Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

থমকে গেছে গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা, রাফায় গুলিতে নিহত ১৭

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ১৮:১২

থমকে গেছে গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা, রাফায় গুলিতে নিহত ১৭

গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে নিহত একজনের স্বজনদের আহাজারি।

ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে কাতারের দোহায় চলমান আলোচনায় অগ্রগতি থমকে গেছে। মূল বিরোধ এখনও ইসরায়েলি বাহিনীর প্রত্যাহার নিয়ে বলে নিশ্চিত করেছে আলোচনার সঙ্গে জড়িত ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি সূত্র।

মার্কিন প্রস্তাবিত ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে পরোক্ষ আলোচনা শনিবারও চলে, যা আজ সাত দিনে গড়াল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, এই নতুন প্রস্তাবের ভিত্তিতে শিগগিরই অগ্রগতি হবে।

এই সময়েই শনিবার রাফায় খাদ্য সহায়তা নিতে যাওয়া মানুষদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে ১৭ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন গাজায় স্বাস্থ্যকর্মীরা। গত ছয় সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত এই বিতর্কিত ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থার আশেপাশে গুলিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮০০ ছাড়িয়েছে। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, অনেককে মাথা ও বুকে গুলি করা হয়েছে। রাফার নাসের হাসপাতালে নিহতদের মরদেহ সাদা কাফনে মোড়ানো ছিল। পরিবারের মানুষজন কাঁদছিলেন। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা শুধু সতর্কতামূলক গুলি চালিয়েছে এবং তাদের তদন্তে কেউ আহত হওয়ার প্রমাণ মেলেনি।

এই মুহূর্তে কাতারে ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিরা ধাপে ধাপে যুদ্ধ শেষ করার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনায় বসেছেন। এতে জিম্মি বিনিময়, সেনা প্রত্যাহার ও যুদ্ধ সমাপ্তির রাজনৈতিক রূপরেখা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

তবে ইসরায়েলি এক কর্মকর্তা হামাসকেই দোষারোপ করে বলেন, “তারা এখনও অনড়। তাদের অবস্থান মধ্যস্থতাকারীদের সামনে কোনো অগ্রগতি আনতে দিচ্ছে না।” 

হামাস বরাবরই ইসরায়েলকেই দোষারোপ করে আসছে।

ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েল যেসব প্রত্যাহার মানচিত্র প্রস্তাব করেছে, তাতে গাজার প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকাজুড়ে ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকবে। বিশেষত রাফার দক্ষিণ ও গাজার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। হামাস এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। 

দুটি ইসরায়েলি সূত্র জানিয়েছে, হামাস চায় ইসরায়েল যেন সেই সীমারেখায় ফিরে যায়, যা পূর্ববর্তী যুদ্ধবিরতির সময় ছিল।

ফিলিস্তিনি পক্ষ জানায়, শুধু সেনা প্রত্যাহার নয়—যুদ্ধ শেষের নিশ্চয়তা ও পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তাও বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরও সক্রিয় মার্কিন হস্তক্ষেপে অচলাবস্থা কাটানো সম্ভব বলে মনে করছে তারা।

হামাস বহুদিন ধরেই বলে আসছে, যুদ্ধ শেষের চুক্তি ছাড়া তারা বাকি জিম্মিদের মুক্তি দেবে না। আর ইসরায়েল চায়, সব জিম্মি ছাড়া এবং হামাস পুরোপুরি নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে।

রাফায় গুলি

শনিবার রাফার খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছে গুলিতে ১৭ জন নিহতের ঘটনায় আরও একবার স্পষ্ট হলো, এই বিতরণ ব্যবস্থার ঝুঁকি কতটা বিপজ্জনক। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের হিসেবে, গত ছয় সপ্তাহে খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে গুলিতে ৭৯৮ জন নিহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী মাহমুদ মাকরেম রয়টার্সকে বলেন, “আমরা বসে ছিলাম, হঠাৎ করে গুলি শুরু হলো। টানা পাঁচ মিনিট গুলি চলল। টার্গেট করে গুলি চালানো হয়। কেউ মাথায়, কেউ বুকে, আমার পাশের লোকটা হৃদয়ে গুলি খেয়ে মরে যায়। কোনো দয়া নেই এখানে। মানুষ ক্ষুধায় যায়, আর ফেরে লাশ হয়ে।”

মে মাসের শেষদিকে ইসরায়েল সব ধরনের পণ্য নিষেধাজ্ঞা আংশিকভাবে তুলে নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত এক এনজিওর মাধ্যমে নতুন ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা চালু করে। তাতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নিরাপত্তা দিচ্ছে। জাতিসংঘ এই ব্যবস্থাকে ‘মানবিক নিরপেক্ষতার লঙ্ঘন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ইসরায়েলে প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হন এবং ২৫১ জনকে গাজায় জিম্মি করা হয়। এখনও প্রায় ৫০ জন জিম্মির মধ্যে অন্তত ২০ জন জীবিত বলে ধারণা।

গাজা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলি অভিযান শুরু হওয়ার পর গাজায় ৫৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। গাজা এখন কার্যত ধ্বংসস্তূপ। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ২০ লাখের বেশি মানুষ। একই সঙ্গে চরমে পৌঁছেছে মানবিক সংকট।

এ অবস্থায় শনিবার ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবে কয়েক হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন যুদ্ধবিরতির দাবিতে। তাদের একটাই দাবি—সব জিম্মির মুক্তি এবং যুদ্ধের অবসান।

বিক্ষোভকারীদের একজন বোয়াজ লেভি রয়টার্সকে বলেন, “আমরা এখানে সরকারকে চাপ দিতে এসেছি, যেন দ্রুত একটি চুক্তিতে পৌঁছে যাওয়া যায়। আমাদের ভাই-বোনেরা এখনও গাজায় বন্দি, আর এই যুদ্ধ থামানোর সময় এখনই।”

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫