শান্তি আলোচনার মধ্যেই ইউক্রেনে ব্যাপক রুশ হামলা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৫, ১৬:৫৫

হামলায় স্থানীয় একটি জ্বালানি প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনার উদ্যোগ চলার মধ্যেই ইউক্রেনের মধ্যাঞ্চলীয় শহর ক্রেমেনচুকে রাশিয়া ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
মঙ্গলবার রাতের এই ঘটনাকে ‘শান্তি আলোচনার পিঠে ছুরিকাঘাত’ বলে অভিহিত করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।
তাদের মতে, এই হামলা প্রমাণ করে যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আসলে শান্তি চান না।
এই হামলার ঠিক একদিন আগেই ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতারা। বৈঠকে ট্রাম্প ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে একটি শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য সহায়তার আশ্বাস দেন।
বৈঠকের পর ট্রাম্প জানান, তিনি পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন এবং দুই নেতার মধ্যে একটি বৈঠকের আয়োজন করছেন। এর পর তিন রাষ্ট্রপ্রধানকে নিয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনের পরিকল্পনার কথাও জানানো হয়, যার মূল লক্ষ্য একটি শান্তি চুক্তি স্থাপন করা।
এই কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্যেই চালানো হামলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রামে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেমেনচুকের মেয়র ভিটালি ম্যালেটস্কি।
তিনি বলেন, “ঠিক যখন পুতিন ফোনে ট্রাম্পকে শান্তির আশ্বাস দিচ্ছিলেন এবং প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি হোয়াইট হাউসে একটি ন্যায়সঙ্গত শান্তি নিয়ে আলোচনা করছিলেন, তখনই পুতিনের সেনাবাহিনী ক্রেমেনচুকে আবারও ব্যাপক আক্রমণ চালিয়েছে।”
তিনি লেখেন, “বিশ্ব আরও একবার দেখলো যে পুতিন শান্তি চান না, তিনি ইউক্রেনকে ধ্বংস করতে চান।”
ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসে এটিই ছিল সবচেয়ে বড় হামলাগুলোর মধ্যে একটি। রাশিয়া রাতভর প্রায় ২৭০টি ড্রোন ও ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। বিমান বাহিনী ২৩০টি ড্রোন ও ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে সক্ষম হলেও, অন্তত ১৬টি স্থানে হামলা প্রতিহত করা যায়নি।
মেয়র ম্যালেটস্কি জানান, শহরে একের পর এক বিস্ফোরণে বিদ্যুৎ ও পরিবহন অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়, যার ফলে পোলতাভা অঞ্চলের শত শত মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েন।
পোলতাভার গভর্নর ভলোদিমির কোহুত জানিয়েছেন, হামলায় স্থানীয় একটি জ্বালানি প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, “ভাগ্যক্রমে, কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।”
কোহুত আরও জানান, লুবনি জেলায় প্রায় ১৫’শ পরিবার এবং ১১৯টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
একই দিনে মঙ্গলবার সকালে রাশিয়ার ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলীয় চেরনিহিভ অঞ্চলের অবকাঠামোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান সেখানকার গভর্নর ভিয়াচেস্লাভ চাউস। এর ফলে ওই অঞ্চলের কিছু অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
এই হামলাগুলোর বিষয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
যুদ্ধ চলাকালীন উভয় পক্ষই নিয়মিতভাবে একে অপরের জ্বালানি ও সামরিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোতে হামলা চালিয়ে আসছে।
এদিকে, রাশিয়া মঙ্গলবার দাবি করেছে যে ইউক্রেনের রাতভর ড্রোন হামলায় তাদের ভলগোগ্রাদ অঞ্চলের একটি বড় তেল শোধনাগারে এবং একটি হাসপাতালের ছাদে আগুন লেগেছে।