Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতি ‘নিবেদিতপ্রাণ’ বিবিসি

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ১৫:৩৭

গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতি ‘নিবেদিতপ্রাণ’ বিবিসি

বিবিসির বিরুদ্ধে ইসরায়েলপন্থী অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ করেছে সিএফএমএম।

গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান নিয়ে প্রতিবেদন করতে গিয়ে পদ্ধতিগত ভাবে ফিলিস্তিনিদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ব্যাপক হতাহতের পরেও তারা ফিলিস্তিনিদের উপেক্ষা করে ইসরায়েলের বেদনা ও দাবিকেই প্রাধান্য দিয়েছে।  

ইসলাম নিয়ে সংবাদ প্রকাশকারী বিশেষায়িত ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর মিডিয়া মনিটরিংয়ের (সিএফএমএম) নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন চিত্রই ফুটে উঠেছে।   

মানবিক গল্পে গুরুত্ব পায়নি ফিলিস্তিনিরা

সোমবার প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৬ অক্টোবর পর্যন্ত সময়কালের বিবিসির করা ৩৫ হাজারেরও  বেশি সংবাদ প্রতিবেদন ও সম্প্রচার বিশ্লেষণ করে তারা এই মূল্যায়নে এসেছে।

গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিবিসি প্রতি ইসরায়েলি মৃত্যুকে ফিলিস্তিনি মৃত্যুর তুলনায় ৩৩ গুণ বেশি কভারেজ দিয়েছে।

অথচ এই সময়সীমার মধ্যে ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২৪৬ জন, যেখানে গাজায় নিহত হয়েছিল অন্তত ৪২ হাজার ১০ জন- অর্থ্যাৎ ৩৪ গুণ বেশি।

সেখানে মানবিক বা ভুক্তভোগীদের জীবনগল্প তুলে ধরা হয়েছে ২৭৯ জন ফিলিস্তিনি ও ২০১ জন ইসরায়েলির। যা প্রায় সমান সংখ্যাই।

গবেষণায় উঠে আসে, বিবিসি ইসরায়েলি ভুক্তভোগীদের নিয়ে চার গুণ বেশি আবেগঘন শব্দ ব্যবহার করেছে। ‘গণহত্যা’ শব্দটি তারা ইসরায়েলি হতাহতের ক্ষেত্রে ১৮ গুণ বেশি প্রয়োগ করেছে এবং ‘হত্যা’ শব্দটি ২২০ বার ইসরায়েলিদের ক্ষেত্রে, অথচ মাত্র একবার ব্যবহার হয়েছে ফিলিস্তিনিদের ক্ষেত্রে।

ভাষা ও কাঠামো যখন ধারাবাহিকভাবে এক পক্ষকে অগ্রাধিকার দেয়, তখন জনসাধারণ সত্য থেকে বঞ্চিত হয়। আমাদের এই গবেষণা বিশ্বাসের নয়, প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে- রিজওয়ানা হামিদ

বিবিসির উপস্থাপকরা অন্তত ১০০-র বেশি বার ‘গণহত্যা’ সংক্রান্ত অভিযোগ উপেক্ষা করেছেন বা তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করেছেন।

নেতানিয়াহুর ‘আমালেক’ বয়ানেও নিশ্চুপ বিবিসি

ইসরায়েলি নেতাদের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে দেওয়া গণহত্যামূলক বক্তব্য- যেমন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘আমালেক’ মন্তব্য নিয়ে বিবিসিতে একবারও আলোচনা করা হয়নি।

আমালেক হলো ইহুদি, খ্রিস্টান ও ইসলামি ধর্মগ্রন্থে উল্লেখিত একটি প্রাচীন জাতি বা গোষ্ঠী। ইহুদি ধর্মে আমালেকিদের ধরা হয় ইসরায়েলিদের চিরশত্রু হিসেবে।

বর্তমান সময়ে ইসরায়েলি নেতারা, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, কখনো কখনো হামাস বা গাজাবাসীদের ‘আমালেক’ বলে আখ্যা দেন। যার অর্থ দাঁড়ায়, তারা ঈশ্বরের শত্রু এবং তাদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ ও ন্যায়সংগত।

এ ধরণের বক্তব্য গাজায় নির্বিচারে গণহত্যার একটি ধর্মীয় অনুমোদন তৈরি হয়। যা গণহত্যাকে উস্কে দেওয়ার মতো এবং এটি আন্তর্জাতিক অপরাধের আওতায় পড়ে।

স্বয়ং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী এমন গণহত্যায় উস্কানি দেওয়ার পরেও বিবিসি এই ইস্যুতে নিরব থেকেছে।

সাক্ষাৎকারে প্রাধান্য পেয়েছে ইসরায়েলিরা

প্রতিবেদনে আরও উঠে আসে, বিবিসির টিভি ও রেডিও প্রোগ্রামে ইসরায়েলি অতিথিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে দ্বিগুণের বেশি- ২ হাজার ৩৫০ জন। ফিলিস্তিনি অতিথিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৮৫ জনের।

আবার বিবিসির উপস্থাপকরা ইসরায়েলি দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন ২ হাজার ৩৪০ বার- যেখানে ফিলিস্তিনি দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে মাত্র ২১৭ বার। যা ১১ গুণ বেশি।

যা বলছে, সিএফএমএম ও রাজনীতি সচেতনরা

ফিলিস্তিনি জনগণের যন্ত্রণা, বাস্তবতা ও কণ্ঠ চেপে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েলের দাবি, বেদনা ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত ভাষ্যকে তুলে ধরা হয়েছে গুরুত্বসহকারে। বিবিসির গাজার সংকট কাভারেজ নিয়ে এমনই মূল্যায়ন সেন্টার ফর মিডিয়া মনিটরিংয়ের।

সিএফএমএমের পরিচালক রিজওয়ানা হামিদ বলেন, “ভাষা ও কাঠামো যখন ধারাবাহিকভাবে এক পক্ষকে অগ্রাধিকার দেয়, তখন জনসাধারণ সত্য থেকে বঞ্চিত হয়। আমাদের এই গবেষণা বিশ্বাসের নয়, প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে।”

‘দ্য রেস্ট ইজ পলিটিক্স’ পডকাস্টের সহ-উপস্থাপক আলিস্টার ক্যাম্পবেল বলেন, “ইসরায়েল ও ডানপন্থি মিডিয়া খুব দক্ষভাবে প্রচার করেছে যে, বিবিসি নাকি ফিলিস্তিনিদের পক্ষে পক্ষপাতদুষ্ট। অথচ এই রিপোর্ট পুরোপুরি উল্টোটা বলছে। বিবিসির নেতৃত্ব স্তরে পক্ষপাত রয়েছে ইসরায়েলি বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডকে ন্যায্যতা দেওয়ার দিকেই।”

যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক কো-চেয়ার ব্যারোনেস সাঈদা ওয়ারসি বলেন, “এই শক্তিশালী গবেষণা দেখিয়েছে, গাজা যুদ্ধকালে বিবিসি ধারাবাহিকভাবে ইসরায়েলি ব্যথা ও দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাধান্য দিয়েছে, ফিলিস্তিনি জীবন ও কণ্ঠকে আড়াল করেছে। এটি কোনো বাছাই করা সমালোচনা নয় বরং একটি পরিপূর্ণ ও তথ্যনির্ভর অভিযোগ।”

গবেষণাটিকে বিবিসির জন্য একটি কঠিন আত্মসমালোচনার আহ্বান হিসেবেই দেখাটা যুক্তিসংগত। যদি ‘নিরপেক্ষতা’কে বিবিসি তার সাংবাদিকতার ভিত্তি বলে দাবি করে, তবে এই গবেষণার ফলাফলের দিকে আন্তরিকভাবে মনোযোগী হওয়া উচিত।  

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫