Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলের বিচার চাইল গাজা ট্রাইব্যুনাল

Icon

স্বর্ণা চৌধুরী

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:৪০

ইসরায়েলের বিচার চাইল গাজা ট্রাইব্যুনাল

‘গাজা ট্রাইব্যুনাল’ একটি বেসরকারি উদ্যোগ। নভেম্বর মাসে লন্ডনে প্রতিষ্ঠিত এই ট্রাইব্যুনাল তুরস্কের ইস্তাম্বুলে চার দিনের প্রকাশ্য শুনানি শেষে ২৫ অক্টোবর তাদের ‘নৈতিক রায়’ ঘোষণা করে। চূড়ান্ত রায়ে বলা হয়, ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে। ট্রাইব্যুনাল দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছে, ‘ইসরায়েলি অপরাধী ও তাদের পশ্চিমা সহায়তাকারীদের’ দ্বারা সংঘটিত অপরাধের জন্য বিচার এড়াতে দেওয়া উচিত হবে না।

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবাধিকারের ওপর জাতিসংঘ সাবেক বিশেষ র‌্যাপোর্টার রিচার্ড ফক এই ট্রাইব্যুনালের সভাপতিত্ব করেন। এই উদ্যোগটি রাসেল ট্রাইব্যুনালের ঐতিহ্য বহন করে, যা ১৯৬৭ সালে ভিয়েতনামে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধের প্রমাণাদি পরীক্ষা করেছিল। বছরব্যাপী চলা এই প্রক্রিয়ায় গাজা যুদ্ধের তথ্য সংগ্রহ, সাক্ষী ও বেঁচে যাওয়াদের জবানবন্দি শোনা এবং প্রমাণাদি সংরক্ষণ করা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের জুরি রায়ে গাজায় গণহত্যা এবং অন্যান্য জঘন্য অপরাধের নিন্দা জানিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে বেসামরিক বাসস্থান ধ্বংস, সাধারণ মানুষকে ইচ্ছাকৃতভাবে অনাহারে রাখা, নির্যাতন এবং সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করা। ট্রাইব্যুনালের মতে, ইসরায়েলের গাজা যুদ্ধ প্রমাণ করে যে, বিশ্বব্যাপী শাসনব্যবস্থা তার দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এমন মন্তব্যের পর ট্রাইব্যুনাল সুপারিশ করেছে, সব ‘অপরাধী, সমর্থক ও সহায়তাকারীকে’ অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে এবং জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ইসরায়েলকে বরখাস্ত করা উচিত।

জুরি আরো পর্যবেক্ষণ জানিয়েছেন, পশ্চিমা সরকার, ‘বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র’, কূটনৈতিক সমর্থন, সামরিক সরঞ্জাম (অস্ত্র ও অস্ত্রের যন্ত্রাংশ), গোয়েন্দা তথ্য, সামরিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে ‘নিবিড়ভাবে যুক্ত’। বিচারের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি, ট্রাইব্যুনাল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর দেওয়া দুটি যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনার সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, এগুলো ‘আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারকে উপেক্ষা করে’ এবং একই সঙ্গে ‘গণহত্যাকারীদের নিয়ন্ত্রণ করতে কোনো পদক্ষেপ নেয় না’।

ট্রাইব্যুনালের সদস্যরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনিদেরই গাজার পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দিতে হবে এবং ইসরায়েল ও তার সহায়তাকারীদের পুরো ক্ষতিপূরণের জন্য দায়ী থাকতে হবে।’ জুরি স্পষ্ট করেছেন, এটি কোনো আনুষ্ঠানিক আদালত না হওয়ায়, ট্রাইব্যুনাল ‘কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা রাষ্ট্রের দোষ বা দায় নির্ধারণের দাবি করে না।’ বরং এটিকে গাজা যুদ্ধের প্রতি নাগরিক সমাজের একটি প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা উচিত। ট্রাইব্যুনালের সদস্যরা ব্যাখ্যা করেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, গণহত্যাকে চিহ্নিত ও নথিভুক্ত করা আবশ্যক এবং এর দায়মুক্তি বিশ্বজুড়ে ক্রমাগত সহিংসতাকে উসকে দেয়। গাজায় গণহত্যা সমগ্র মানবজাতির উদ্বেগের বিষয়। যখন রাষ্ট্রগুলো নীরব থাকে, তখন নাগরিক সমাজ তা পারে এবং অবশ্যই মুখ খুলবে।’

উল্লেখ্য, ইসরায়েল বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) দক্ষিণ আফ্রিকার আনা গণহত্যার অভিযোগের সম্মুখীন। যদিও চূড়ান্ত রায় আসতে কয়েক বছর লাগতে পারে, তবে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আইসিজে একটি অন্তর্বর্তী রায়ে জানায়, ইসরায়েল কর্তৃক ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘ গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘন করার আশঙ্কা রয়েছে। ইসরায়েল অবশ্য গাজায় গণহত্যার অভিযোগ বারবার অস্বীকার করে আসছে।

এদিকে ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিনিময়ে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ চুক্তি প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানিয়েছেন। ওয়াশিংটন চায়, সৌদি তার উপসাগরীয় মিত্রদের মতো ইসরায়েলের সঙ্গে উন্মুক্ত সম্পর্ক স্থাপন করুক। তবে ২৩ অক্টোবর প্রভাবশালী ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী এবং কট্টর ডানপন্থি নেতা স্মোট্রিচ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণাকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। এক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘যদি সৌদি আরব আমাদের বলে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিনিময়ে সম্পর্ক স্বাভাবিক করব, তাহলে ধন্যবাদ, আমার এমন বন্ধুর দরকার নেই। আপনারা সৌদি মরুভূমিতে আপনাদের উট চালাতে থাকুন। আমরা আমাদের অর্থনীতি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে আমাদের মহান কাজের মাধ্যমে উন্নত করা চালিয়ে যাব।’

স্মোট্রিচের মন্তব্যের মধ্যেই ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেট অধিকৃত পশ্চিম তীরকে সংযুক্ত করার একটি বিল পাস করেছে। বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার আগে আরো তিনটি ভোটের প্রয়োজন, পক্ষে ভোট দিয়েছেন ২৫ জন এবং বিপক্ষে ২৪ জন এমপি। এই বিলে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েল রাষ্ট্র জুডিয়া ও সামারিয়ার বসতি স্থাপন এলাকায় তার আইন ও সার্বভৌমত্ব প্রয়োগ করবে, যাতে এই এলাকাগুলোকে সার্বভৌম ইসরায়েল রাষ্ট্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায়।’ ‘জুডিয়া ও সামারিয়া’ পশ্চিম তীরের জন্য ইসরায়েলি নাম।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি এই বিল পাসের সমালোচনা করে বলেছে, এটি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স দেশটি সফর করার সময় সরকারকে বিব্রত করার একটি প্রচেষ্টা। তারা বিলটিকে ‘অর্থহীন’ বা ‘ট্রোলিং’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে, যার লক্ষ্য ‘গাজায় প্রচারাভিযানে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের মহান অর্জনগুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করা।’

লিকুদ পার্টির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সত্যিকারের সার্বভৌমত্ব কোনো লোকদেখানো আইনের মাধ্যমে অর্জিত হবে না...বরং মাঠে সঠিকভাবে কাজ করা এবং আমাদের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতির জন্য উপযুক্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি করার মাধ্যমে অর্জিত হবে।’

স্মোট্রিচ পশ্চিম তীরের অঘোষিত ‘গভর্নর’, গত মাসে ভূখণ্ডের বিশাল অংশ সংযুক্ত করার একটি বিতর্কিত পরিকল্পনা উন্মোচন করেছিলেন। তার প্রস্তাব অনুসারে, শুধু ছয়টি বিচ্ছিন্ন ফিলিস্তিনি ছিটমহল ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকবে। অন্য সব এলাকা, যার মধ্যে অসংখ্য শহর ও গ্রাম রয়েছে, আনুষ্ঠানিকভাবে সংযুক্ত করা হবে। স্মোট্রিচ এই পরিকল্পনার পেছনে নীতিগত অবস্থান হিসেবে উল্লেখ করেছেন, ‘সর্বাধিক ভূমি দখল করে সর্বনিম্ন [ফিলিস্তিনি] জনসংখ্যা রাখা।’ তিনি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে (পিএ) ধীরে ধীরে বিলুপ্ত করে তার পরিবর্তে ‘আঞ্চলিক বেসামরিক ব্যবস্থাপনা বিকল্প’ প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দিয়েছেন এবং পিএ প্রতিরোধ করলে তাকে ‘ধ্বংস’ করা হবে বলেও সতর্ক করেছেন।


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫