Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

মানুষ ফিরছে চাঁদে: আর্টেমিস-২ মিশন ফেব্রুয়ারিতেই

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:১১

মানুষ ফিরছে চাঁদে: আর্টেমিস-২ মিশন ফেব্রুয়ারিতেই

আর্টেমিস-২ মিশনের মহাকাশচারীরা।

দীর্ঘ ৫০ বছর পর আবারও মানুষ চাঁদের কাছাকাছি যাচ্ছে। নাসা ঘোষণা করেছে যে তারা আগামী ফেব্রুয়ারিতেই চারজন নভোচারীকে নিয়ে চন্দ্রাভিযান পরিচালনা করতে যাচ্ছে। এই ১০ দিনের মহাকাশযাত্রাটি হবে আর্টেমিস প্রোগ্রামের দ্বিতীয় মিশন।

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা) এর আগে এই মিশনের জন্য এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করলেও এখন তারা লক্ষ্যমাত্রা এগিয়ে এনেছে।

নাসার ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি অ্যাসোসিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর লেকিশা হকিন্স এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, এটি মানব মহাকাশ অনুসন্ধানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হতে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, “আমরা সকলে ইতিহাসের এক প্রথম সারির দর্শক হতে যাচ্ছি। লঞ্চ উইন্ডো ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখের মতো তাড়াতাড়ি খুলতে পারে, তবে আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই যে নিরাপত্তা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।”

মিশনের লক্ষ্য ও প্রস্তুতি

আর্টেমিস-২ মিশনের প্রধান লক্ষ্য হলো নভোচারীদের নিয়ে এসএলএস (স্পেস লঞ্চ সিস্টেম) রকেট ও ওরিয়ন ক্রু ক্যাপসুল-এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করা। এই নভোচারীরা চাঁদে অবতরণ করবেন না, তবে তারা ১৯৭২ সালের অ্যাপোলো ১৭-এর পর প্রথম মানব ক্রু হিসেবে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথের বাইরে যাত্রা করবেন।

আর্টেমিস লঞ্চ ডিরেক্টর চার্লি ব্ল্যাকওয়েল-থম্পসন জানান, এসএলএস রকেটটি প্রায় “সজ্জিত এবং প্রস্তুত।” শুধু ওরিয়ন ক্যাপসুলের কাজ শেষ করা এবং কিছু গ্রাউন্ড টেস্ট বাকি আছে।

আর্টেমিস প্রোগ্রামের প্রথম মিশনে, ২০২২ সালের নভেম্বরে একটি মনুষ্যবিহীন মহাকাশযান চাঁদের চারপাশে ঘুরে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসে। সেই মিশনটি সফল হলেও, মহাকাশযানটি যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনরায় প্রবেশ করে, তখন তার হিটশিল্ডে কিছু সমস্যা দেখা দেয়, যা এরই মধ্যে সমাধান করা হয়েছে।

নভোচারী এবং যাত্রাপথ

আর্টেমিস-২ মিশনের চার নভোচারী হলেন নাসার রেইড ওয়াইজম্যান, ভিক্টর গ্লোভার এবং ক্রিস্টিনা কোচ, ও কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সির জেরেমি হ্যানসেন। ফ্লাইট ডিরেক্টর জেফ রাডিগান জানান, এই নভোচারীরা আগের যেকোনো মিশনের চেয়ে মহাকাশের আরও গভীরে যাবেন।

তারা চাঁদের পাশ দিয়ে আরও ৯ হাজার ২০০ কিলোমিটার (৫,০০০ নটিক্যাল মাইল) দূরে যাবেন, যা একটি নতুন রেকর্ড স্থাপন করবে।

এই ১০ দিনের যাত্রায়, নভোচারীরা এসএলএস রকেটের উপরে থাকা ওরিয়ন ক্যাপসুলে অবস্থান করবেন। উৎক্ষেপণের পর, দুটি সলিড রকেট বুস্টার আলাদা হয়ে যাবে এবং মূল কোর স্টেজ থেকে দ্বিতীয় স্টেজ (ইন্টারিম ক্রায়োজেনিক প্রপালশন সিস্টেম - আইসিপিএস) এবং ওরিয়ন ক্যাপসুল আলাদা হবে।

পরে ওরিয়নের সৌর প্যানেলগুলো উন্মুক্ত হয়ে শক্তি সরবরাহ শুরু করবে। ৯০ মিনিট পর, আইসিপিএস তার ইঞ্জিন চালু করে মহাকাশযানটিকে পৃথিবীর একটি উঁচু কক্ষপথে নিয়ে যাবে।

এরপর, নভোচারীরা ম্যানুয়ালি ওরিয়নের থ্রাস্টার নিয়ন্ত্রণ করে আইসিপিএস থেকে দূরে সরবেন এবং আবার কাছাকাছি আসবেন, যা ভবিষ্যতে চন্দ্রযানের সাথে ডকিংয়ের মহড়া হিসেবে কাজ করবে।

এর প্রায় ২৩ ঘন্টা পর, ওরিয়নের সার্ভিস মডিউল চাঁদের দিকে একটি ‘ট্রান্সলুনার ইনজেকশন’ (টিএলআই) বার্ন করবে, যা মহাকাশযানটিকে চার দিনের যাত্রায় চাঁদের দিকে নিয়ে যাবে।

বিজ্ঞান গবেষণা ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

এই মিশনে নভোচারীরা এক অর্থে মানব গিনিপিগ হিসেবে কাজ করবেন। বিজ্ঞানীরা তাদের শরীরের ওপর মহাকাশের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করবেন।

নাসার বিজ্ঞান প্রধান ড. নিকি ফক্স জানান, তারা নভোচারীদের রক্ত থেকে টিস্যুর নমুনা নিয়ে ‘অর্গানয়েড’ তৈরি করবেন এবং মহাকাশযাত্রার আগে ও পরের নমুনার তুলনা করে মাইক্রোগ্র্যাভিটি এবং বিকিরণের প্রভাব পরীক্ষা করবেন।

চাঁদের পাশ দিয়ে প্রদক্ষিণ করে নভোচারীরা আবার পৃথিবীর অভিকর্ষের টানে চার দিনের যাত্রা শেষে ফিরে আসবেন। পৃথিবীতে প্রবেশের সময় সার্ভিস মডিউলটি ক্রু মডিউল থেকে বিচ্ছিন্ন হবে এবং নভোচারীরা ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে প্যারাসুটের সাহায্যে নিরাপদে অবতরণ করবেন।

আর্টেমিস-২ মিশনের সাফল্যই নির্ধারণ করবে নাসা কখন আর্টেমিস-৩ মিশন উৎক্ষেপণ করবে, যার লক্ষ্য চাঁদে মানুষের অবতরণ করানো। তবে ওপেন ইউনিভার্সিটির ড. সিমিওন বারবার মনে করেন, নাসার ২০২৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে চাঁদে অবতরণের লক্ষ্যটি বাস্তবসম্মত নয়।

তিনি বলেন, এর প্রধান কারণ হলো, এই মিশনে ইলন মাস্কের স্পেসএক্স স্টারশিপের প্রয়োজন হবে, যা এখনো পৃথিবীর কক্ষপথে সফলভাবে উড়তে সক্ষম নয়, সেখানে নভোচারীদের নিয়ে চাঁদে যাওয়া তো দূরের কথা।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫