Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

সার্বিয়ায় ‘তীব্র’ হচ্ছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ

Icon

মো. ইমরানুর রহমান

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১৫:১১

সার্বিয়ায় ‘তীব্র’ হচ্ছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ

সার্বিয়ায় সরকারবিরোধী আন্দোলন আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে। রাজধানী বেলগ্রেডসহ দেশজুড়ে হাজার হাজার মানুষ সড়ক অবরোধ গড়ে তুলেছে, বিশেষ করে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে, যেখানে বিক্ষোভকারীরা লোহার বেড়া ও ময়লার ডাস্টবিন দিয়ে পথঘাট আটকে দিয়েছে। আন্দোলনকারীরা সাভা নদীর ওপর গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতুও বন্ধ করে দিয়েছে। এর আগে ২৮ জুন রাতে বেলগ্রেডে ছাত্র নেতৃত্বাধীন এক বিরাট সমাবেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় বিক্ষোভকারীরা। এরপরই বেশ কিছু আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করে নিরাপত্তা বাহিনী। সেই ঘটনার প্রতিবাদে নতুন করে রাস্তায় নামে সাধারণ মানুষ।

সমাবেশের আনুষ্ঠানিক অংশ শেষ হওয়ার পর সহিংসতা শুরু হয়। পুলিশ টিয়ার গ্যাস, লাঠিপেটা ও ঢাল ব্যবহার করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে চেষ্টা করে। অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা ইট-পাথর, বোতল ও অন্যান্য বস্তু ছোড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, সংঘর্ষে ৪৮ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত ৭৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৮ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ছোট ছোট শহরেও একই ধরনের বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ হয়েছে। আন্দোলনকারীরা গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থীসহ সবাইকে অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা এবং সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। 

বিক্ষোভকারীরা ‘আমরা নির্বাচন চাই’ স্লোগানে স্লোগানে পরিবেশ উত্তপ্ত করে তোলে। তাদের হাতে সার্বিয়ার বিভিন্ন নগর ও শহরের নামের পোস্টার দেখা যায়। ছয় মাসের বেশি সময় ধরে শিক্ষার্থীরা সার্বিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অবরোধ করে রেখেছেন, দেশজুড়ে বড় বড় বিক্ষোভের আয়োজন করেছেন এবং নিহতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন।

দেশটির প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভুসিক বিক্ষোভের আয়োজকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। তিনি আন্দোলনকারীদের কার্যকলাপকে ‘সন্ত্রাস’ বলেও অভিহিত করেন।

যেভাবে এই বিক্ষোভের শুরু

ভুসিক ২০১২ সালে উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসার পর ধাপে ধাপে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করে তুলেছেন বলে অভিযোগ বিরোধীদের। তারা বলছে, তিনি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল করে দিয়েছেন এবং দুর্নীতি ও সংঘটিত অপরাধকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। ভুসিক এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এই বিক্ষোভের সূচনা ঘটে গত নভেম্বর মাসে নোভি সাদ শহরের একটি ট্রেন স্টেশনের ছাদ ধসে ১৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে। এই দুর্ঘটনার জন্য ব্যাপকভাবে সরকারের দুর্নীতিকে দায়ী করা হয়।

ঘটনার জেরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিলোস পদত্যাগ করলেও ক্ষমতাসীন দলই সরকার গঠন করে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভুসিক বহাল থাকেন। ২৮ জুনের বিক্ষোভ ছিল গত আট মাসের ধারাবাহিক আন্দোলনের সবচেয়ে বড় সমাবেশগুলোর একটি। সরকার দাবি করেছে, সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন প্রায় ৩৬ হাজার মানুষ। তবে স্বাধীন সংগঠন আর্কাইভ অব পাবলিক গ্যাদারিংস জানায়, এই সংখ্যা ছিল অন্তত এক লাখ ৪০ হাজার।

আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও অভিযোগ

ভুসিক অভিযোগ করেছেন, বিক্ষোভকারীরা ‘রক্তপাত ঘটানোর উদ্দেশ্যেই’ মাঠে নেমেছে এবং ‘রাষ্ট্র ধ্বংসের চেষ্টা চালাচ্ছে।’ তিনি ইউনিভার্সিটি অব বেলগ্রেডের প্রধান ডিন ভ্লাদান জোকিচের নাম নিয়ে বলেন, তিনিও এই ষড়যন্ত্রে জড়িত। তবে আন্দোলনকারীরা সরকারের ওপরই সহিংসতার দায় চাপিয়ে দিয়েছে এবং তাদের দাবি, এই সরকার ‘অবৈধ’।

প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে আয়োজকরা একটি রেকর্ডকৃত বার্তা বাজিয়ে জনগণকে ‘নিজের হাতে স্বাধীনতা তুলে নেওয়ার’ আহ্বান জানান এবং বলেন, ‘চাহিদা পূরণে সরকার যথেষ্ট সময় ও সুযোগ পেয়েছে, কিন্তু তারা চায়নি সংঘর্ষ এড়াতে।’

তবে প্রেসিডেন্ট ভুসিক সংবিধান ও সরকার কাঠামো অপরিবর্তিত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ২৯ জুন তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, পদত্যাগের প্রশ্নই ওঠে না এবং ২০২৬ সালের আগে দেশে কোনো জাতীয় নির্বাচন হবে না। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, বিক্ষোভগুলো ‘বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ’, যদিও এর পক্ষে কোনো প্রমাণ তিনি উপস্থাপন করেননি।

আন্তর্জাতিক অবস্থান

সার্বিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যপদ পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই। তবে ভুসিকের নেতৃত্বাধীন সরকার রাশিয়া ও চীনের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। এমন অবস্থানের কারণে দেশটি অনেক ইউরোপীয় দেশের বিরাগভাজন হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আন্দোলনকারীদের ওপর 

দমন-পীড়ন বেড়েছে। একের পর এক গ্রেপ্তার এখন রুটিন ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আন্দোলনকারীরা বলছে, তবুও তারা লড়াই চালিয়ে যাবে। এখন সময় এসেছে, সার্বিয়ার ভবিষ্যৎ নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার। এমন পরিস্থিতিতে আন্দোলন আরো তীব্র হলে ইউরোপীয় অনেক দেশই আন্দোলনকারীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে যেতে পারে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫