Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির সুবাতাস বইবে?

Icon

মো. ইমরানুর রহমান

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৫, ১৭:৫৮

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির সুবাতাস বইবে?


টানা ১২ দিনের সংঘাত শেষে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ইরান ও ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই প্রথম বিষয়টি সামনে আনেন। অনেকটা নিজেই এর কৃতিত্ব দাবি করেছেন। নেটিজেনদের অনেকেই ভাবছেন, এই যুদ্ধবিরতিতে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির সুবাতাস বইবে। আসলেই কি তাই?

ট্রাম্প যতই তার পোস্টে বলুক, যুদ্ধবিরতি স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার দিকে নিয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এই যুদ্ধবিরতি টেকসই হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। ইসরায়েল যে অভিযোগে ইরানে হামলা করেছে, তা হলো দেশটিকে তার পারমাণবিক উচ্চাভিলাষ ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির উন্নয়ন করা থেকে বিরত থাকা। কিন্তু তেহরানের পক্ষ থেকে এমন কোনো প্রতিশ্রুতিই মেলেনি, যেখানে দেশটি পরমাণু কর্মসূচি বা ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন পরিত্যাগ করার কথা বলেছে। উল্টো ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার শেষ মুহূর্তেও ছয় ধাপে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এতে অন্তত পাঁচ জন নিহত এবং ২০ জনের বেশি আহত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে ঠিক কতজন চাপা পড়েছে, বলতে পারছেন না ইসরায়েলের জরুরি বিভাগের কর্মীরাও। ফলে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। 

এ ছাড়া ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর টানা বোমা হামলায়ও ইরানের পরমাণু প্রকল্পের খুব একটা ক্ষতি হয়নি। কারণ তাদের প্রকল্পগুলোর স্পর্শকাতর অংশগুলো সবই ভূগর্ভস্থ। ইসরায়েলের কাছে থাকা প্রচলিত সমরাস্ত্র দিয়ে এগুলো ধ্বংস করা কঠিন। পশ্চিমা সমর বিশ্লেষকরাও এটি স্বীকার করেছেন। পরে ফোরদোসহ তিনটি পরমাণু প্রকল্পে বি-টু বোম্বার ব্যবহার করে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে হামলার পরও পরমাণু প্রকল্পগুলো থেকে তেজস্ক্রিয় লিকেজ হয়নি। ফোরদো প্রকল্প যে কোম শহরে অবস্থিত, হামলার রাতেও শহরবাসী দৈনন্দিন রুটিনে সময় অতিবাহিত করেছে। 

তেজস্ক্রিয় লিকেজ যে হয়নি সে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা আইএইএ। সৌদি আরবও জানিয়েছে, উপসাগরীয় কোনো দেশ থেকেই তেজস্ক্রিয়তার কোনো প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। পরে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মহাকাশ গবেষণা ও স্যাটেলাইট প্রতিষ্ঠান মাক্সারের প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, ফোরদোতে বিমান হামলা চালানোর আগেই ১৯-২০ জুন সারিবদ্ধ ১৫টি ট্রাক সেখান থেকে কৌশলগত উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামসহ প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে যায়। তেহরানও আগেই জানিয়েছে, স্পর্শকাতর উপাদান তারা সরিয়ে নিয়েছে। ইউরেনিয়াম রিজার্ভ অক্ষত রেখে এবং পরমাণু কর্মসূচি পরিচালনার অধিকার নিয়েই যুদ্ধবিরতিতে যাওয়াটা তেহরানের জন্য একটি বড় বিজয়।

পেন্টাগনের প্রাথমিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনও এক অর্থে অভিযানকে ব্যর্থ বলছে। যদিও ট্রাম্প এই গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। এ ছাড়া শেষ মুহূর্তেও ইসরায়েলে ইরান যে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে, তাতে স্পষ্ট হয়ে গেছে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ চালানোর মতো ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার ইরানের কাছে অটুটই আছে। 

এসব বিষয় বিবেচনা করলে দেখা যাচ্ছে, ইসরায়েল তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে তারা আবার হামলা চালাতে পারে। বিষয়টি আঁচ করেছেন ট্রাম্পও। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি অনুরোধের সুরে বলেছেন, ‘অনুগ্রহ করে কেউ যেন যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন না করে।’ হ্যাঁ, ইসরায়েলকে সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব ও আরব দেশগুলো। ফলে সংঘাতে ইরানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অনেক বেশি। সে ক্ষেত্রে বলা যায়, ইসরায়েল হয়তো সামরিকভাবে জয়ী হয়েছে; কিন্তু লক্ষ্যগুলো অর্জন না করায় তার রাজনৈতিক পরাজয় ঘটেছে। 

একই সঙ্গে ইরানের সামরিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। বিশেষ করে দেশটি তার প্রায় সব সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাকে এই যুদ্ধে হারিয়েছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫