ইরানের নাগরিকদের তাদের স্মার্টফোন থেকে বার্তা আদান-প্রদানকারী অ্যাপ ‘হোয়াটসঅ্যাপ’ মুছে ফেলার আহবান জানিয়েছে ইরানের সরকার। মঙ্গলবার ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আইআরআইবি জনগণের উদ্দেশ্য তারা এই কথা প্রচার করে।

লন্ডনভিত্তিক ফার্সি ভাষার সংবাদমাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ইরান অভিযোগ করে যে অ্যাপটি ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করে ইসরায়েলে পাঠাচ্ছে, যদিও এই দাবির পক্ষে কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ এক বিবৃতিতে জানায়, “এই মিথ্যা প্রতিবেদনগুলো নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন, কারণ তারা এমন সময়ে আমাদের সেবা বন্ধ করতে চাচ্ছে যখন  মানুষের আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।”

হোয়াটসঅ্যাপ জানায়, তাদের বার্তাসেবা 'এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন' এর মাধ্যমে সুরক্ষিত। যার মানে হচ্ছে মেসেজটি শুধুমাত্র প্রেরক এবং প্রাপকই দেখতে পারেন। মাঝখানে কেউ বার্তাটি ধরলেও তা শুধু এলোমেলো অক্ষর হিসেবে দেখা যাবে- যা ডিকোড করা সম্ভব নয়।

তারা আরও জানায়, “আমরা আপনার নির্দিষ্ট অবস্থান ট্র্যাক করি না, আমরা কারা কাকে মেসেজ দিচ্ছে সে বিষয়ে কোনো হিসাব রাখি না এবং ব্যক্তিগত মেসেজগুলো ট্র্যাক করি না। কোনো সরকারের কাছে আমরা গুচ্ছ আকারে তথ্য সরবরাহও করি না।”

যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ও সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ গ্রেগরি ফ্যালকো বলেন, হোয়াটসঅ্যাপে কিছু মেটাডেটা এনক্রিপ্ট না হলেও তা বিশ্লেষণ করে ব্যবহার প্যাটার্ন বোঝা সম্ভব।

তিনি বলেন, “এই বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্কিত, যার কারণে অনেকে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার থেকে বিরত থেকেছেন।”

ফ্যালকো আরও বলেন, ‘ডেটা সার্বভৌমত্ব’ ও একটি বড় বিষয়। হোয়াটসঅ্যাপের তথ্য যেখানে সংগ্রহ করা হয়, তা সেই দেশের মধ্যেই সংরক্ষণ করা নাও হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ইরানের ব্যবহারকারীদের তথ্য ইরানেই রাখা হচ্ছে এমন নিশ্চয়তা নেই।

তিনি বলেন, “দেশগুলোর উচিত নিজস্ব ভূখণ্ডে ডেটা সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। কারণ বৈশ্বিক তথ্য অবকাঠামোর ওপর নির্ভরতা দিনে দিনে আরও অনির্ভরযোগ্য হয়ে উঠছে।”

হোয়াটসঅ্যাপ প্রযুক্তি কোম্পানি মেটার আওতাধীন একটি মেসেজিং সেবা। এই কোম্পানিটি ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামেরও মালিক।

ইরান গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তবে বহু মানুষ প্রক্সি ও ভিপিএন ব্যবহার করে এসব প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করে থাকেন।