Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

‘ইসলামবিদ্বেষীদের’ ওপর ভরসা ট্রাম্পের

Icon

মো. ইমরানুর রহমান

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৫, ১৭:১৮

‘ইসলামবিদ্বেষীদের’ ওপর ভরসা ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইসলামবিদ্বেষের অভিযোগ বেশ পুরোনো। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তার বিরুদ্ধে অনেকেই এখন অভিযোগ করছেন, নিজের ক্যাবিনেটের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতে ইসলামবিদ্বেষীদেরই ঠাঁই দিয়েছেন তিনি। অন্তত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে এমন অভিযোগের সত্যতাই পাওয়া যাচ্ছে বলে একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করেছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ‘কাফের’ বিতর্ক

এবারে ট্রাম্প তার প্রতিরক্ষা দপ্তরের দায়িত্ব দিয়েছেন পিট হেগসেথকে। যার শরীরে রয়েছে ‘কাফের’ ট্যাটু। গত মার্চে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স ও ইনস্টাগ্রামে হেগসেথ তার অফিশিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ছবি প্রকাশ করেন। যেখানে দেখা যায়, তার হাতে ‘কাফের’ শব্দটি আরবিতে ট্যাটু করা রয়েছে। ইসলামি পরিভাষায় ‘কাফের’ বলতে অবিশ্বাসী বা আল্লাহকে অস্বীকারকারীকে বোঝায়।

দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে তার ইনস্টাগ্রামে প্রকাশিত আরেকটি ছবিতেও ট্যাটুটি দেখা গেছে। বিষয়টি সামনে আসতেই মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে হাজারো মুসলিম সদস্য থাকলেও একজন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর শরীরে এমন একটি শব্দের ট্যাটু ইসলামবিদ্বেষের ইঙ্গিত বহন করে। নিউইয়র্কভিত্তিক ফিলিস্তিনপন্থি অ্যাক্টিভিস্ট নেরদীন কিসওয়ানি বলেন, ‘এটা শুধু ব্যক্তিগত পছন্দ নয়; বরং ইসলামোফোবিয়ার স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ। যখন এই ব্যক্তি মার্কিন যুদ্ধ পরিচালনা করেন, তখন তার বিশ্বাস নীতি ও সামরিক সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে।’ 

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মুসলিম সংগঠন কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনসের (কেয়ার) নির্বাহী পরিচালক নিহাদ আওয়াদও বিষয়টি সমালোচনা করেছেন। তিনি নিউজউইককে বলেন, “শরীরে আরবি ‘কাফের’ শব্দের ট্যাটু করা মুসলিমবিদ্বেষের প্রকাশ, একই সঙ্গে ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতার প্রতিফলন।” যদিও হেগসেথের ইসলামবিরোধী ট্যাটু বিতর্ক নতুন নয়। অতীতেও তিনি ক্রুসেড যুগের প্রতীক ও সেøাগান খোদাই করা ট্যাটু প্রদর্শন করেছেন। তার ডান বাহুতে ‘ডিউস ভল্ট’ লেখা ট্যাটু রয়েছে, যা ল্যাটিন ভাষায় ‘ঈশ্বর তাই চান’ অর্থে ব্যবহৃত হয় এবং মধ্যযুগের খ্রিষ্টান ক্রুসেডারদের যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া তার বুকে জেরুজালেম ক্রস বা ক্রুসেডার ক্রসের প্রতীকও খোদাই করা আছে।

সমালোচকরা বলছেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দেহে এসব ট্যাটু শুধু ব্যক্তিগত রুচি নয়; বরং এটি এক ধরনের রাজনৈতিক বার্তা বহন করে, যা যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে সামরিক হস্তক্ষেপের প্রেক্ষাপটে আরো তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। এরই মধ্যে কংগ্রেসের কয়েকজন সদস্য হেগসেথের পদক্ষেপের তদন্ত দাবি করেছেন। ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার পরিকল্পনা ফাঁসের ঘটনায় সম্প্রতি যেভাবে তিনি সমালোচনায় পড়েছেন, নতুন এই ট্যাটু বিতর্ক তার ওপর চাপ আরো বাড়িয়েছে। এমনকি কিছু প্রতিনিধি তার পদত্যাগের দাবিও তুলেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, হেগসেথেই আস্থা রাখছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। উলটো তার বিরোধীদের নানা কৌশলে প্রতিরক্ষা দপ্তর থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

ইসলামবিদ্বেষের অভিযোগ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও

শুধু প্রতিরক্ষা দপ্তরই নয়। ট্রাম্প মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকেও এমন ব্যক্তির হাতে দিয়েছেন, যার বিরুদ্ধে ইসলামবিদ্বেষের অভিযোগ বহু পুরোনো। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মুসলিম সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের দেখেন এভাবেÑযারা কেবল পৃথিবী ধ্বংসের কামনা করে। তার এই মনোভাব তিনি কখনো গোপন করারও চেষ্টা করেননি। বরং রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে এবং ইহুদিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার তাগিদে তিনি বেশ উচ্চ স্বরেই মুসলিমদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। ইসলামি বিশ্বাস ধর্মমতে শেষ জামানার ইমাম ‘মাহদি’ সম্পর্কে রুবিওর ২০১৫ সালে দেওয়া এক বক্তব্য চলতি বছর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আবারও ভাইরাল হয়। সে সময় মার্কো রুবিও ছিলেন রিপাবলিকান প্রেসিডেনশিয়াল ক্যান্ডিডেট ও ফ্লোরিডার সিনেটর। রিপাবলিকান জিউইশ কোয়ালিশন প্রেসিডেনশিয়াল ফোরামে দেওয়া সেই বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, ‘তাদের (মুসলিম) ভবিষ্যদ্বাণীর ব্যাখ্যার অনুসারে, তারা বিশ্বাস করে যে শেষ মহাযুদ্ধের সূচনা করা তাদের কর্তব্য। এটাই তাদের স্বপ্ন। এ জন্য যখন তারা যোদ্ধাদের নিয়োগ করে, তখন তারা এই যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য যোদ্ধা সংগ্রহ করছেÑপশ্চিম ও ইসলামের মধ্যে চূড়ান্ত যুদ্ধ। তাদের (মুসলিম) বিশ্বাস, ইসলাম বিজয়ী হবে এবং পুরো পৃথিবী তাদের বেঁধে দেওয়া নিয়ম মোতাবেক চলবে। আর তাদের ১২তম ইমাম মাহদি, যিনি তাদের মেসিয়ানিক ব্যক্তি, এর শাসনের অধীনে থাকবে।’ তার মতে, মুসলিমদের সঙ্গে কোনো কূটনীতি চলতে পারে না। 

ব্রিটিশ সাংবাদিক সোলায়মান আহমেদ ভিডিওটি শেয়ার দিয়ে রুবিওর কঠোর সমালোচনা করেছেন। অনেকেই বলছেন, মুসলিম নিপীড়নের ও গাজায় ফিলিস্তিনের ওপর হওয়া যুদ্ধাপরাধের পক্ষে যুক্তি খুঁজে না পেয়ে আবোল-তাবোল বলছেন রুবিও। কেউ কেউ আবার বলছেন, এই বক্তব্যের মধ্যে রুবিওর ইসলামবিদ্বেষই ফুটে উঠেছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫