভাষ্য অনুযায়ী, এই হামলা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং ইসরায়েল একটি ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের মতো আচরণ করছে’।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ফরাসি নাগরিকদের মুক্তির দাবি জানিয়ে দ্রুত কনস্যুলার সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাজ্য বলেছে, ইসরায়েল যেন সংযম দেখিয়ে নিরাপদ উপায়ে এই সমস্যার সমাধান করে। প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের মুখপাত্র জানান, গাজা পরিস্থিতি ‘ভয়াবহ ও সহ্যযোগ্য নয়’।
ব্রাজিল এবং আয়ারল্যান্ডও এই হামলার সমালোচনা করেছে। আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস বলেছেন, ম্যাডলিন একটি ‘মানবিক সংহতির প্রতীক’ এবং এটি ছিল নিরস্ত্র নাগরিকদের উদ্যোগ।
স্পেন ইসরায়েলি কূটনীতিককে তলব করেছে এবং অস্ট্রেলিয়ার ইহুদি কাউন্সিল উদ্বেগ জানিয়েছে জাহাজের কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আমেরিকান-ইসলামিক সম্পর্ক পরিষদ (সিএআইআর) এই ঘটনাকে ‘কাপুরুষোচিত ও বেআইনি হামলা’ বলে আখ্যা দিয়েছে এবং গ্রেটা থুনবার্গসহ কর্মীদের সাধুবাদ জানিয়েছে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ‘দ্য লেফট’ দল বলেছে, গাজাবাসীর জন্য সহায়তা আটকে দেওয়া যুদ্ধাপরাধ আড়াল করার কৌশলের অংশ।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ফ্রান্সেস্কা আলবানিজ এই অভিযানকে ‘নৈতিক দায়বদ্ধতা লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস কলামার্ড বলেন, “গাজার মানুষের জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা ইসরায়েলের আইনি দায়িত্ব।”
গ্রিনপিস ও ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্কসহ একাধিক পরিবেশবাদী সংগঠন ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং আটক কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছে।
জলবায়ু আন্দোলনকারী মিকায়েলা লোচ ও আয়িশা সিদ্দিকাও একটি ভিডিওবার্তায় বলেছেন, “আমাদের বন্ধু গ্রেটা থুনবার্গসহ ১২ কর্মীকে অপহরণ করেছে ইসরায়েল এবং গাজার জন্য পাঠানো ত্রাণ আটক করেছে।”