
লস অ্যাঞ্জেলসে মোতায়েন ন্যাশনাল গার্ড সদস্য।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন কেন্দ্রিক দমনমূলক অভিযানের বিরুদ্ধে চলা প্রতিবাদে- পঞ্চম রাতে এসে লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন বাস যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শহরের একটি অংশে কারফিউ ঘোষণা করেছেন।
মেয়র বাস মঙ্গলবার জানান, কারফিউটি ডাউনটাউনের ১ বর্গমাইল (২ দশমিক ৬ বর্গ কিলোমিটার) এলাকার জন্য প্রযোজ্য হবে এবং এটি স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক সংবাদ সম্মেলনে বাস বলেন, “অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বা ভাঙচুরের শিকার হয়েছে। গত রাতে, ২৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট হয়েছে এবং আমি মনে করি আপনি যদি ডাউনটাউন লস অ্যাঞ্জেলসের মধ্য দিয়ে গাড়ি চালান, তাহলে সর্বত্র গ্রাফিতি দেখতে পাবেন যা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বেশ কিছু সম্পত্তির উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “সুতরাং আপনাদের কাছে আমার বার্তা হলো- যদি আপনি ডাউনটাউন লস অ্যাঞ্জেলসে বসবাস না করেন বা কাজ না করেন, তাহলে এই এলাকা এড়িয়ে চলুন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কারফিউ ভঙ্গকারীদের গ্রেপ্তার করবে এবং তাদের বিচার করা হবে।”
মঙ্গলবারও লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ১৯৭ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। যা এর আগের দিনগুলোর মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যার দ্বিগুণ।
বাস জানান- কারফিউটি কয়েকদিন ধরে কার্যকর থাকতে পারে, তবে জোর দিয়ে বলেন যে এই নির্দেশ শুধুমাত্র শহরের একটি ছোট অংশের জন্য প্রযোজ্য।
মেয়র বাস বলেন, “আমি মনে করি এটি উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে যে ভাঙচুর ও সহিংসতা হয়েছে তা ১ বর্গমাইলের মধ্যেই ঘটছে- যা পুরো শহরকে প্রভাবিত করছে না। বিক্ষোভ ও সহিংসতার কিছু চিত্র এমনটা দেখাচ্ছে যে এটি একটি শহরব্যাপী সংকট, কিন্তু তা নয়।”
বাসের এই আদেশ এমন সময় এলো যখন সন্দেহভাজন নথিপত্রবিহীন অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযানের প্রতিবাদে লস অ্যাঞ্জেলসে টানা পঞ্চম রাত ধরে বিক্ষোভ চলছে এবং নিউ ইয়র্ক, শিকাগো ও আটলান্টা সহ ডজনখানেক মার্কিন শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
একই সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের ন্যাশনাল গার্ড ও মেরিন সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তের নিন্দাও জানিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার রাজ্য কর্মকর্তারা। তারা প্রেসিডেন্টকে তার ক্ষমতার অপব্যবহার এবং উত্তেজনা বাড়ানোর অভিযোগ করেছেন।
মঙ্গলবার রাতে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম রাজ্যের জনগণের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্পের সামরিক শক্তি ব্যবহারের তীব্র সমালোচনা করে এটিকে ‘ক্ষমতার নির্লজ্জ অপব্যবহার’ বলে অভিহিত করেছেন।
নিউসম বলেন, "তিনি (ট্রাম্প) ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করে পরিস্থিতিকে আরও উস্কে দিয়েছেন, এবং প্রেসিডেন্ট- তিনি এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে করেছেন।"
ট্রাম্প প্রশাসন তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সেনা মোতায়েন করায় এরই মধ্যে তিনি মামলাও দায়ের করেছেন।
নিউসম দাবি করেন, প্রেসিডেন্ট ‘হিংসাত্মক অপরাধীদের’ পরিবর্তে ‘থালাবাসন ধোয়ার কর্মী, মালী, দৈনিক শ্রমিক ও দর্জিদের’ লক্ষ্য করে একটি ‘সামরিক অভিযান’ শুরু করেছেন।
নিউসম আরও বলেন, “এটি কেবল দুর্বলতা – শক্তির ছদ্মবেশে দুর্বলতা। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার আমাদের সম্প্রদায়গুলোকে রক্ষা করছে না, উদ্দেশ্যমূলকভাবে তারা সম্প্রদায়গুলোকে বিপর্যস্ত করছে। ক্যালিফোর্নিয়া লড়াই চালিয়ে যাবে।”
তিনি যোগ করেন, “যদি আমাদের মধ্যে কিছু লোককে ওয়ারেন্ট ছাড়াই, কেবল সন্দেহ বা গায়ের রঙের ভিত্তিতে রাস্তা থেকে তুলে নেওয়া যায়, তাহলে আমাদের কেউই নিরাপদ নয়। কারণ স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা সবচেয়ে দুর্বল মানুষকে লক্ষ্য করে শুরু হয়। কিন্তু তারা সেখানেই থামে না।”