Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

প্রবাসীদের মুখ বন্ধে ভারতের অস্ত্র ‘অভিবাসননীতি’

Icon

স্বর্ণা চৌধুরী

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:৩২

প্রবাসীদের মুখ বন্ধে ভারতের অস্ত্র ‘অভিবাসননীতি’

প্রতীকী ছবি

নিতাশা কউল যুক্তরাজ্যের ওয়েস্টমিনস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক। ১৯৯৭ সালে তিনি উচ্চতর পড়াশোনার জন্য ভারত থেকে হাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। তার পর থেকে তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি গণতন্ত্র, ভারতের রক্ষণশীল রাজনীতি ও কাশ্মীর নিয়ে বেশ কয়েকটি বই এবং দেড় শরও বেশি প্রবন্ধ লিখেছেন। ব্রিটিশ নাগরিকত্ব অর্জনের পরও নিতাশা তার জন্মভূমির সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন ভারতের ওভারসিজ সিটিজেন অব ইন্ডিয়া (ওসিআই) মর্যাদার মাধ্যমে। এটি এমন একটি বিশেষ পরিচয়, যা ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিকরা পান। ফলে তারা আজীবন ভারতে যাতায়াত করতে ও নির্বিঘ্নে থাকতে পারেন। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ এই মর্যাদার অন্তর্ভুক্ত।

তবে চলতি বছরের মে মাসে হঠাৎ করেই নিতাশার ওসিআই মর্যাদা বাতিল করা হয়। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ৭-ডি ধারা অনুযায়ী, কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সরকার ওসিআই বাতিল করতে পারে, যেমন-(১) জালিয়াতি, (২) ভারতের সংবিধানের প্রতি ‘অবিশ্বস্ততা’, (৩) যুদ্ধরত শত্রু দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বা ব্যবসা, (৪) দুই বছরের বেশি কারাদণ্ড অথবা (৫) ভারতের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা, নিরাপত্তা কিংবা জনস্বার্থের প্রতি হুমকি মনে হলে। আইনগত দিক থেকে সরকার এই অধিকার রাখলেও এর প্রয়োগ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠছে। অনেক ক্ষেত্রে এই বাতিল প্রক্রিয়া স্বচ্ছতা ও ন্যায়সংগত হয় না, যা মানবাধিকার ও আইনের শাসনের লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি করছে। ফলে বাকস্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকারের নীতিগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। 

নিতাশাকে যে নোটিশ পাঠানো হয়েছিল তাতে বলা হয়, তিনি ‘ভারতবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত, বিদ্বেষপ্রসূত এবং ইতিহাস ও তথ্যের প্রতি সম্পূর্ণ অবজ্ঞা দেখিয়েছেন।’ কিন্তু সেখানে কোনো নির্দিষ্ট ঘটনার উল্লেখ ছিল না। আসলে নিতাশা বরাবরই ভারতীয় গণতন্ত্রের পক্ষে সোচ্চার এবং সংখ্যালঘু নিপীড়নের সমালোচক। তিনি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসের বিভক্তির রাজনীতির বিরুদ্ধেও নিয়মিত লিখেছেন। তার বিশ্লেষণ যে তথ্য ও ইতিহাসভিত্তিক, সেটি বৈশ্বিক গণতন্ত্র সূচকের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়। 

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউস স্বাধীনতার প্রশ্নে ভারতকে ‘আংশিক স্বাধীন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং বলেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার বৈষম্যমূলক নীতি ও মুসলমানদের ওপর নির্যাতনকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের ক্ষেত্রেও। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) বলেছে, “২০১৪ সালে মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যম এক ধরনের ‘অঘোষিত জরুরি অবস্থা’র মধ্যে রয়েছে।”

নিতাশাই একা নন, সমালোচনামূলক অবস্থানের কারণে আরো অনেকেই একই ধরনের শাস্তির মুখোমুখি হয়েছেন। গত ৯ বছরে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ১২০ জনের বেশি মানুষের ওসিআই মর্যাদা বাতিল করেছে। মুক্ত সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যার জানিয়েছে, এই প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। শুধু ২০২৪ সালেই ৫৭ জনের ওসিআই মর্যাদা বাতিল হয়, আর ২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে আরো ১৫ জন এই তালিকায় যুক্ত হন। যাদের ওসিআই বাতিল করা হয়েছে, তাদের বড় অংশই সাংবাদিক, অ্যাঙ্কিভিস্ট বা শিক্ষাবিদ, যারা বিজেপির সমালোচনা করেছেন বা হিন্দুত্ববাদী বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করেছেন।

২০২২ সালে সুইডেনভিত্তিক অধ্যাপক অশোক স্বাইনের ওসিআই বাতিল করা হয় তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টের কারণে। তাকে অভিযুক্ত করা হয় ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ ও ‘ভারতের সামাজিক কাঠামোকে অস্থিতিশীল করার’ জন্য; যদিও কোনো প্রমাণ হাজির করা হয়নি। পরে ২০২৩ সালে দিল্লি হাইকোর্টে তিনি মামলাটি জিতে যান। এটি দেখায়, দেশের ভেতরে আদালত কখনো কখনো সরকারের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধারাবাহিক আক্রমণের শিকার হয়েছে। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই দেখা যাচ্ছে, সমালোচকদের কারাদণ্ড, ভয়ভীতি, শারীরিক আক্রমণ, মানহানির মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। বিশেষ করে জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের বিরুদ্ধে ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামক সামরিক অভিযান চালায়। এর পর থেকে দমন-পীড়ন আরো বেড়েছে। তখন ভারতের সরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে প্রায় আট হাজার অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেয়, যার মধ্যে সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম, যেমন-ফ্রি প্রেস কাশ্মীর, বিবিসি উর্দু এবং দ্য ওয়্যার ছিল। দেশের ভেতরে সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বর দমন করার পর এবার সরকার নজর দিয়েছে প্রবাসীদের দিকে। অভিবাসন নিয়ন্ত্রণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ভয় সৃষ্টি করার জন্য, যাতে প্রবাসীরা সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকে। ২০২৪ সালে আরএসএফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত সরকার ওসিআই মর্যাদাকে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করার এক ধরনের ‘ব্ল্যাকমেইল’ হিসেবে ব্যবহার করছে। একই বছর প্ল্যাটফর্ম ফর ইন্ডিয়ান ডেমোক্রেসি পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ব্রিটিশ ভারতীয়দের ৫৪ শতাংশ ভারতের বর্তমান গতিপথ নিয়ে উদ্বিগ্ন। অনেক প্রবাসী ভারতীয় মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে মুখ 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫