গাজাজুড়ে ইসরায়েলি তাণ্ডব, আরও ৮৩ ফিলিস্তিনি নিহত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০৩

বুধবার বিস্ফোরণের পর ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে ধোঁয়া উঠছে গাজায়।
ফিলিস্তিনের গাজার আল-শিফা হাসপাতালের বাইরে ইসরায়েলি হামলায় আরও অন্তত ১৫ জন এবং আল-আহলি হাসপাতালে চারজনসহ মোট ১৯ জন নিহত হয়েছেন। এই দুই স্থানসহ অবরুদ্ধ উপত্যকাটির আরও বেশ কয়েকটি এলাকায় বুধবার চালানো হামলায় মোট ৮৩ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গাজা সিটিতেই নিহত হয়েছেন ৬১ জন।
গাজার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আল-শিফা ও আল-আহলি হাসপাতালের আশপাশের এলাকা ধ্বংস হয়েছে। আল-শিফার বাইরে ১৫ জন নিহত হয়েছেন, আল-আহলিতে চারজন মারা গেছেন।
হামাস হামলাগুলোকে ‘পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি জানিয়েছে, “এই হামলা জাতিসংঘের নতুন প্রতিবেদনের মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হয়েছে, যেখানে আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের গণহত্যার অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে।”
হামাসের মতে, হামলা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ‘স্পষ্ট অবমাননা ও চরম উদাসীনতার বার্তা’।
যুক্তরাজ্যের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক মন্ত্রী হ্যামিশ ফ্যালকনার সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “ইনকিউবেটরে থাকা শিশু এবং ডায়ালাইসিসে থাকা শিশুদের ওপর বোমা বর্ষণ করা উচিত নয়।”
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শিশু হাসপাতাল তিনবার আক্রমণের শিকার হয়েছে, যার ফলে ৪০ রোগী পালাতে বাধ্য হয়েছেন। অন্য ৪০ জন স্টাফদের সঙ্গে ভেতরে আটকে রয়েছেন।
ডাক্টরস উইদাউট বর্ডারস তাদের এক কর্মীকে হারানোর শোক প্রকাশ করেছে। হুসেইন আলনাজজার, যিনি তিন সন্তানের বাবা এবং নার্স ছিলেন, ইসরায়েলি হামলায় শেল আঘাতে নিহত হয়েছেন। তিনি ২০২৪ সালের শুরু থেকে এমএসএফ ক্লিনিকে কাজ করছিলেন।
জাতিসংঘের তদন্তে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের গাজার ওপর কার্যক্রমকে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আল বাসমা আইভিএফ সেন্টার ধ্বংসে ৪,০০০ ভ্রূণ এবং ১,০০০ স্পার্ম ও ডিমের নমুনা নষ্ট হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি ‘গাজার মানুষের জন্ম রোধ করার উদ্দেশ্যে নেওয়া পদক্ষেপ’, যা ১৯৪৮ সালের কনভেনশনের অধীনে গণহত্যার একটি ক্রিয়া।
জাতিসংঘ এই হামলাকে গাজার স্বাস্থ্য খাত ধ্বংসের একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেছে, যা তারা ‘মেডিসাইড’ বা চিকিৎসা খাতে হত্যার পরিকল্পনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ট্যাংক, জেট ও নৌবাহিনী দ্বারা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। শাতি রিফিউজি ক্যাম্পে বোমা হামলায় একটি শিশু ও তার মা নিহত হয়েছেন।
স্থায়ীভাবে নিরাপদ হিসেবে ঘোষিত আল-মাওয়াসি এলাকা থেকেও হামলা হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, সেখানে পানি, খাবার এবং স্বাস্থ্য সেবা নেই। এর ফলে রোগ ও ক্ষুধা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবিক অফিস (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, উত্তর গাজার ক্ষুধা তীব্র হয়ে উঠছে, সাহায্য কনভয়গুলো ১২ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে।
২০২৩ সালে ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৯৭ জন। হাজার হাজার মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা থাকেন। তারা অনেকে সেখানেই প্রাণ হারিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।