Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

ফাতিমা : ভুট্টো পরিবারের এক লেখক

Icon

সারোয়ার কবীর

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:৩১

ফাতিমা : ভুট্টো পরিবারের এক লেখক

ফাতিমা ভুট্টো

পাকিস্তানের ভুট্টো পরিবার এই উপমহাদেশের বহুল পরিচিত বংশগুলোর একটি। লারকানার নবাব হিসেবে খ্যাত এই পরিবারের সন্তান জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে ঠাঁই পেয়েছেন। খোদ নিজের দেশেও তিনি পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়ার জন্য অভিযুক্ত। পাকিস্তান খণ্ডিত হওয়ার পর ভুট্টো সে দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। তার দুর্ভাগ্য যে সত্তর দশকের শেষভাগে এক সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি ক্ষমতাচ্যুত এবং পরবর্তী সময়ে এক হত্যা মামলায় দণ্ডিত হয়ে মাত্র ৫১ বছর বয়সে ফাঁসিতে প্রাণ হারান। সেই জুলফিকার আলী ভুট্টোর নাতনি ফাতিমা ভুট্টো। পাকিস্তানি লেখক ও কলামিস্ট হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত। সাম্প্রতিক সময়ে টুইটারে পোস্ট করা তার একটি কলাম বিভিন্ন দেশে বেশ সাড়া ফেলে। কলামে ফাতিমা অভিযোগ করেন, গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলি সেনারা শুধু গণহত্যা চালাচ্ছে না, তারা ফিলিস্তিনি নারীদের ধর্ষণ করছে। গণহত্যার কথা পশ্চিমা গণমাধ্যমে উঠে এলেও ধর্ষণের বিষয়টি লুকানো হচ্ছে।

উপমহাদেশের অনেক লেখক কিংবা রাজনৈতিক বিশ্লেষক পাকিস্তানের ইতিহাসে ভুট্টো পরিবারকে একটি অভিশপ্ত বংশ বলে আখ্যায়িত করছেন। কেননা এই পরিবারের দুই প্রজন্মের সদস্যদের অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুবরণ করতে হয়। জুলফিকার আলী ভুট্টোর ফাঁসি ছাড়াও তার মেয়ে পাকিস্তানের আরেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো ২০০৭ সালে নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে এক জনসভায় ভাষণ দিতে গেলে এক বোমা হামলায় নিহত হন। জুলফিকার আলী ভুট্টোর দুই পুত্রের মধ্যে শাহনেওয়াজ ভুট্টো ১৯৮৫ সালে রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়। আরেক ছেলে মুর্তজা ভুট্টো ১৯৯৬ সালে করাচিতে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান, সে সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেনজির ভুট্টো। মর্তুজা ভুট্টোই হলেন ফাতিমা ভুট্টোর বাবা। ভুট্টো পরিবারের বিয়োগান্ত আবহে ফাতিমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। 

বিশ শতকের আশির দশকের গোড়ায় পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউল হকের শাসনামলে তার জন্ম আফগান রাজধানী কাবুলে। কয়েক বছর আগেই তার পিতামহ খুনের মামলায় দণ্ডিত হয়ে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলেছেন এবং বাবা সে সময় নির্বাসিত ছিলেন। ফাতিমার মা ফাওজিয়া ফাসিহুদিন ভুট্টো একজন আফগান নারী, তৎকালীন আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মেয়ে। সেই সূত্রে কাবুলে ফাতিমা ভুট্টোর জন্ম। জন্মের পর পরিবারের সঙ্গে চলে যেতে হয় সিরিয়ায়। পরে এক বিমান দুর্ঘটনায় জেনারেল জিয়াউল হকের মৃত্যুর পর পাকিস্তানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটলে তারা করাচিতে ফিরে আসেন। যদিও ফাতিমা দেশের বাইরেই বেশি পড়াশোনা করেছেন। নিউইয়র্কের বার্নার্ড কলেজ থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জনের পর লন্ডনের এসওএএস ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।

অল্প বয়স থেকেই লেখালেখির প্রতি তার আগ্রহ। মাত্র ১৫ বছর বয়সে, ১৯৯৬ সালে ফাতিমা ভুট্টোর প্রথম বই ‘হুইসপারস্ অব দ্য ডেজার্ট’ প্রকাশিত হয়। তার দ্বিতীয় বই ছিল ২০০৫ সালে কাশ্মীরের প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের পটভূমিতে রচিত ‘এইট-ফিফটি এএম এইট অক্টোবর টু থাউজেন্ড ফাইভ’ (8:50 AM October 8,2005)। তবে যে বইটির সুবাদে তিনি পাদপ্রদীপের আলোতে চলে আসেন, সেটি ছিল ‘সঙস অব ব্লাড অ্যান্ড সোর্ড’ (Songs of Blood and Sword: A Daughter's Memoir)। এটা ছিল তার স্মৃতিচারণামূলক বই, যার পাতায় পাতায় ভুট্টো পরিবারের নানা ঘটনাই শুধু স্থান পায়নি। তিনি অভিযোগ করেন, তার বাবার হত্যার পেছনে ফুফু বেনজির ও তার স্বামী আসিফ জারদারির হাত ছিল। বইটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে পাঠক মহলে শুরু হয় তোলপাড়। দেখা যায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। পরিবারের প্রতি লেখকের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি মেনে নিতে পারেনি ভুট্টো পরিবারের অনেক সদস্য। তারা পাল্টা অভিযোগ করেন, মিথ্যা কথা বলেছেন ফাতিমা।

‘সঙস অব ব্লাড অ্যান্ড সোর্ড’-এ ফাতিমা ভুট্টো লিখেছেন, তার বয়স যখন মাত্র চৌদ্দ, সে সময় করাচিতে তাদের বাসভবনের বাইরে পুলিশ অ্যানকাউন্টারের নামে তার বাবাকে গুলি করে হত্যা করে। অথচ সে সময় তার ফুফু বেনজির ভুট্টো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। ফাতিমা লিখেছেন, ফুফু ও তার স্বামী আসিফ আলী জারদারি ছিলেন হত্যাকাণ্ডের পেছনে। কারণ তার বাবা বেনজির সরকারের জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। ফাতিমা ১৯৮৫ সালে প্রবাসে বিষক্রিয়ায় তার চাচা শাহনেওয়াজ ভুট্টোর রহস্যজনক মৃত্যুর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, ওই ঘটনা পাকিস্তানের জিয়া সরকার, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর যোগসাজশে ঘটেছে। বইতে ফাতিমা ভুট্টো তার পরিবারের এমন ইতিহাস ব্যক্ত করেছেন, যা নিজেই প্রত্যক্ষ করেছেন। বইপত্র ঘেঁটে গবেষকদের মতন ঘাম ঝরিয়ে নয়, নিজের স্মৃতি থেকেই লিখেছেন সব। 

ভুট্টো পরিবারের চার প্রজন্মের কাহিনি, তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতার কথা বলতে গিয়ে তিনি তুলে ধরেছেন পাকিস্তানের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রতারণা আর সহিংসতাকে। ২০১০ সালে বইটি প্রকাশের পর পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের পাঠক মহলেই কেবল চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেনি, লেখক-সমালোচকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ব্রিটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ফিন্যানশিয়াল টাইমসে প্রকাশিত এক রিভিউতে লেখক উইলিয়াম ডালরিম্পল বলেন, সঙস অব ব্লাড অ্যান্ড সোর্ড একটি গতিশীল, রসোত্তীর্ণ ও সুলিখিত বই। এতে বাবার প্রতি একজন মেয়ের আবেগ-ভালোবাসায় সিক্ত মুর্তজা ভুট্টোকে তুলে ধরা হয়েছে। আর সেই মেয়ের দৃঢ় বিশ্বাস তার বাবার হত্যার সঙ্গে ফুফু জড়িত। অন্যদিকে ওয়াশিংটন পোস্টে বইটির সমালোচনা করতে গিয়ে থমাস লিপম্যান বলেন, বইটিতে কমপক্ষে ৫০ পৃষ্ঠাজুড়ে অহেতুক ব্যক্তিগত ক্রোধের বিস্ফোরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের টেনে আনা এবং মার্কিন বিরোধী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তবু যারা পাকিস্তানের অরাজকতা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী তাদের জন্য বইটি গুরুত্বপূর্ণ। দ্য গার্ডিয়ানে রডরিক ম্যাথিউস বইটির সমালোচনা করতে গিয়ে লিখেছেন-এই বই পাকিস্তান সরকারকে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে যথাযথ প্রমাণ ছাড়াই ব্যক্তিগত ধারণা থেকে। তবু বইটি হতাশ করেনি। এটি পাঠ করলে আশাভঙ্গ, অন্যায়, নাটকীয়তা এবং ক্ষমতা কুক্ষিগত করার যে প্রবণতা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রবল, তার সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। দ্য ইনডিপেনডেন্টে আরিফা আকবর মন্তব্য করেন, মুর্তজা ভুট্টোকে যতটা ভালো মানুষ বলে চিত্রিত করা হয়েছে, বেনজির ও তার স্বামীর প্রতি ততটাই ঘৃণা ব্যক্ত করা হয়। অথচ একদা ফাতিমার প্রিয় ছিল এই ফুফু, যার ডাক নাম পিংকি। আর তাকেই এমন কুটিল মহিলা বলা হয়েছে যে ভাইয়ের মৃত্যুতে যার হাত রয়েছে। সমস্যা হলো, ভাই-বোনের মধ্যকার ভালোমন্দ গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। 

‘সঙস অব ব্লাড অ্যান্ড সোর্ড’ নিয়ে খোদ পাকিস্তানের ভেতরেও সমালোচনার ঝড় ওঠে। সমালোচকরা ফাতিমার দিকে আঙুল তুলে বলেন, তিনি ইতিহাস এমনভাবে বিকৃত করেছেন, তাকে সে দেশের একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে নেতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ার অপপ্রয়াসই বলা চলে। তার বইতে ফাতেমা এ কথাও লিখেছেন ১৯৮৫ সালে দক্ষিণ ফ্রান্সে শাহনেওয়াজ ভুট্টোকে বিষ প্রয়োগের নেপথ্যে বেনজিরের ভূমিকা রয়েছে। বেনজিরের বোন ও ফাতিমার আরেক ফুফু সনাম ভুট্টো ‘ডন’ পত্রিকায় প্রকাশিত তার লেখা নিবন্ধে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ এনে ‘সঙস অব ব্লাড অ্যান্ড সোর্ড’ সম্পর্কে বলেন, বইটি তার পরিবারকে, বাস্তবতাকে এবং সবার উপরে সত্যকে আঘাত করেছে। ভুট্টো পরিবারের আরেক সদস্য জুলফিকার আলী ভুট্টোর ভাতিজা তারিখ ইসলাম ডনে প্রকাশিত আরেক লেখায়, ফাতিমার উত্থাপিত ইতিহাসের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। 

বিরূপ সমালোচনা কিংবা প্রাণহানির আশঙ্কা সত্ত্বেও ফাতিমা ভুট্টো কিন্তু তার কলম বন্ধ রাখেননি। ‘সঙস অব ব্লাড অ্যান্ড সোর্ড’-এ প্রকাশের দুই বছরের মাথায় প্রকাশিত হয় তার আরেকটি বই ‘দ্য শ্যাডো অব ক্রিসেন্ট মুন’। ২০১৩ সালে নিউইয়র্ক থেকে পেঙ্গুইন বইটি বের করে। এরপর ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয় ফাতিমার বই ‘ডেমোক্রেসি’। তবে এসব বই খুব একটা সাড়া ফেলেনি। বলতে গেলে ‘সঙস অব ব্লাড অ্যান্ড সোর্ড’-এর পর ফাতিমা ভুট্টোর যে বইটি নিয়ে পাঠক মহলে চাঞ্চল্য দেখা দেয়, সেটি একটি উপন্যাস। বইয়ের নাম ‘দ্য রানওয়েস’। বইটি প্রকাশ করে লন্ডনের বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা ভাইকিং। ব্যাপক আলোচিত নিজের দুটি বই নিয়ে ভারতের বহুল প্রচারিত ফ্রন্টলাইন পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফাতিমা ভুট্টো বলেন, “একজন লেখক হিসেবে আমি সব সময় এমন বিষয় নিয়ে লেখার চেষ্টা করি, যা আমাকে চালিত করে এবং আমাকে বিরক্ত করে। জঙ্গিবাদ ও বিচ্ছিন্নতার মতো বিষয় এবং কেন তরুণরা বিশ্বের যুদ্ধক্ষেত্রের সঙ্গে নিজেদের জড়াচ্ছে-এসব নিয়েই ‘দ্য রানওয়েস’ লিখেছি। আর ‘সঙস অব ব্লাড অ্যান্ড সোর্ড’ হলো আমার হৃদয়ের খুব কাছের একটি বই, যা এরই মধ্যে লিখে ফেলেছি; আমার পরিবার এবং রাজনীতি সম্পর্কে যা বলতে চেয়েছি তার সবকিছুই বলেছি।”

ফাতিমা ভুট্টো রচিত উপন্যাসগুলোতে শুধু পাকিস্তানিই নয়, অন্যান্য দেশ বা ভিন্ন ভিন্ন মহাদেশের বাসিন্দাদেরও দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে এক ভারতীয় পত্রিকা ‘ফ্রন্টলাইন’কে (৪ জানুয়ারি ২০১৯ সংখ্যা) দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফাতিমা বলেন, ‘আমি আফগানিস্তানে জন্মেছি এবং ১১ বছর বয়স পর্যন্ত সিরিয়ার দামেস্ক নগরীতে বসবাস করেছি। বাবার নির্বাসিত জীবনের সূত্রে জন্ম নেওয়ার পর থেকেই দেখেছি মানুষের ছিন্নমূল জীবনকে। তবে আমি মনে করি, আমরা এখন গ্লোবাল বিশ্বে বসবাস করছি। অনেক লোকই এখন এমন সব মহানগরীতে কাজ করছে, যেখানে তার জন্ম হয়নি, যেটা তার দেশ নয়। এমন নগরীতে পড়াশোনা করছে, যেখানে তার পরিবারের কেউ থাকে না। এভাবেই গ্লোবাল মুভমেন্টের অংশ হিসেবে অসংখ্য মানুষ এখন অভিবাসী হচ্ছে। নানাভাবে এই ধারা চলছে। সীমান্ত এবং দূরত্বের বাধা অতিক্রম করে মানুষের যোগাযোগ এবং কথাবার্তা বেশ সহজ হয়ে গেছে। এরই প্রতিফলন হিসেবে আমার উপন্যাসে নানা দেশের মানুষের উপস্থিতি ঘটেছে।’

তার উপন্যাসে দেখা যায় তরুণরা ইরাকে জঙ্গি আন্দোলনে যোগ দিচ্ছে, যা রাজনৈতিকভাবে কতটা সঠিক, জানতে চাওয়া হলে ফাতিমা ভুট্টো বলেন, ‘আমি মনে করি, তরুণদের জঙ্গি কিংবা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্র তৈরির পেছনে পাশ্চাত্যের ভূমিকা আছে। এই ধারা কতটা ভালো কিংবা মন্দ, সেটা বিচার করার চেয়েও গুরুতর ব্যাপার যে তারা কেন বিপজ্জনক পথে যাচ্ছে। আমি সব সময় সন্ত্রাস এবং যারা তা ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে। আমার মতে, এর পেছনে বেশ জটিলতা রয়েছে। এটা খারাপ কিংবা ভালো, ওই ধর্ম বা সেই ধর্ম বলে হ্রাস করা যাবে না। এর পেছনে রয়েছে জীবনের অব্যক্ত গ্লানি, বঞ্চনা ও ক্ষোভ। কতটা দুঃখ থাকলে একজন বিশ্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে নামে?’

তার লেখালেখির বড় একটা জায়গাজুড়ে আছে পাকিস্তানের করাচি মহানগরী। এর কারণ সম্পর্কে ফাতিমা ভুট্টো বলেছেন, ‘আমার মনের অনেকটা জায়গাজুড়ে আছে এই মহানগরী। ভালোবাসা ও আতঙ্ক এই দুটি কারণে। এই মহানগরের কাছে আমি খুবই কৃতজ্ঞ যে জীবন এবং বেঁচে থাকার সংগ্রাম সম্পর্কে অনেক কিছুই শিখেছি। একই সঙ্গে এটা এমন একটি স্থান যেখানে জীবনের অনেক ভয়ংকর এবং হৃদয়বিদারক অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে।’

ফাতিমা ভুট্টো হলেন পাকিস্তানের এক শীর্ষ রাজনৈতিক পরিবারের জন্ম নেওয়া এমন একজন লেখক, যিনি দেশ ও দশের জন্য কাজ করতে ভালোবাসেন। প্রায় বছর পাঁচেক আগে (১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১) লন্ডনের দ্য গার্ডিয়ানের রোসান্ন গ্রিনস্ট্রিটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জীবনে বড় সাফল্য প্রসঙ্গে বলেছিলেন, বিরাট সাফল্য অর্জনের চেয়ে অন্যের জন্য কাজ করে যাওয়াটাই বড় কথা। কাউকে সাহায্য করা, তার যত্ন নেওয়া এবং অন্যদের জন্য কিছু করতে পারার মাঝেই তিনি গর্ববোধ করে থাকেন। এ কারণেই আইতজাজ হাসান বাঙ্গাস নামের এক স্কুলছাত্র তার কাছে সবচেয়ে প্রশংসিত ব্যক্তিত্ব। কারণ এই ছাত্রটি পাকিস্তানে তাদের স্কুলে প্রবেশ করার মুহূর্তে এক আত্মঘাতী বোমাবাজকে প্রতিহত করে নিজের প্রাণের বিনিময়ে ২০০০ স্কুলছাত্রকে রক্ষা করেছিলেন।

ফাতিমা ভুট্টো সহিংসতা এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকলেও পাশ্চাত্য বিশ্বে তিনি এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর বলে পরিচিত। বই-কলাম লেখার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তার উপস্থিতি লক্ষণীয়।  

লেখক : সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫