Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

ক্ষমতার দ্বন্দ্বে ফেডারেল শাটডাউনে যুক্তরাষ্ট্র

Icon

তৌসিফ আহমেদ

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:৫৩

ক্ষমতার দ্বন্দ্বে ফেডারেল শাটডাউনে যুক্তরাষ্ট্র

বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে কংগ্রেসের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে বাজেট নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় দেশটির ফেডারেল সরকার আংশিকভাবে বন্ধ বা ‘শাটডাউন’-এর কবলে পড়েছে। এটি কোনো নতুন ঘটনা না হলেও এবারের অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা দেশটির অর্থনীতি এবং সাধারণ মানুষের জীবনে গভীর সংকট তৈরি করছে। এই সপ্তাহে অচলাবস্থার সমাধান হবে, এমন কোনো লক্ষণ এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।

মূলত সরকারের দৈনন্দিন কার্যক্রম চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের বিল কংগ্রেসে পাস হতে না পারলেই শাটডাউন পরিস্থিতি তৈরি হয়। এবারের সংকটের কেন্দ্রে রয়েছে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যকার তীব্র মতপার্থক্য। রিপাবলিকানরা একটি স্বল্পমেয়াদি বিল পাস করে সরকার চালু রাখতে চায়, যাতে পরবর্তী সময়ে বৃহত্তর বাজেট নিয়ে আলোচনার জন্য সময় পাওয়া যায়। কিন্তু ডেমোক্র্যাটদের অভিযোগ, এই বিলটি তাদের কোনো মতামত ছাড়াই তৈরি করা হয়েছে এবং এতে স্বাস্থ্য খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে উপেক্ষা করা হয়েছে। বিশেষ করে, ‘ওবামাকেয়ার’-এর অধীনে স্বাস্থ্য বিমার ভর্তুকি চালু রাখার মতো বিষয়গুলোতে কোনো ছাড় দিতে নারাজ তারা। অন্যদিকে সাম্প্রতিক জনমত জরিপগুলোতে শাটডাউনের জন্য জনগণ ক্ষমতাসীন রিপাবলিকানদেরই বেশি দায়ী করছে, যা ডেমোক্র্যাটদের অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করেছে।

এই রাজনৈতিক দড়ি টানাটানির সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ এবং দেশটির অর্থনীতি। শাটডাউনের কারণে লাখ লাখ ফেডারেল কর্মী বিপাকে পড়েছে। সরকারের অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা, যেমন-জাতীয় নিরাপত্তা, বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মীরা বেতন ছাড়াই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে তারা। বাকিদের পাঠানো হয়েছে বাধ্যতামূলক ছুটিতে, যাদের বলা হচ্ছে ‘ফারলোড’। যদিও শাটডাউন শেষে তারা বকেয়া বেতন পাবেন, কিন্তু দৈনন্দিন খরচ মেটাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। অন্যদিকে দেশটির সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বেতনও আটকে গেছে।

এর প্রভাব পড়ছে আরো অনেক ক্ষেত্রে। বিমান ভ্রমণ এখনো চালু থাকলেও এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলাররা বেতন পাচ্ছে না। তাদের সংস্থা সতর্ক করেছে যে, এমন পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে তা জাতীয় আকাশসীমার নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। স্বাস্থ্য খাতেও পড়েছে এর কালো ছায়া। স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগের (এইচএইচএস) হাজার হাজার কর্মী ছুটিতে থাকায় নতুন রোগের গবেষণা, খাদ্য ও ওষুধের মান যাচাই এবং জনস্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি নির্দেশনা দেওয়ার মতো কাজগুলো ব্যাহত হচ্ছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (এনআইএইচ) নতুন কোনো রোগী ভর্তি বা গবেষণার জন্য অনুদান দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে নারী, শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের জন্য পুষ্টি সহায়তা কর্মসূচি ডব্লিউআইসি নিয়ে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই কর্মসূচির অর্থ দ্রুতই ফুরিয়ে যাবে, যার ফলে লাখ লাখ মা ও শিশু তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হবে। একই সঙ্গে নতুন করে সামাজিক সুরক্ষা বা ফুড স্ট্যাম্পের (এসএনএপি) আবেদন প্রক্রিয়াও ধীর হয়ে যেতে পারে।

তবে কিছু পরিষেবা, যেমন-ডাক বিভাগ, যা নিজস্ব আয়ে চলে এবং সামাজিক সুরক্ষা (সোশ্যাল সিকিউরিটি) পেমেন্ট, যা বাধ্যতামূলক বরাদ্দের আওতায় পড়ে, সেগুলো চালু রয়েছে। জাতীয় উদ্যানগুলোর খোলা জায়গাগুলো উন্মুক্ত থাকলেও দর্শনার্থী কেন্দ্র এবং অন্যান্য পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসির বিখ্যাত স্মিথসোনিয়ান জাদুঘরগুলো তাদের নিজস্ব তহবিল ব্যবহার করে আপাতত খোলা থাকলেও শাটডাউন দীর্ঘ হলে সেগুলোও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অচলাবস্থা সহজে কাটছে না। প্রতিনিধি পরিষদ (হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস) আগামী ১৪ অক্টোবরের আগে ওয়াশিংটনে ফিরছে না, যা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে দ্রুত সমাধানের কোনো চেষ্টা আপাতত নেই। দুই পক্ষই নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থেকে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই ক্ষমতার লড়াইয়ে আদতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মার্কিন অর্থনীতি। কর্মীদের বেতন বন্ধ থাকা, সরকারি চুক্তি স্থগিত হওয়া এবং সার্বিক অনিশ্চয়তার কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যতদিন এই অচলাবস্থা চলবে, মার্কিন অর্থনীতি এবং সাধারণ মানুষের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব ততই বাড়বে। যা বিশ্ব অর্থনীতিতেও কিছুটা হলেও উদ্বেগের ছায়া ফেলছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫