বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমাল বিশ্বব্যাংক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৫, ১৬:৩৭

বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০০৮ সালের পর থেকে মন্দার বাইরে এই বছর বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে দুর্বল হবে।
বিশ্বব্যাংক মঙ্গলবার ২০২৫ সালের বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস শূন্য দশমিক চার শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে দুই দশমিক তিন শতাংশ করেছে। সংস্থাটি বলেছে, উচ্চ শুল্ক ও অনিশ্চয়তা প্রায় সব অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বছরে দুবার প্রকাশিত ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস কমানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউরোপসহ ছয়টি উদীয়মান বাজার অঞ্চল। এসব পূর্বাভাস ছয় মাস আগের তুলনায় কম, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণ করেননি।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প বৈশ্বিক বাণিজ্যে অস্থিরতা এনেছেন। তিনি একের পর এক শুল্ক আরোপ করেছেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রের গড় শুল্কহার তিন শতাংশের নিচ থেকে বাড়তে বাড়তে এখন প্রায় শত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ‘মিড-টিনস’ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর জবাবে চীনসহ অন্য দেশগুলোও পাল্টা শুল্ক দিয়েছে।
বিশ্বব্যাংক ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমানো সর্বশেষ প্রতিষ্ঠান। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, বিনিয়োগ ও সম্ভাব্য করছাড়ের কারণে নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে ওঠা যাবে।
সংস্থাটি মন্দার পূর্বাভাস দেয়নি। তবে বলেছে, ২০০৮ সালের পর থেকে মন্দার বাইরে এই বছর বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে দুর্বল হবে। ২০২৭ সালের মধ্যে বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি গড়ে দাঁড়াবে দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ, যা ১৯৬০ সালের পর যেকোনো দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি হবে এক দশমিক আট শতাংশ, যা ২০২৪ সালের তিন দশমিক চার শতাংশের চেয়ে কম। এটি ২০০০ সালের দশকের পাঁচ দশমিক নয় শতাংশের এক-তৃতীয়াংশ। এই পূর্বাভাসে মে মাসের শেষ পর্যন্ত কার্যকর থাকা শুল্ক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ দেশের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। তবে এতে এপ্রিল মাসে ঘোষিত কিন্তু জুলাই ৯ পর্যন্ত স্থগিত রাখা নতুন শুল্ক যোগ করা হয়নি।
বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, ২০২৫ সালে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি হবে দুই দশমিক নয় শতাংশ, যা কোভিড-পূর্ব সময়ের চেয়ে বেশি থাকবে। এর পেছনে রয়েছে শুল্ক বৃদ্ধি ও শ্রমবাজারের চাপ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনীতির ঝুঁকি এখনও অনেক বেশি। যদি যুক্তরাষ্ট্র গড় শুল্ক আর ১০ শতাংশ পয়েন্ট বাড়ায় এবং অন্যান্য দেশ পাল্টা ব্যবস্থা নেয়, তাহলে ২০২৫ সালের প্রবৃদ্ধি আরও শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ পয়েন্ট কমে যেতে পারে।
বিশ্বব্যাংক বলেছে, যদি বাণিজ্য যুদ্ধ বাড়ে, তবে ২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে বিশ্ব বাণিজ্য থেমে যেতে পারে। এতে বিশ্বজুড়ে আস্থার সংকট, অনিশ্চয়তা এবং আর্থিক বাজারে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
তবুও বিশ্বব্যাংক বলেছে, বৈশ্বিক মন্দার ঝুঁকি ১০ শতাংশের কম।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই সপ্তাহে লন্ডনে বৈঠক করছেন। তারা বাণিজ্য দ্বন্দ্ব নিরসনে আলোচনা করছেন। এই দ্বন্দ্ব শুধু শুল্ক নয়, এখন দুর্লভ খনিজ নিষেধাজ্ঞার দিকেও গড়িয়েছে। এতে বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থা বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে পড়েছে এবং প্রবৃদ্ধি কমার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের উপপ্রধান অর্থনীতিবিদ আয়হান কোসে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, অনিশ্চয়তা এখন বড় বাধা হয়ে আছে। এটা যেন বিমানের রানওয়ের কুয়াশা। বিনিয়োগকে ধীর করে এবং ভবিষ্যৎকে অস্পষ্ট করে তোলে।
তবে তিনি বলেন, বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা বাড়ছে এবং সরবরাহব্যবস্থাও নতুন বৈশ্বিক বাস্তবতায় খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। ২০২৬ সালে বৈশ্বিক বাণিজ্যে সামান্য উন্নতি হতে পারে, প্রবৃদ্ধি হতে পারে দুই দশমিক চার শতাংশ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-এর অগ্রগতিও ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পারে।
তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, একসময় এই অনিশ্চয়তা কেটে যাবে। কুয়াশা কেটে গেলে বাণিজ্যের গাড়ি আবার চলবে, যদিও ধীর গতিতে।”
তিনি আরও বলেন, অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে, তবে বাণিজ্য চলছে। চীন, ভারত ও অন্য দেশ এখনো ভালো প্রবৃদ্ধি দিচ্ছে। অনেক দেশ নতুন বাণিজ্য অংশীদারত্ব নিয়ে আলোচনা করছে, যা ভবিষ্যতে সুফল দেবে।
বিশ্বব্যাংক বলেছে, দরিদ্র দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ২০২৭ সালের মধ্যে এসব দেশের মাথাপিছু জিডিপি মহামারির আগের চেয়ে ছয় শতাংশ কম থাকবে। চীন বাদে এসব দেশের অর্থনীতি ২০২০-এর দশকের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে দুই দশক সময় লাগবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল মেক্সিকোর প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এক দশমিক তিন শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে ২০২৫ সালে শূন্য দশমিক দুই শতাংশ ধরা হয়েছে।
চীনের পূর্বাভাস অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে চার দশমিক পাঁচ শতাংশে। বিশ্বব্যাংক বলেছে, চীনের এখনও মুদ্রানীতির এবং রাজস্ব নীতির মাধ্যমে অর্থনীতিকে সহায়তা দেওয়ার সুযোগ আছে।