একই দিনে জেলেনস্কি ও ইইউ নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের অনলাইন বৈঠক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৫, ১৪:০৩

প্রতীকী ছবি।
আলাস্কায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যেকার শীর্ষ বৈঠকের আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা ট্রাম্পের সঙ্গে একটি অনলাইন বৈঠক করবে বলে বুধবার প্রতিবেদন করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ।
এই বৈঠকের মূল লক্ষ্য হলো, পুতিনের সঙ্গে আলোচনার সময় ইউক্রেনের স্বার্থ যেন কোনোভাবেই ক্ষুণ্ণ না হয়, তা নিশ্চিত করতে ট্রাম্পের ওপর চাপ সৃষ্টি করা।
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মার্জের উদ্যোগে আয়োজিত এই ভার্চুয়াল সম্মেলনে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ডসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের নেতারা এবং ন্যাটো ও ইইউ-এর প্রধানরা অংশ নেবেন।
ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা ট্রাম্পকে মনে করিয়ে দিতে চায় যে, ইউক্রেনকে ছাড়া ইউক্রেন সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না, বিশেষ করে যখন বিষয়টি তার সার্বভৌমত্ব ও সামরিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সীমান্ত পরিবর্তনের মতো স্পর্শকাতর।
এই আলোচনা এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন ট্রাম্প প্রকাশ্যে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি স্থাপনের জন্য ‘কিছু ভূখণ্ড বিনিময়ের’ কথা বলেছেন।
এই মন্তব্য কিয়েভ এবং ইউরোপীয় রাজধানীতে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করেছে। তাদের আশঙ্কা, এর মাধ্যমে রাশিয়াকে শক্তি প্রয়োগ করে ইউক্রেনের সীমান্ত পুনর্নির্ধারণের সুযোগ দেওয়া হতে পারে।
বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড দখল করে রেখেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, পুতিনের অন্যতম প্রধান দাবি হলো, ইউক্রেন যেন পূর্বাঞ্চলীয় দোনবাস অঞ্চলের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেয়।
দোনবাস, যা লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত, ২০১৪ সাল থেকেই আংশিকভাবে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এই ধরনের কোনো ছাড়ের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, এ ধরনের কোনো ছাড় রাশিয়াকে ভবিষ্যতে নতুন করে আক্রমণের জন্য একটি কারণ তৈরি করে দেবে।
জেলেনস্কি দেশের সংবিধানের কথা উল্লেখ করে পুনর্ব্যক্ত করেন যে, ইউক্রেনের ভূখণ্ডগত কোনো পরিবর্তনে অবশ্যই গণভোটের প্রয়োজন হবে এবং ইউক্রেনীয়রা তাদের ভূমি দখলদারের হাতে উপহার দেবে না।
এদিকে, ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের আগে রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনে নিজেদের সামরিক শক্তি প্রদর্শন করছে। সাম্প্রতিক এক অভিযানে রাশিয়ান সেনারা পূর্বাঞ্চলীয় শহর ডোব্রোপিলিয়ার কাছে প্রায় ১০ কিলোমিটার অগ্রসর হয়েছে।
জেলেনস্কি এই অগ্রযাত্রাকে বড় করে না দেখলেও একে রাশিয়ার একটি তথ্যগত পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেছেন, যার মাধ্যমে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের আগে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থানে দেখানো যায়।
হোয়াইট হাউস মঙ্গলবার জানিয়েছে, আলাস্কার বৈঠকটি হবে ট্রাম্পের জন্য একটি শোনার সুযোগ ও পুতিনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা তাকে যুদ্ধ শেষ করার সেরা উপায় খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে।
এর আগে সোমবার ট্রাম্প নিজেও বৈঠকটিকে একটি ‘অনুভূতি যাচাইয়ের’ সভা হিসেবে বর্ণনা করেন এবং ইঙ্গিত দেন যে শুক্রবারের আলোচনায় বড় কোনো অগ্রগতির আশা করা কঠিন।
তবে তিনি এও বলেছেন, “আমার অন্তর্দৃষ্টি বলছে যে, আমাদের এ বিষয়ে সফল হওয়ার সুযোগ আছে।”
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি স্পষ্ট জানিয়েছেন, আলাস্কার বৈঠকে তিনি আমন্ত্রিত নন এবং ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে করা যেকোনো চুক্তি একটি অর্থহীন সমঝোতা হবে।