Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের ‘জুয়া খেলার’ পর ইরানের জবাবের অপেক্ষায় বিশ্ব

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫, ১২:৫৯

ট্রাম্পের ‘জুয়া খেলার’ পর ইরানের জবাবের অপেক্ষায় বিশ্ব

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইসরায়েলের তেল আবিবের একটি এলাকা।

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার সিদ্ধান্তকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জুয়া খেলা হিসেবে অভিহিত করেছে বৈশ্বিক গণমাধ্যমগুলো। এবার প্রশ্ন উঠেছে, ইরান কীভাবে এই হামলার জবাব দেবে? ইতোমধ্যেই বৈশ্বিক তেল সরবরাহের অন্যতম সমুদ্রপথ হরমুজ প্রণালী বন্ধের অনুমোদন দিয়েছে ইরানের পার্লামেন্ট। এখন এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার দেশটির নিরাপত্তা পরিষদের।

শনিবার অত্যাধুনিক বোমারু বিমান দিয়ে ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এটি ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে ইরানের ওপর সবচেয়ে বড় পশ্চিমা সামরিক হামলা।

ইরানের ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনার ওপর ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের মার্কিন বাংকার-বাস্টার বোমা ফাটার পর স্যাটেলাইট থেকে ক্ষতির দৃশ্য দেখা যায়। তেহরান প্রতিজ্ঞা করেছে, তারা যেকোনো মূল্যে আত্মরক্ষা করবে। এরপর ইরান ইসরায়েলে আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যা তেল আবিবে অনেক ভবন ধ্বংস করে দেয় ও অনেক মানুষকে আহত করে।

তবে হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ এড়ানোর জন্য ইরান এখনও তার বড় ধরনের প্রতিশোধের হুমকি বাস্তবায়ন করেনি। এর মধ্যে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোতে হামলা বা বিশ্বজুড়ে তেল সরবরাহ বন্ধের চেষ্টা।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেন, “তেহরান সব ধরনের প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করবে। প্রতিশোধ নেওয়ার আগে কোনো কূটনৈতিক আলোচনায় ফেরা হবে না। যুক্তরাষ্ট্র দেখিয়েছে যে তারা আন্তর্জাতিক আইনকে সম্মান করে না। তারা কেবল হুমকি ও শক্তির ভাষা বোঝে।”

টেলিভিশনে ভাষণ দিয়ে ট্রাম্প এই হামলাকে ‘একটি চমৎকার সামরিক সাফল্য’ বলে ঘোষণা করেছেন।

তিনি বলেন, “ইরানের মূল পারমাণবিক সমৃদ্ধিকরণ স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দাদাগিরি করা ইরান এখন শান্তি স্থাপন করুক। না হলে ভবিষ্যতের হামলা আরও ভয়াবহ ও সহজ হবে।”

তবুও ট্রাম্প প্রশাসন জোর দিয়ে বলেছে, এই হামলার উদ্দেশ্য ইরানের সরকার পতন নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেন, “এই অভিযান ছিল নির্ভুলভাবে পরিকল্পিত, যা আমাদের জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে থাকা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে নিরস্ত করার জন্য পরিচালিত হয়েছে।”

ইরানের সবচেয়ে কার্যকর হুমকি হরমুজ প্রণালি বন্ধ করা নিয়ে একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেশটির সংসদ একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এই প্রণালি দিয়ে বিশ্বে ব্যবহৃত প্রায় এক চতুর্থাংশ তেল সরবরাহ হয়।

তবে ইরানের প্রেস টিভি বলেছে, প্রণালি বন্ধ করার জন্য সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন লাগবে, যার নেতৃত্বে আছেন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনির নিযুক্ত একজন।

এই প্রণালি বন্ধের ফলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম আকাশছোঁয়া হতে পারে। বৈশ্বিক অর্থনীতিও ধ্বংস হতে পারে। এটি মার্কিন নৌবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ নিশ্চিত করবে, যাদের কাজ হলো এই পথ খোলা রাখা।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেন, ইরান যদি প্রতিশোধ নেয়, তাহলে সেটা হবে ‘তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল’।

তিনি সিবিএসকে বলেন, “আমাদের অন্য লক্ষ্যও আছে, কিন্তু আমরা আমাদের উদ্দেশ্য পূরণ করেছি। ইরানের বিরুদ্ধে এখনই আর কোনো সামরিক অভিযান পরিকল্পনা করা হয়নি-যদি না তারা আবার কিছু করে বসে।”

ইরানিরা রয়টার্সকে বলেন, যুদ্ধ বড় আকার ধারণ করবে কি না সেটি নিয়ে তারা খুব ভয়ে আছেন।

কাশানের এক শিক্ষিকা বিতা বলেন, “আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। পালানোর কোনো পথ নেই-এটা যেন কোনো ভয়ের সিনেমার মতো।”

তেহরানের অনেক বাসিন্দা শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। ইরান বলেছে, ইসরায়েলের হামলায় ৪০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ।

ইরানও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে, যার ফলে গত নয় দিনে ২৪ জন মারা গেছে। এই প্রথম এতগুলো ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ভেদ করে ঢুকেছে।

রাতের বেলায় ৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার দাবি করেছে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী।

ইসরায়েলের অধিকাংশ এলাকায় রবিবার সাইরেন বেজে ওঠে, লাখ লাখ মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে যায়।

তেল আবিবের বাসিন্দা অবিয়াদ চেরনোভস্কি বোমা শেল্টার থেকে বেরিয়ে দেখেন তার বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। 

তিনি বলেন, “এখন ইসরায়েলে থাকা সহজ নয়, কিন্তু আমরা খুব শক্তিশালী। আমরা জানি যে জিতব।”

ট্রাম্প একদিকে যুদ্ধ থামাতে কূটনীতির কথা বলেছিলেন। আবার কখনও ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে হত্যার কথাও ভাবছিলেন। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল তার সবচেয়ে বড় ‘পররাষ্ট্রনীতির জুয়া’।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫