Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

যুদ্ধ থামাতে বৈঠকে ট্রাম্প-পুতিন

Icon

মো. ইমরানুর রহমান

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৫, ১৭:৫৬

যুদ্ধ থামাতে বৈঠকে ট্রাম্প-পুতিন

ভ্লাদিমির পুতিন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প

ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়াকে বেঁধে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়সীমা পেরিয়ে গেছে। নতুন কোনো সমঝোতা না হলেও আপাতত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নতুন কোনো বিধিনিষেধের পথে হাঁটছেন না, উল্টো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি ১৫ আগস্ট আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন। যেখানে ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি টানার বিষয়টি হবে প্রধান আলোচ্যসূচি।

ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, যেকোনো শান্তিচুক্তিতে ভূমি বিনিময় থাকতে পারে, যা নিয়ে এরই মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, নিজ দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতায় আপস করবেন না তিনি। এ ছাড়া ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা রুশ দখলকৃত কোনো এলাকা, যেমন-ক্রিমিয়া, দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া-রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব বরাবরই প্রত্যাখ্যান করেছে। 

তবে পুতিন বারবার বলেছেন, যেকোনো শান্তিচুক্তিতে ইউক্রেনকে ২০১৪ সালের পর রাশিয়ার দখলে যাওয়া কিছু এলাকা ছেড়ে দিতে হবে। পাশাপাশি তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক সহায়তা বন্ধ ও ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের প্রচেষ্টা থামানোর দাবি জানিয়েছেন। এ ছাড়া ইউরোপীয় দেশগুলোও চাইছে, ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে জেলেনস্কিরও একটা অবস্থান থাকুক। তবে এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা কম। 

বৈঠকের স্থান নিয়ে প্রশ্ন

পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় বৈঠকের স্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে এই পরোয়ানা জারি হয়েছে এবং আইসিসির সদস্য কোনো দেশে পুতিন গেলে গ্রেপ্তার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, আলাস্কা সফরে পুতিনকে কোনো ভোগান্তি পোহাতে হবে না। কারণ যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য নয় এবং এই আদালতের ক্ষমতা স্বীকার করে না। এর আগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়েই যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন। 

ঐতিহাসিক এই আসন্ন বৈঠকটির স্থান সংযুক্ত আরব আমিরাত হওয়া নিয়েও আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু ৮ আগস্ট ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ পোস্ট দিয়ে ট্রাম্প জানান, তিনি পুতিনকে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরতম অঙ্গরাজ্য আলাস্কায় আমন্ত্রণ জানাবেন। আলাস্কার মূল ভূখণ্ড রাশিয়ার থেকে বেরিং প্রণালির ওপারে মাত্র ৮৮ কিলোমিটার দূরে। একসময় এই আলাস্কা রাশিয়ার ভূখণ্ডই ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তারা এই বিশাল অঞ্চলটি বিক্রি করে দেয়। 

এই ঘোষণাটি এলো সেই দিনেই, যেদিন রাশিয়ার কাছে যুদ্ধবিরতির জন্য ট্রাম্পের দেওয়া সময়সীমা শেষ হয়। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাশিয়ার অব্যাহত হামলা ও আপসের অনীহার কারণে ট্রাম্প প্রকাশ্যে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছিলেন, পুতিন ফোনে ভালো ভালো কথা বলেন, কিন্তু পরে ইউক্রেনের শহরগুলোতে বোমা মারেন।  ২০১৯ সালের পর এটি হবে দুই নেতার প্রথম সরাসরি বৈঠক।

‘বড় অগ্রগতি’ দাবি

প্রথম মেয়াদকালে পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন ট্রাম্প। এ বছর শুরুর দিকে তিনি প্রকাশ্যে জেলেনস্কির বদলে পুতিনের পক্ষে অবস্থান নেন। এমনকি হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কিকে অপমান করার মতো ঘটনাও ট্রাম্প ঘটান। কিয়েভকে অস্ত্র সরবরাহও বন্ধ করে দেন। সে সময় তিনি ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের ইচ্ছাকেই রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।

তবে সম্প্রতি রাশিয়ার হামলা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। গত সপ্তাহে কিয়েভে রাশিয়ার নতুন করে হামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওরা যা করছে, তা জঘন্য।’ ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দেন, হামলা না থামালে রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা এবং প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর শুল্ক আরোপ করা হবে। ৬ আগস্ট ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক ৫০ শতাংশে উন্নীত করার ঘোষণা দেন ট্রাম্প, কারণ রাশিয়ার তেল কিনেছে ভারত; যা এক অর্থে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে অর্থায়ন করছে। 

এদিকে তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর ট্রাম্প দাবি করেন, আলোচনায় ‘বড় অগ্রগতি’ হয়েছে। তবে সময়সীমা শেষ হওয়া পর্যন্ত কোনো নতুন চুক্তি বা ছাড়ের ঘোষণা আসেনি। ক্রেমলিন থেকেও আভাস পাওয়া গেছে, ট্রাম্পের প্রস্তাব বাস্তবসম্মত। আলোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, রাশিয়ার জন্য যে প্রস্তাব স্বস্তিদায়ক, ইউক্রেনের জন্য তা মেনে নেওয়া কষ্টকর হতে পারে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫