যুদ্ধবিরতি ভাঙনের শঙ্কা, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত ৯০
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:০৫
ইসরায়েলের বিমান হামলায় মঙ্গলবার রাতে গাজা উপত্যকায় অন্তত ৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হামাস নিয়ন্ত্রিত সিভিল ডিফেন্স সংস্থা ও স্থানীয় হাসপাতালগুলোর বরাতে এমনটাই জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৩০ জন শিশু। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও দুই শতাধিক মানুষ।
ইসরায়েল জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি হামাস লঙ্ঘন করায় এই হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী দাবি করেছেন, দক্ষিণ গাজায় হামাসের হামলায় এক ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন এবং মৃত জিম্মিদের মরদেহ ফেরত দেওয়ার শর্তও হামাস ভঙ্গ করেছে।
হামাস জানায়, রাফায় ইসরায়েলি সেনাদের ওপর হামলার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই এবং তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি ‘অঙ্গীকারবদ্ধ’। তবে ইসরায়েলি হামলার ঘটনায় যুদ্ধবিরতি আদৌ টিকে থাকবে কিনা- তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “কিছুই যুদ্ধবিরতিকে বিপন্ন করতে পারবে না,।” কিন্তু যোগ করেন, “ইসরায়েলি সেনাদের ওপর হামলা হলে তারা পাল্টা আঘাত হানবে- এটাই স্বাভাবিক।”
গাজায় আগুন-ধোঁয়ার স্তম্ভ
ইসরায়েলি বিমান হামলা গাজা সিটি, বেইত লাহিয়া, বুরেইজ, নুসাইরাত এবং দক্ষিণের খান ইউনুস এলাকায় ঘরবাড়ি, স্কুল ও আবাসিক ভবনে আঘাত হানে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতভর গাজা সিটির আকাশে আগুন ও ধোঁয়ার বিশাল স্তম্ভ দেখা যায়, চারদিকে বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা।
সিভিল ডিফেন্স জানায়, দক্ষিণের সাবরা পাড়ায় আল-বান্না পরিবারের বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে তিন নারী ও এক পুরুষের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় বুরেইজ শরণার্থী শিবিরের
ব্লক–৭ এলাকায় আবু শরার পরিবারের পাঁচ সদস্য নিহত হয়েছেন।
খান ইউনুসে একটি সড়কে গাড়িতে বোমা হামলায় আরও পাঁচজন প্রাণ হারান।
সংস্থাটির মুখপাত্র বলেন, “অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতে উদ্ধার অভিযান চলছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও বহু মানুষ আটকে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।”
‘প্রচণ্ড জবাব’-এর নির্দেশ নেতানিয়াহুর
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সামরিক বাহিনীকে ‘প্রচণ্ড জবাব’ দেওয়ার নির্দেশ দেন।
পরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেন, “হামাস ইসরায়েলি সেনাদের ওপর হামলা চালিয়ে এবং মৃত জিম্মিদের ফেরত দেওয়ার চুক্তি লঙ্ঘন করে রেড লাইন অতিক্রম করেছে। এই কাজের জন্য তাদের বহু গুণ বেশি মূল্য দিতে হবে।”
বুধবার সকালে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, নিহত সেনার নাম মাস্টার সার্জেন্ট ইয়োনা এফ্রাইম ফেল্ডবাউম। তিনি দক্ষিণ রাফায় এক সামরিক প্রকৌশল দলসহ একটি ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ ধ্বংসের কাজে ছিলেন।
হামলাকারীরা ওই এলাকায় থাকা সাঁজোয়া যান লক্ষ্য করে গুলি ও অ্যান্টি-ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।
হামাসের অস্বীকার ও প্রতিক্রিয়া
হামাস এক বিবৃতিতে জানায়, “রাফায় গুলিবর্ষণের ঘটনায় আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমরা যুদ্ধবিরতির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। তবে ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর বোমাবর্ষণ যুদ্ধবিরতির চুক্তির নগ্ন লঙ্ঘন।”
হামাসের সামরিক শাখা আল কাসসাম ব্রিগেডস জানায়, তারা মঙ্গলবার যেসব মৃতদেহ উদ্ধার করেছিল, তার একটি ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের কারণে স্থগিত করেছে।
ইসরায়েলি হামলার বিষয়ে এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, “আমার জানা মতে, তারা (হামাস) একজন ইসরায়েলি সেনাকে হত্যা করেছে, তাই ইসরায়েল প্রতিশোধ নিয়েছে এবং সেটাই করা উচিত।”
তিনি আরও বলেন, “কিছুই এই যুদ্ধবিরতি নষ্ট করবে না। হামাস মধ্যপ্রাচ্যের খুবই ক্ষুদ্র একটি অংশ, তাদের আচরণ করতে শিখতে হবে।”
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, “যুদ্ধবিরতি এখনো কার্যকর রয়েছে, যদিও দুই পক্ষের মধ্যে কিছু ছোটখাটো সংঘর্ষ হচ্ছে।”
