Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

নেপালে সবচেয়ে সহিংস আন্দোলনের নেপথ্যে

Icon

মোকাররম রানা

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:৩২

নেপালে সবচেয়ে সহিংস আন্দোলনের নেপথ্যে

ক্ষুব্ধ জনতা নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে পার্লামেন্ট ও সরকারি ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয় ছবি : রয়টার্স

তীব্র গণ-আন্দোলন ও সহিংস হত্যাকাণ্ডের জেরে ৯ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি। তিনি ছিলেন নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির (ইউনিফাইড মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী) চেয়ারম্যান। ৪ সেপ্টেম্বর দেশটিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিষিদ্ধ করার পর থেকে ৫ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি ও সামাজিক মাধ্যম নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে বিক্ষোভ শুরু হলে তা সহিংস হয়ে ওঠে। বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে এক দিনে নিহত হয় অন্তত ১৯ জন। এরপরই অলির পদত্যাগের দাবি উঠতে থাকে। দুই দিনের গণবিক্ষোভ ঘিরে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭২ জনে দাঁড়িয়েছে।

২০২৪ সাল থেকে অলির দল ও নেপালি কংগ্রেসের জোট সরকারের শাসন চলছে নেপালে। দুই দশকের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের পর ২০০৮ সালে গণপরিষদ নির্বাচনে বিলুপ্ত ঘোষিত হয় নেপালের ২৪০ বছরের পুরোনো রাজতন্ত্র। দেশটির শাসনকাঠামোর পরিবর্তনের পথ শান্তিপূর্ণ ছিল না। রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে আসতে প্রাণ দিতে হয়েছে অন্তত ১৩ হাজার নেপালিকে। এদের মধ্যে অন্তত আট হাজারই বেসামরিক নাগরিক। 

তবে আগের দশকব্যাপী আন্দোলনে এত প্রাণহানির পরও এবারের পাঁচ দিনের গণ-আন্দোলনকে সবচেয়ে সহিংস বলছে নেপালিরা। দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য কাঠমান্ডু পোস্টকে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. অরুণা উপ্রেতি এই ঘটনাকে রাজা জ্ঞানেন্দ্রর শাসনামলের শেষের দিকের দমন-পীড়নের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই সরকার তরুণদের ওপর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করে জ্ঞানেন্দ্র শাহর পথই অনুসরণ করছে। এমনকি আশির দশকে পঞ্চায়েত শাসনামলের গণ-অভ্যুত্থান দমনের ঘটনাকেও আজকের সহিংসতা ছাড়িয়ে গেছে। ক্ষমতাসীন নেপালি কংগ্রেস ও সিপিএন-ইউএমএল ঔদ্ধত্যের পরিচয় দিয়েছে। দমন-পীড়ন করে জনগণের মনে জমে থাকা ক্ষোভ কমানো যাবে না।’

ঘটনার আকস্মিকতায় অনেকেই হতবাক। তারা ভাবতেও পারেনি, তরুণদের এই বিক্ষোভ এতটা সহিংস রূপ নেবে এবং এতে এত মানুষের প্রাণ যাবে। তাদের ভাষ্য, আজকের তরুণ প্রজন্ম কোনো রাজনৈতিক দলের অন্ধ অনুসারী নয়। 

আন্দোলনের নেপথ্যে অর্থনৈতিক দুরবস্থা 

হিমালয়কন্যা হিসেবে খ্যাত নেপালে প্রায় তিন কোটি মানুষের বাস। চলমান গণ-আন্দোলনে মূলত নেতৃত্ব দিয়েছে ১৩ থেকে ২৮ বছর বয়সী তরুণরা। অনেকেই এই আন্দোলনকে দশকের পর দশক ধরে চলা নেপালের দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার কাঠামোর প্রতি ক্ষোভের গণবিস্ফোরণ হিসেবে দেখছে। আন্দোলনের সংগঠকরা বলছেন, শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধের প্রতিবাদ নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে অর্থনৈতিক বৈষম্য ও শোষণের প্রতি অসন্তোষও। ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নেপালে ১৫-২৪ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ২০.৮ শতাংশ। 

সম্প্রতি নেপালের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘নেপো কিড’ নামে একটি হ্যাশট্যাগ ছড়িয়ে পড়ে। এই শব্দবন্ধটি রাজনীতিবিদ ও ক্ষমতাবানদের সন্তানদের কথা বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। সাধারণ নেপালি তরুণরা যখন বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক দুর্দশায় জর্জরিত, তখন অনলাইনে ক্ষমতাবানদের সন্তানদের বিলাসী জীবনের প্রদর্শনী এই ক্ষোভ আরো উসকে দিয়েছে। 

নেপালের অর্থনীতির বড় অংশ প্রবাসী শ্রমিকদের আয়ের ওপর নির্ভরশীল। দেশটির জিডিপির প্রায় ৩৩.১ শতাংশ আসে শ্রমিকদের পাঠানো ব্যক্তিগত রেমিট্যান্স থেকে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন দশকে প্রবাস আয়ের ওপর এই নির্ভরশীলতা আরো বেড়েছে। বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, ‘প্রত্যেক নেপালিই দুর্নীতি নিয়ে হতাশ। প্রত্যেক তরুণই দেশ ছাড়তে উন্মুখ। সুতরাং আমরা তরুণদের বাঁচাতে চাই এবং অর্থনীতির উন্নতি চাই।’ 

সর্বশেষ পরিস্থিতি

১২ সেপ্টেম্বর নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন দেশটির সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি। এর পরই তিনি জাতীয় নির্বাচনের তারিখও ঘোষণা করেন। আগামী বছরের ৫ মার্চ দেশটিতে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া সুশীলা শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর দেশটির পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করা হয়। প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাওদেল তা বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষণা করা ছিল বিক্ষোভকারীদের প্রধান দাবি।

বিক্ষোভের পর নেপালের নিরাপত্তার ভার যায় সেনাবাহিনীর হাতে। ১০ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেওয়ার পরই দেশজুড়ে কারফিউ জারি করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালান সেনারা। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। সড়কে সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিও কমেছে। এতে দেশটিতে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫