ইসরায়েলে আটক অবস্থায় ‘অমানবিক আচরণের’ অভিযোগ সুইস ও স্প্যানিশ অ্যাকটিভিস্টদের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:০৮
-68e3b13d659a2.jpg)
সুমুদ ফ্লোটিলা আটকের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার জেনেভায় বিক্ষোভ করেন সুইস নাগরিকরা।
গাজায় ত্রাণ পৌঁছে দিতে যাওয়া আন্তর্জাতিক ফ্লোটিলার সদস্যরা ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক অবস্থায় অমানবিক আচরণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন সুইস ও স্প্যানিশ কর্মীরা।
সুইজারল্যান্ডে দেশে ফেরত আসা নয়জন ফ্লোটিলা সদস্যের কয়েকজন জানিয়েছেন—তাদের ঘুমাতে দেওয়া হয়নি, পানি ও খাবার দেওয়া হয়নি, কেউ কেউ মারধরেরও শিকার হয়েছেন। একজনকে লাথি মারা হয় এবং তাদের মধ্যে কয়েকজনকে খাঁচায় বন্দি করে রাখা হয়।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, রবিবার রাতে স্পেনে পৌঁছানো কর্মীরাও একই অভিযোগ করেন।
সাংবাদিক রাফায়েল বোররেগো বলেন, “ওরা আমাদের মারধর করেছে, মাটিতে টেনে নিয়ে গেছে, চোখ বেঁধেছে, হাত-পা বেঁধেছে, খাঁচায় ঢুকিয়েছে এবং অপমান করেছে।”
ইসরায়েলের বিচারমন্ত্রী ইয়ারিভ লেভিন সোমবার জানান, এ পর্যন্ত ১৭০ জন ফ্লোটিলা কর্মীকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বর্তমানে ইসরায়েলে আটক ৩০৯ জনের মধ্যে ২০০ জনকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফেরত পাঠানো হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শনিবার সুইডিশ কর্মীরা অভিযোগ করেন, জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গকে আটক অবস্থায় ধাক্কা দেওয়া হয় এবং জোর করে ইসরায়েলি পতাকা পরতে বাধ্য করা হয়। আরও কয়েকজন জানান, তাদের পরিচ্ছন্ন খাবার ও পানি দেওয়া হয়নি, ওষুধ ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র কেড়ে নেওয়া হয়।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ফ্লোটিলা আটক হওয়ার পর বন্দিদের সঙ্গে নির্যাতনের যে খবর ছড়িয়েছে, তা ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’।
এক মুখপাত্র রবিবার রয়টার্সকে বলেন, “সব বন্দিকে পানি, খাবার ও টয়লেট ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তাদের আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগেও কোনো বাধা দেওয়া হয়নি, বরং তাদের সব আইনি অধিকার পূর্ণভাবে রক্ষা করা হয়েছে।”
মন্ত্রণালয় জানায়, কেতজিওত কারাগারে এক স্প্যানিশ বন্দি নির্বাসনের আগে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় এক নারী চিকিৎসাকর্মীকে কামড় দেন। ওই চিকিৎসাকর্মীকে সেখানেই চিকিৎসা দেওয়া হয়।
রবিবার তেল আবিবে অবস্থিত সুইস দূতাবাস কারাগারে থাকা ১০ জন সুইস নাগরিকের সঙ্গে দেখা করেছে। দূতাবাস জানিয়েছে, “পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা তুলনামূলকভাবে ভালো আছেন।” তাদের দ্রুত দেশে ফেরানোর জন্য দূতাবাস সবকিছু করছে বলেও জানানো হয়।
ফ্লোটিলায় অংশ নেওয়া বার্সেলোনার সাবেক মেয়র আডা কলাউ বলেন, “আমাদের ওপর নির্যাতন হয়েছে, কিন্তু তা ফিলিস্তিনিদের প্রতিদিনের ভোগান্তির তুলনায় কিছুই নয়।”
স্প্যানিশ সাংবাদিক কার্লোস দে ব্যারন ও নেস্টর প্রিয়েতো জানান, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তাদের না জানিয়ে হিব্রু ভাষায় লেখা এক নথিতে স্বাক্ষর করিয়েছে, যাতে বলা হয়েছে তারা অবৈধভাবে ইসরায়েলে প্রবেশ করেছে।
তিনি বলেন, “আমাদের অনুবাদক দেওয়া হয়নি, এমনকি কনসুলার সহায়তাও পাইনি, কারণ তারা আশদোদ বন্দরে স্প্যানিশ কনসালকে প্রবেশ করতে দেয়নি।”
বন্দিদের মধ্যে থাকা কর্মীদের কারাগারে গিয়ে কয়েকটি দেশের কনসুলার কর্মকর্তারা দেখা করেছেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
আরও কয়েকজন কর্মীকে সোমবার মুক্তি দিয়ে এথেন্সে পাঠানো হবে বলে আশা করা হচ্ছে।